wb madhyamik 2022 history suggestion | মাধ্যমিক 2022 প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের ইতিহাস সাজেশন

0


wb madhyamik 2022 history suggestion | মাধ্যমিক 2022 প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের ইতিহাস সাজেশন 

wb madhyamik 2022 history suggestion | মাধ্যমিক 2022 প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের ইতিহাস সাজেশন


আজকে আমরা 2022 সালের মাধ্যমিক ( wb Madhyamik 2022 ) পরীক্ষার্থীদের জন্য মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন এবং সেইসঙ্গে তার উত্তরও তোমাদের সাথে শেয়ার করব। 


আজকের বিষয় :


1. কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন?


2. 1855 সালে সাঁওতালরা কেন বিদ্রোহ করেছিল?


3. কোল বিদ্রোহের কারণ ও বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি ছিল?


4. সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ, সন্নাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ অথবা সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ টীকা লেখ 


5. নীল বিদ্রোহের কারণ /বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো!


6. মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ গুলি আলোচনা করো | মুন্ডা বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো | মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল? 


7- তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ বর্ণনা দাও | বারাসাত বিদ্রোহের কারণ গুলি আলোচনা করো | বারাসাত বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো | 



1 - সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো। 


উওর : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে বাংলায় সর্বপ্রথম গঠিত কৃষক বিদ্রোহ হলো, 1763 খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ। 1763 খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত ন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ছিল মূলত হিন্দু সন্নাসী এবং মুসলমান ফকিরদের নেতৃত্বে পরিচালিত এক দীর্ঘ বিদ্রোহ।

1763 এর সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের মধ্যে আমরা বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করতে পারি।  যেমন - 


• প্রথম কৃষক বিদ্রোহ : সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহই ছিল ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশদের শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রথম কৃষক বিদ্রোহ। ভবানী পাঠক,দেবী চৌধুরানী,চিরাগ আলী, মজনু শাহ প্রমুখের নেতৃত্বে প্রায় 97 বছর ধরে এই বিদ্রোহ চলেছিল।


• বিদ্রোহীদের পেশা : সাধারনত সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের কথা শুনে মনে হয় যে - এই বিদ্রোহের সমস্ত বিদ্রোরাই হিন্দু সন্নাসী এবং মুসলিম ফকির। কিন্তু তেমনটা নয়। সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বেশিরভাগ বিদ্রোহীরা ছিলেন পেশায় মূলত কৃষিজীবী, অতি সাধারন ব্যবসায়ী, বা ছোটখাটো পেশার সঙ্গে যুক্ত সাধারণ মানুষ। 


• বিদ্রোহীদের প্রধান লক্ষ্য : সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিল- মূলত ইংরেজ কোম্পানি কুটির  জমিদারদের বাস ভবন থেকে বিভিন্ন রকম সম্পত্তি চুরি, রাজস্ব দপ্তর প্রভৃতি আক্রমণ করা এবং সেখান থেকে তাদের সর্বস্ব লুট করা। 


• বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন ;  সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহে মূলত হিন্দু সন্নাসী এবং মুসলিম ফকিররা ধর্ম নির্বিশেষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। 

• বিদ্রোহীদের সমাপ্তি : প্রথমদিকে ইংরেজ বাহিনী সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহীদের পরাস্ত সক্ষম না হলেও,, পরবর্তীকালে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহীরা আস্তে আস্তে ইংরেজ বাহিনীর কাছে পরাজিত হতে শুরু করে। এবং এভাবে তাদের বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়।।


2- সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের কারণগুলি উল্লেখ করো।

উওর : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে বাংলায় সর্বপ্রথম গঠিত কৃষক বিদ্রোহ হলো, 1763 খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ। 1763 খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত ন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ছিল মূলত হিন্দু সন্নাসী এবং মুসলমান ফকিরদের নেতৃত্বে পরিচালিত এক দীর্ঘ বিদ্রোহ।
• বিভিন্ন কারণগুলি বিশ্লেষণ করলে আমরা এই দীর্ঘ বিদ্রোহের কারণগুলি জানতে পারি।  যেমন -

• রাজস্ব বৃদ্ধি : সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের বিদ্রোহীরা সন্নাসী এবং ফকির হলেও, তাদের মধ্যে কিছু বিদ্রোহীরা পেশায় ছিলেন কৃষক। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কৃষকদের উপর থেকে উচ্চহারে রাজস্ব আদায় তাদের ক্ষুব্ধ করে তোলে।
• ধর্মকর : সাধারণত নিজের ধর্ম পালন বা কোনো তীর্থে ক্ষেত্রে বা ধর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য কোনো কর দিতে হয় না। কিন্তু সেই সময় ব্রিটিশ সরকার হিন্দু সন্ন্যাসীদের কাছ থেকে এবং মুসলিমদ ফকির কাছ থেকে তীর্থকর আদায় করতে শুরু করে।
• বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারি : ইংরেজ কোম্পানি মুসলিম ফকিরদের ওপর আরও কড়া ভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ জারি করার উদ্দেশ্য, মুসলিম ফকিরদের বিভিন্ন দরগায় যাওয়ার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
• মন্বন্তরের চাপ  : ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় এমনিতেই সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ ছিল। বহু মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছিল।  কিন্তু এর মধ্যেও ব্রিটিশ সরকার সাধারণ মানুষ বা কৃষকদের উপর বিভিন্ন রকম কর বা রাজস্বের চাপ সৃষ্টি করে।।যার ফলে এই সমস্ত কারণে সন্ন্যাসী ও ফকিররা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।
উপসংহার : উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরো নানা কারণ ছিল যার জন্য সন্ন্যাসী ও ফকিরদের মিলিত নেতৃত্বে দীর্ঘ সময় ধরে এই বিদ্রোহ চলেছিল।

3- সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ গুলি আলোচনা করো।
অথবা, 1855 খ্রিষ্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ করেছিল কেন?

অথবা, 1855 খ্রিষ্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ করেছিল কেন?

উওর : উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এবং সিধু এবং কানহু নামের দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে 1855 খ্রিষ্টাব্দের 30 শে জুন ভাগনাডিহির মাঠে সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা হয়।
1855 খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহের পেছনে অনেকগুলি কারণ ছিল।
যেমন-

• খাজনা বৃদ্ধি: ব্রিটিশ সরকারের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করার পর জঙ্গল থেকে উদ্ধারকৃত সাঁওতালদের জমির উপরে ব্রিটিশ সরকার নতুন ভাবে খাজনা আদায় করতে শুরু করে।  যার ফলে বিনা খাজনা দেওয়ার অভ্যস্থ সাঁওতালদের নতুনভাবে খাজনা দেওয়ার সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।

• বহিরাগত ব্যবসায়ী এবং মহাজন কারচুপি : নিরক্ষর এবং সহজ সরল সাঁওতাল পরগনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খারাপ এবং লোভী বহিরাগত মহাজন' এবং ব্যবসায়ীদের দেখা যেত। যারা বিভিন্নভাবে সাঁওতালদের ঠকানোর  চেষ্টা কর‍তো। বহিরাগত সুদখোররা নিরক্ষর সাঁওতালদের সু গ্রহণকালে  এবং ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্র কেনা বেচার সময় ভূল বাটখারা ব্যবহার করে সেক্ষেত্রেও সাঁওতালদের ঠকাতো।

• অরণ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত :  বেশিরভাগ আদিবাসী সম্প্রদায় বা উপজাতি সম্প্রদায় মনে করে যে অরণ্যের উপর অধিকার তাদের জন্মগত। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের নতুন অরণ্যে আইন প্রণয়ন হওয়ার পর সাঁওতালরা তাদের জন্মগত অধিকার হারিয়ে ফেলে। যার ফলে সাঁওতালরা ব্রিটিশ সরকারের উপর আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়ে।

• বেগার শ্রম : এছাড়াও বিভিন্ন মহাজন এবং ব্যবসায়ীরা সাওতালদের বেগারশ্রম দিতে বাধ্য করতো।

• ব্রিটিশ সরকারের অসহযোগিতা : সাঁওতালরা তাদের উপর হওয়া বিভিন্ন রকম অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের সাহায্য চাইতো, তখন সাঁওতালরা তার কোনো সঠিক বিচার পেত না ।  যার ফলে এই সমস্ত কারণকে কেন্দ্র করেই সাঁওতালদের মনে বিদ্রোহের দানা বাঁধতে শুরু করে।

উপসংহার : উপরিক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরও একাধিক কারণে সাঁওতালরা ধীরে ধীরে বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এবং 1855 খ্রিষ্টাব্দে তারা সাঁওতাল বিদ্রোহ শুরু করে।

4 - কোল বিদ্রোহের কারণ গুলি আলোচনা করো

অথবা, কোন বিদ্রোহের কারণ এবং বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো

কোল বিদ্রোহের কারণ গুলি

উওর : 1831 খ্রিস্টাব্দে কোলরা ব্রিটিশ সরকার এবং জমিদারদের শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে এক তীব্র বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল যা কোল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণগুলি আলোচনা করা হলো।

• রাজস্ব বৃদ্ধি:  ব্রিটিশ কোম্পানি ছোটনাগপুর অঞ্চল দখল করার পর সেখানে তারা নিজেদের নতুন ভূমি রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করে।।যার ফলে তার প্রভাব পড়ে সেখানে বসবাসকারী কোলদের  ওপর। কোলরা সম্পূর্ণভাবে জঙ্গল থেকে উদ্ধারকৃত কৃষিজমি বনজ এবং সম্পদের উপর নির্ভরশীল ছিল। সেই জমিতে ব্রিটিশ সরকার অধিক পরিমাণে রাজস্ব বৃদ্ধি করলে, কোলরা ব্রিটিশ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে যায়।

• অরণ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত : ব্রিটিশ সরকার তাদের অরণ্য আইন প্রণয়ন করার পর, কোলরা অরণ্যেএψ উপর থেকে তাদের জন্মগত অধিকার হারায়। যার ফলে তাদের অরণ্যের ওপর নির্ভর করে থাকা কোলদের জীবিকা নির্বাহ করতে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়।

• বহিরাগত মহাজন' ও ব্যবসায়ীদের শোষণ : ব্রিটিশ সরকারের নতুন নিয়ম অনুসারে নগর অর্থে তাদের খাজনা প্রদান করতে হতো। নতুন নিয়ম চালু করার পর কোলরা বিভিন্ন মহাজন ও ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের ফসল বিক্রি করে নগদ অর্থ নিতে গেলে, সেখানেও বিভিন্ন মহাজন ও ব্যবসায়ীরা তাদের সাথে প্রতারণা করতো।
•  সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন : ইংরেজ সরকার কোলদের নিজস্ব সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন করে সেখানে তাদের জটিল আইন প্রণয়ন করে। যার ফলে এখানেও কোলদের নানারকম সমস্যা দেখা যায়।

উপসংহার : উপরিক্ত কারণ ছাড়াও আরো অন্যান্য বিভিন্ন কারণে কোলরা সংঘবদ্ধভাবে 1831 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে।

কোল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য : 

1831 খ্রিস্টাব্দে কোলদের দ্বারা পরিচালিত, কোল বিদ্রোহে আমরা বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করতে পারি।  যেমন - 
• কোলরা ছিল আদিবাসী উপজাতি সম্প্রদায় ভুক্ত। যারা ব্রিটিশ সরকারের শাসন এবং শোষণের বিরুদ্ধে নির্ভীক ভাবে বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। 
• কোলরা আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় তাদের কাছে কোনো আধুনিক অস্ত্র শস্ত্র ছিল না। কিন্তু তারপরও তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন।
• কোলদের বিদ্রোহে ক্ষেত্রে তারা কোনোভাবেই কোনো বহিঃশক্তির সাহায্য পাননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। 
• কোল বিদ্রোহ সফল না হলেও, কোল বিদ্রোহের বেশ কিছু ফলাফল লক্ষ্য করা যায়। 
• যেমন -
•  কোল বিদ্রোহের ফলে কোলদের অঞ্চলে ব্রিটিশ সরকার কিছু পরিবর্তন করে। 
• দ্বিতীয়তঃ ব্রিটিশ সরকার কোলদের জন্য পৃথক দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি নামে পৃথক ভূখণ্ড গঠন করে।
• তৃতীয়তঃ যেসব জমি কোলদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল সেই জমি কোলদের পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

5 - ব্রিটিশ সরকার কী উদ্দেশ্যে অরণ্য আইন প্রণয়ন করে?

উওর : ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় বনজ সম্পদ নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবহার করার জন্য পরপর দুটি অরণ্য প্রণয়ন করে। প্রথম অরণ্য আইন 1865 খ্রিস্টাব্দে এবং দ্বিতীয় অরণ্য আইন 1878 খ্রিস্টাব্দে প্রণয়ন করা হয়।
ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার দ্বারা অরণ্য আইন প্রণয়ন করার উদ্দেশ্য ছিল একাধিক।  যেমন -

• ব্রিটিশ নৌবাহিনী এবং রেলপথের বিস্তারের ক্ষেত্রে ভারতীয় বনজ সম্পদের ব্যবহার : ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর সম্প্রসারণ এবং ভারতের রেলপথ বিস্তারের লক্ষ্যে কাঠের স্লিপার তৈরীর জন্য ভারতের বনজ সম্পদের উপর ব্রিটিশ সরকারের নজর পড়ে।। এবং ভারতীয় বনজ সম্পদ ব্রিটিশ সরকারের নৌবাহিনী এবং রেলপথ বিস্তারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করার জন্য তারা এই অরন্য আইন প্রণয়ন করে।

• অরণ্য সংরক্ষণ : ব্রিটিশ সরকার অরণ্য আইনের মাধ্যমে ভারতীয় বনভূমিকে তিনটি অংশে ভাগ করে। যারা সুরক্ষিত অরণ্য, সংরক্ষিত অরণ্য এবং অশ্রেণীভুক্ত অরণ্য।

• স্থায়ী কৃষিকাজ থেকে রাজস্ব আদায় : ভারতের সুবৃস্তিত বনাঞ্চলের জমিকে পরিষ্কার করে কৃষি যোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্যে যেমন ছিল, তেমনি ছিল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্থায়ী ঝুমচাষের পদ্ধতি পাল্টে তাদের স্থায়ী কৃষিকাজে পরিবর্তন করা এবং তাদের থেকে উচ্চহারে রাজস্ব আদায় করা।
• বনজ সম্পদ থেকে মুনাফা বৃদ্ধি : এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রকার বনজ সম্পদ থেকে মুনাফা আদায় করাও ছিল ব্রিটিশ অরণ্য আইনের একটি প্রধান উদ্দেশ্য।
• উপসংহার :  উপরিক্ত বিভিন্ন খারাপ উদ্দেশ্য গুলি থাকলেও ব্রিটিশ সরকার ভারতের বনভূমিকে সংরক্ষিত, সুরক্ষিত এবং  অশ্রেণীভুক্ত - এই তিনটি অংশে বিভক্ত করে ভারতীয় বন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে  স্বার্থ বজায় রাখতে গিয়ে অরণ্য আইন প্রয়োগের মাধ্যমে তারা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধীকার, জীবন ও জীবিকার উপর তারা বিভিন্নভাবে বিপর্যয় নামিয়ে এনেছিল যার ফলে শুরু হয়েছিল বিভিন্ন উপজাতি বিদ্রোহ।

6- মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল লেখ | মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব | মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ কি | মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল

ভুমিকা : 1899-1900 খ্রিস্টাব্দের মুন্ডা বিদ্রোহ ছিল বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে উপজাতি মানুষদের ওপর হওয়া, বিভিন্ন অত্যাচারের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ এবং অত্যাচারের থেকে মুক্তি পাওয়ার বিদ্রোহ।।।

মুন্ডা বিদ্রোহের কয়েকটি প্রধান কারণ :

মুন্ডাদের জমির অধিকার কেড়ে নেওয়া :

ভারতীয় অরণ্য আইন পাস হওয়ার পর ব্রিটিশ সরকারের হাতে ভারতীয় অরন্যের ক্ষমতা চলে আসার পর, মুন্ডা উপজাতিরা কষ্ট করে জঙ্গলের যে পতিত জমি উদ্ধার করেছিল,সেই পতিত জমিতে ব্রিটিশ সরকার তাদের অধিকার আরোপ করে।। এছাড়াও বিভিন্ন জমিদার ও মহাজনেরা মুন্ডা অধ্যুষিত অঞ্চলে মুন্ডাদের নিজস্ব জমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করে সেই জমিতে নিজেদের অধিকার বসাতে শুরু করে।।

খুঁৎকাঠি প্রথার অবসান :

মুন্ডা সমাজের একটি প্রচলিত প্রথা ছিল, যে মুন্ডা সমাজের যতটা জমি থাকবে তার ওপর জমির যৌথ মালিকানা থাকবে।। অর্থাৎ কোন একটি জমির ওপর অনেকের মালিকানা থাকবে।। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ভেবে দেখেছিল যে যদি মুন্ডা সমাজে এই প্রথা চালু থাকে তাহলে ব্রিটিশ সরকার মুন্ডা সমাজের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ খাজনা আদায় করতে পারবে না।। তার বদলে যদি ব্রিটিশ সরকার মুন্ডা সমাজের এই খুৎকাঠি প্রথা ভেঙে দিয়ে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা মালিকানা সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে ব্রিটিশ সরকার প্রত্যেকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ খাজনা আদায় করতে পারবে।। এজন্য ব্রিটিশ সরকার মুন্ডা সমাজের এই খুঁৎকাঠি প্রথার অবসান ঘটায়!! যার জন্য মুন্ডারা ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।।

বেগার শ্রম :

মুন্ডা বিদ্রোহে আরেকটি প্রধান কারণ হলো এই বেগারশ্রম প্রথা।। বেগারশ্রমের এর মানে হলো বিনা মজুরিতে বা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে দেওয়া।।  নিরীহ মুন্ডা সমাজের মানুষদের বিভিন্ন সরকারি কর্মচারীরা,  উচ্চবিত্ত মহাজন' জমিদাররা দিনের-পর-দিন নির্মমভাবে তাদের বিভিন্ন কাজ করিয়ে নিত।।। আর এরকম বেকার কাজ করার বদলে,  মুন্ডাদের তো কোনো টাকা-পয়সা দেয়া হতোই না! তার বদলে তাদের ভাগ্য থাকতো মারধর ও চাবুকের আঘাত।।

মুন্ডা সমাজে ব্রিটিশদের আইন :

মুন্ডারাও অন্যান্য উপজাতিদের মতো চাইতো না যে কেউ তাদের নিজস্ব সমাজে  বহিরাগত নতুন নিয়ম-কানুন চালু করুক।। কিন্তু ব্রিটিশ শাসন কায়েম হওয়ার পর থেকেই মুন্ডা সমাজেও ব্রিটিশরা তাদের নিজস্ব নিয়মকানুন কায়েম করতে শুরু করেছিল।। যার জন্য মুন্ডারা ব্রিটিশ শাষনের ক্ষুব্ধ হয়েছিল।।

খ্রিস্টান মিশনারীদের চালাকচতুরতা :

যদিও মুন্ডা বিদ্রোহের সঙ্গে খ্রিস্টান মিশনারীদের এই দিকটি আলোচিত হয়না! কিন্তু তবুও কোথাও-না-কোথাও মুন্ডাদের বিদ্রোহের পথে পা বাড়ানোর জন্য,  খ্রিস্টান মিশনারীদের জোর করে বা চালাক চতুরতার সঙ্গে মুন্ডা সমাজের নিরীহ মানুষদের ধর্মের পাঠ পড়িয়ে খ্রিস্টান ধর্ম দীক্ষিত করার দিকটিও জড়িত ছিল।।।

উপসংহার : উপরিক্ত কারণগুলি ছাড়াও আরও নানা কিছু কারণে মুন্ডা সমাজের মানুষ ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছিল।। এবং 1899 বিরসা মুন্ডা নেতৃত্বে তারা এই ভয়ঙ্কর বিদ্রোহের পথে পা বাড়িয়েছিল।।।

মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল আলোচনা করো | মুন্ডা বিদ্রোহের গুরুত্ব কী
| মুন্ডা বিদ্রোহের প্রভাব আলোচনা করো

ভুমিকা : 1899 -90 খ্রিষ্টাব্দে বীরসা মুন্ডার নেতৃত্বে পরিচালিত এই ভয়ঙ্কর রক্তাক্ত মুন্ডা বিদ্রোহ,,বা মুন্ডা উলগুলান ব্যর্থ হলেও তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।।

যেমন -

প্রথমত  - মুন্ডা বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর ব্রিটিশ সরকার 1808 খ্রিস্টাব্দে মুন্ডাদের " ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব " আইন পাস করে।

দ্বিতীয়তঃ     মুন্ডা সমাজে যে খুৎকাঠি প্রথা প্রচলিত ছিল! বা ব্রিটিশ সরকার সাময়িক কালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল, তা মুন্ডা বিদ্রোহের পর সেই মুন্ডা সমাজের প্রচলিত খুৎকাঠি প্রথা আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়!! অর্থাৎ  মুন্ডাদের খুৎকাঠি প্রথা আবার স্বীকার করে নেওয়া হয়।।।

বেগার শ্রম বন্ধ :   বিরসা মুন্ডার এই মুন্ডা বিদ্রোহের ব্যর্থতার পর ব্রিটিশ সরকার মুন্ডাদের ওপর চালানো,  বেগার শ্রমের প্রথাকে আইনিভাবে নিষিদ্ধ করে।।।

এছাড়াও মুন্ডা বিদ্রোহেত একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মুন্ডা বিদ্রোহের পর মুন্ডা এলাকায় খ্রিস্টান মিশনারীদের প্রবেশ কিছু সময়ের জন্য নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।।

মুন্ডা বিদ্রোহের লক্ষ্য কী ছিল?? | মুন্ডা বিদ্রোহের উদ্দেশ্য কী ছিল??

উওর : মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য
উপজাতি মুন্ডা সমাজ ইংরেজ শাসন, জমিদার মহাজন ও খ্রিস্টান মিশনারীদের নানান অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে।। বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে এই বিদ্রোহ পরিচালিত হওয়ার পর বীরসা মুন্ডার এই বিদ্রোহের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, মুন্ডা সমাজের জন্য এক স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠা করা।।যেখানে এইসব জমিদার ইংলিশ অনুবাদ মহাজনদের কোন অত্যাচার থাকবে না।।।

7- নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল || নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো || 1860 খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহ কারণ ও গুরুত্ব।।


ভুমিকা :  নীলকর সাহেবরা নিজস্ব মুনাফা লাভের জন্য ভারতে এসে ভারতীয় চাষীদের জোর করে নীল চাষ করাতো।। এবং নীলকর সাহেবদের মুনাফা লাভ করাতে গিয়ে, ভারতীয় গরিব চাষিদের নানা ধরনের আর্থিক সমস্যা, খাদ্যাভাব, এবং অন্যান্য দুরাবস্থার সম্মুখীন হতে হতো।। এবং এরকম আরও নানা কারণে 1859 খ্রিষ্টাব্দে চাষিরা নীল বিদ্রোহের পথে পা বাড়িয়েছিল।।

নীলচাষিদের জোড় করে নীলচাষ করানো :

যেহেতু সেসময় চাষিরা নিরক্ষর ছিল!  সেজন্য শিক্ষিত নীলকর সাহেবরা খুব চালাকির সঙ্গে তাদের খুব কম পরিমাণ দাদন বা অগ্রিম অর্থ বিভিন্ন চুক্তি পত্রে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিত।। এবং এরকম বিভিন্ন চুক্তি পত্রে জড়িয়ে পরায়, চাষিরা নীল চাষ  করতে বাধ্য হত।।

চাষীদের আর্থিক দুরবস্থা :

নীলকর সাহেবরা খুব চালাকির সঙ্গে নীলচাষীদের খুব কম টাকা অগ্রিম অর্থ দিয়ে নীলচাষ করতে বাধ্য করতো।।। যার জন্য নীলচাষীদের পরে নিজের খরচায় নীল চাষ করতে হত, এবং খুব অল্প দামে সেই উৎপাদিত নীল - নীলকর সাহেবদের বিক্রি করতে হতো।। এরকম নিজের খরচায় চাষ করা,  এবং খুব লোকসানে সেই ফসল বিক্রি করায় চাষিদের ঘরে খুব আর্থিক দুরাবস্থার সৃষ্টি হতো।

নীলচাষীদের ঘরে খাদ্যশস্যের অভাব :
নীলকর সাহেবরা চাষীদের জোর করে তাদের নিজস্ব জমিতে নীল চাষ করতে বাধ্য করায়, চাষীরা তাদের জমিতে অন্য কোনো ফসলের চাষ করতে পারত না।। যার ফলে চাহিদা ঘরে খাদ্যশস্যর অভাব দেখা যেত।।

দাদন প্রথা :

দাদন প্রথা হলো এমন একটি পদ্ধতি,  যার মাধ্যমে কোন নীলকর সাহেব কোনো চাষিকে তার হয়ে নীল চাষ করার জন্য কিছু পরিমান টাকা অগ্রিম টাকা দিত।। এবং সেই নীলকর সাহেবের দেওয়া টাকা দিয়েই সেই চাষিকে সম্পূর্ণ নীল চাষ করতে হতো।। কিন্তু নীলকর সাহেবরা যখন কোনো চাষিকে দাদন দিত, তখন তার পরিমাণ এতটাই কম হতো যে সেই দাদন নিয়ে চাষ করার পর, সেই চাষির খরচের অর্ধেক টাকাও হতো না।। যার জন্য চাষীকে বাধ্য হয়েই তার নিজের টাকা চাষে দিতে হতো।। আর এভাবেই চাষীকে আর্থিক দিক দিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতো।।

সরকারের পঞ্চম আইন :

ভারতের ভাইসরয় লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর শাসনকালে 1830 খ্রিষ্টাব্দের পঞ্চম আইনে বলা হয় যে যদি কোনো নীলচাষী কোনো নীলকর সাহেবের কাছ থেকে দাদন নিয়ে চাষ করতে রাজি না হয় তাহলে সেই নীলকর সেই চাষিকে জেলে পাঠাতে পারবে।।। এবং এই আইন পাস হওয়ার পর নীলকর সাহেবের অত্যাচার নীলচাষিদের ওপর আরও বেড়ে গিয়েছিল।।।

দস্তুরি প্রথা :

নীলকর সাহেবদের নীলচাষিদের ওপর অত্যাচার করার আরও একটি ভালো উপায় ছিল দস্তুরি প্রথা।। যখন নিল চাষীরা তাদের জমিতে উৎপাদিত নীল নিয়ে নীলকর সাহেবদের কাছে বিক্রি করতে যেত, তখন নীলকর সাহেবরা তাদের দেওয়া দাদনের টাকা এবং সেই দাদনের যে সুদের পরিমাণ হতো, সেই টাকাও কেটে রেখে দিত।। এরকমও হতো যে,  যদি বাজারে নীলের দাম থাকতো 10 টাকা কেজি, তাহলে নীলকর সাহেবরা চাষিকে কেজিপ্রতি মাত্র 2 টাকা দিত।। যার জন্য চাষে কি এভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হতে হতো।।

নীলকর সাহেবদের অত্যাচার :

নীলকর সাহেবরা দাদন প্রথা এবং অন্যান্য চুক্তি পত্রের মাধ্যমে নীলচাষীদের তো ঠকাতোই.. তার সাথে সাথে নীলকর সাহেবরা নীল চাষীদের উপর এমনিতেও অনেক অত্যাচার করতো।।  অনেক চাষিকে তার  ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে চাবুক মারা হতো!, চাষীদের ঘরের গরু ছাগল ছড়িয়ে নেওয়া হতো!, এছাড়াও আরও নানা ধরনের অত্যাচারের জন্যই নীলচাষীরা ধীরে ধীরে বিদ্রোহের পথে পা বাড়াতে শুরু করেছিল।।
পক্ষপাতদুষ্ট বিচার ব্যবস্থা ::-
নীলকর সাহেবদের করা এইসব নানান অত্যাচারের কথা  যখন চাষিরা থানায় গিয়ে বলতেন তখন পুলিশ চাষিদের  কোনো কথার গুরুত্ব দিত না। তাদের অভিযোগ অভিযোগ হয়েই থেকে যেত। কখনো কোনো  অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনো রকম পদক্ষেপ নেওয়া হতোনা। কারণ নীলকর সাহেবরা ছিলেন স্বজাতি শ্বেতাঙ্গ মানুষ। তাই এদেশের মানুষের অভিযোগ পুলিশের কাছে বা সরকারের কাছে কিছু না হওয়ার সমান।

উপসংহার : উপরোক্ত কারণগুলোর জন্যই নীল চাষিরা এরকম অকথ্য অত্যাচার এবং এই নায়কীয় জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই তারা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ভাবে 1859 খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতার নেতৃত্বে, বিদ্রোহের পথে পা বাড়িয়েছিল।। এবং তাদের দৃঢ় সংকল্পের জন্যই তারা এক সফল বিদ্রোহের রুপ দেখতে পেয়েছিল!! এবং তার সাথে সাথে এই নায়কীয় জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছিল।।


8- 1860 খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহের ফলাফল আলোচনা করো| নীল বিদ্রোহের ফলাফল বা গুরুত্ব।

1, নীল কমিশন গঠন ::-
নীল বিদ্রোহের ব্যাপকতায় সরকার নীলচাষিদের অভিযোগের সত্যতা ও নীল বিদ্রোহের কারন অনুসন্ধানের জন্য  1860 খ্রিষ্টাব্দের 31 মার্চ পাচজন সদস্যকে নিয়ে  নীল কমিশন গঠন করে। এই নীল কমিশন  গঠনের কিছুদিন পর নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে , নীল চাষিদের করা অভিযোগ গুলি সত্য বলে মেনে নেয়।
-
-2, নীলচাষ বন্ধ::-  1860 খ্রিষ্টাব্দের নীল কমিশন চাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কথা জানার পর এই ঘোষণা করে যে নীল চাষ এখন থেকে সম্পুর্ন  চাষিদের ইচ্ছা অনুসারে হবে। যদি চাষি নীলচাষে ইচ্ছুক হয় তবেই সে নীলচাষ করবে। এবং এই ঘোষণার পর নীল চাষ এদেশে ধীরে ধীরে সম্পুর্ন ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

-3, সফল কৃষক আন্দোলন ::-
ভারতের অন্যান্য কৃষক আন্দোলন গুলির থেকে নীল বিদ্রোহ ছিল আলাদা। এই বিদ্রোহে বিভিন্ন জায়গার, যেমন - খুলনা, নদীয়া, ফরিদপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, রাজশাহী, যশোহর প্রভৃতি স্থানের হিন্দু, মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের প্রায় 60 লক্ষ্য ক‍ৃষকরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করেছিল। যার ফলে এই আন্দোলন একটি সফল কৃষক আন্দোলনে পরিনত হয়েছিল।

4,ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ::-

নীল বিদ্রোহে নীল চাষিদের পাশে বেশ কিছু জমিদার, আইনজীবী এবং তার সাথে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ পএ কৃষকদের  পাশে  দাড়িয়েছিল।

6, নীলদর্পন নাটক ::-
বিখ্যাত নাট্যকার দীনবন্ধু মিএ নীল বিদ্রোহের ওপর, বিশেষ করে নীলচাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের করা অত্যাচারের কথা নিয়ে 1860 খ্রিষ্টাব্দে তার নীলদর্পন নাটকটি রচনা করেন।
এই নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করেন মাইকেল মধুসুদন দও। কিন্তু শাস্তি এড়াতে তা জেমস রেভালেন্ড লং সাহেবের নামে প্রকাশ করেন।
এবং এই নাটকটি তখন সমাজে আলোরনের সৃষ্টি করেছিল।


9- তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহের কারণ ||  তিতুমীরে কী কারণে বারাসাত বিদ্রোহ করেছিল | তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহের কারণ কী ছিল?

1, গরিব কৃষকদের ওপর মহাজন, জমিদারদের এবং ইংরেজদের শোষন এবং নানা ধরনের অত্যাচার।

2, ইসলাম ধর্মের সংস্কার :
যেহেতু তিতুমীর তার বারাসাত বিদ্রোহ ওয়াহাবি আন্দোলনের ভাবধারা নিয়ে শুরু করেছিলেন,তাই প্রথম দিকে তিনি এই একটি মুসলিম ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে শুরু করেছিলেন।। কিন্তু ইসলাম ধর্মের শুদ্ধীকরন মুলক আন্দোলন হবে শুরু হলেও পরে এটি জমিদার ও ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।।

3, জমিদার ও ইংরেজ শাষনের অবসান ঘটানো :
তিতুমীর তার এই বারাসাত বিদ্রোহ হিন্দু এবং মুসলিম কৃষকদের নিয়ে,  তাদের ওপর কড়া নীলকর সাহেব এবং জমিদারদের বিভিন্ন অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করেন।

4, নীলকরদের অত্যাচার থেকে মুক্তি লাভ করা।

যেহেতু নীলকর সাহেবরা এদেশের চাষীদের নির্মমভাবে অত্যাচার করত সেজন্য, চাষীদের উপর থেকে নীলকর সাহেবদের এরকম অত্যাচার এর অবসান ঘটানোর জন্য এই আন্দোলন শুরু হয়।।

বিদ্রোহের ঘোষণা :::

তিতুমীর ঘোষণা করেন যে কোনো চাষি আর জমিদার এবং ইংরেজদের খাজনা দেবে না।
ওয়াহাবিরা তাদের দাড়ি রাখতে পারবে।
তিতুমীর এইও ঘোষণা করেন যে এখন থেকে সবাই তাকেই খাজনা দেবে। এবং নিজেকে তিতুমীর বাদশা বলে ঘোষণা করেন।

বাশের কেল্লা নির্মান :: তিতুমীর নিজের বারাসাত বিদ্রোহ ঘোষণার পর তিনি নারকেল বেড়িয়া গ্রামে তার অনুগামীদের নিয়ে বাশের কেল্লা নির্মাণ করেন। এবং এটাই হয় তার রাজমহল।

কৃষ্ণদেব রায়ের সঙ্গে  বিরোধ ::-
তিতুমীর নিজেকে বাদশাহ বলে ঘোষণার পর তিনি জমিদারদের ক্ষমতা কমানোর জন্য চাষিদের জমির কর তাকে দিতে বলেন। এবং এই কারণে জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের সঙ্গে তার বিরোধ বাধে।

তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ চরিত্র ও প্রকৃতি ||  বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের চরিত্র ও প্রকৃতি ||

তিতুমীরের  বারাসাত বিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি

1831 খ্রিষ্টাব্দের  এর এই বারাসাত বিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি

1,  হিন্দু বিরোধী আন্দোলন ::
বহু পন্ডিতদের মতে 1831 ওর বারাসাত বা তিতুমীরের ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল একটি হিন্দু বিরোধী আন্দোলন। কেননা এখানে বার বার হিন্দু জমিদারদের লক্ষ্য করে আন্দোলন অগ্রসর হয়েছিল।

2, কৃষক বিদ্রোহ ::-
তিতুমীরের এই বারাসাত বিদ্রোহ ধর্মীয় আন্দোলনের আবরনে শুরু হলেও আস্তে আস্তে তা জমিদার ও নীলকর বিরোধী  কৃষক আন্দোলনে পরিনত হয়েছিল।

3, ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন ::-
অনেকের মতে বারাসাত বিদ্রোহ ধর্মীয় আন্দোলনের বেড়া টোপকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে পরিনত হয়েছিল। তিতুমীর নিজেকে বাহশাহ বলে ঘোষণা করেন এবং নিজেই ব্রিটিশ সরকার,জমিদার, এবং ইংরেজ নীলকর বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়।

ধর্ম নিরপেক্ষ আন্দোলন ::-

প্রথম দিকে এই আন্দোলন হিন্দু অত্যাচারি জমিদার বিরোধী হিসাবে হলেও অনেক সময় গরিব ও অত্যাচারিত হিন্দু চাষিরাও তিতুমীরের এই আন্দোলনে সামিল হয়েছিল।

বিদ্রোহের অবসান ::
জমিদার এবং ব্রিটিশ বিরোধী এই আন্দোলন খুব কম সময়েই প্রবল আকার ধারন করে। তিতুমীরের এই বারাসাত বিদ্রোহের তীব্র আকার নীতে দেখে জমিদার ও নীলকরদ সাহেবরা ব্রিটিশ সরকারের কাছে এই বিদ্রোহ দমনের আবেদন জানায়।। এর ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার 1831 খ্রিষ্টাব্দের 14 নভেম্বর উইলিয়াম বেন্টিং সেনা বাহিনী তিতুমীরের বাশের কেল্লার সামনে পাঠান। এবং এই সেনাবাহিনীর গোলার আঘাতে তিতুমীরের বাশের কেল্লা ধংস হয়। এবং তিতুমীর বাশের কেল্লার ভিতরে গোলার আঘাতে প্রান হারান। এবং বাকিদের জেল এবং ফাঁসির মাধ্যমে বিদ্রোহের অবসান ঘটানো হয়।


10- বারাসাত বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ কী || বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন ব্যর্থতার কারণ || তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ ব্যর্থতার কারণ

বারাসাত বিদ্রোহ ব্যর্থতার কারণ কী?
আধুনিক অস্ত্রের অভাব :

বারাসাত বিদ্রোহের মূল কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে আধুনিক অস্ত্রের অভাব।। তিতুমীর এবং তিতুমীরের অনুগামীদের কাছে সেই পরিমাণ আধুনিক অস্ত্র ছিল, না যা ব্রিটিশ সরকারের সৈনিকদের হাতে ছিল।। এজন্য যখন ব্রিটিশ সরকারের সেনাবাহিনী তিতুমীর বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করে সে সময় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিতুমীরের অনুগামীরা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হাতে পরাজিত হয়।।

বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার মতো সৈনিকের অভাব :

যেকোনো বিদ্রোহকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য বা বিদ্রোহের কে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন হয় যোগ্য নেতৃত্ব এবং ভালো প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সৈনিক।। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের কাছে এরকম সুযোগ সুবিধা থাকলেও তিতুমীরের এরকম কোনো সুযোগ সুবিধা ছিল না।। গ্রাম অঞ্চলের কৃষক অল্পদিনের অস্ত্রধারণের শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও ব্রিটিশ সরকারের আধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের সামনে তিতুমীরের অনুগামীরা খুব অল্পসময়ের মধ্যেই হেরে যায়।।

কোনো সাহায্য না পাওয়া :
তিতুমীর তার এই বারাসাত বিদ্রোহ

চালিয়ে যাওয়ার সময় যখন জমিদার এবং নীলকর সাহেবরা ব্রিটিশ সরকারের কাছে আধুনিক সেনাবাহিনী সাহায্য চেয়ে ছিল, তখন তিতুমীর তার সপক্ষে বিদ্রোহকে ধরে রাখার মতো বাইরে থেকে কোনো প্রকার সাহায্য পায়নি।। যার জন্য তার এই বিদ্রোহ আগে থেকেই অনেকটা দুর্বল ছিল।।

তিতুমীরের মৃত্যু : 1831 খ্রিস্টাব্দে কামানের গোলায় তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ধ্বংস হওয়ার সময়, বারাসাত বিদ্রোহের মূল স্তম্ভ তিতুমীর সেখানে মারা যান!! যার ফলে তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহের প্রধান নেতা হারিয়ে যায়।। যার ফলে এই বিদ্রোহকে পরে চালিয়ে  যাওয়ার কোনো প্রশ্নই বেঁচে থাকেনি।।।


Table Of Contents 


আজকের এই পোস্টের বিষয়- 

* দশম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড়ো প্রশ্ন উত্তর 

* মাধ্যমিক ইতিহাস সাজশন 2022
*  মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন 2020 প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ
• মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন
• মাধ্যমিকের ইতিহাসের বড় প্রশ্ন উত্তর
• দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন
• wb class 10 history suggestion 
• wb madhyamik 2022 history suggestion 
• wb madhyamik history question and answer 
• Madhyamik History Suggestion 2022
• Madhyamik History question and answer
• Madhyamik History short question and answer Bengali
• দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর তৃতীয় অধ্যায়

• দশম শ্রেণির ইতিহাস বড় প্রশ্ন উত্তর তৃতীয় অধ্যায়

• দশম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়

• মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর
• Class 10 History Chapter 2 Notes in bengali
• Class 10 History Chapter 2 important Questions and answers in Bengali 
• Class 10 History Chapter 2 questions and answers in Bengali 
• ক্লাস 10 ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top