ব্রাহ্মসমাজ | ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠা, ব্রাহ্মণ সমাজের বিভাজন এবং সমাজ সংস্কারে তাদের অবদান

0

 ব্রাহ্মসমাজ | ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠা, ব্রাহ্ম সমাজের বিভাজন এবং সমাজ সংস্কারে তাদের অবদান 

ব্রাহ্মসমাজ | ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠা, ব্রাহ্ম সমাজের বিভাজন এবং সমাজ সংস্কারে তাদের অবদান

আমরা আমাদের ব্লগে ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে অনেক কিছুই আলোচনা করেছি। কিন্তু আমরা হয়তো খুব স্পষ্টভাবে ব্রাহ্মসমাজের বিভাজনের দিকটা আলোচনা করেনি। তাই আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা ব্রাহ্ম সমাজের বিভাজন একটি খুব ভালো করে আলোচনা করবো।  এবং চেষ্টা করব যাতে তোমাদের,ব্রাহ্মসমাজ কবে,কেন এবং কিভাবে বিভাজিত হয়েছিল,সেই সম্পর্কে একটি খুবই স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়। 

ব্রাহ্মসমাজ | ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠা, ব্রাহ্ম সমাজের বিভাজন এবং সমাজ সংস্কারে তাদের অবদান

ভূমিকা : আমরা সবাই জানি যে উনিশ শতকে ভারতে হিন্দু ধর্মের,বিশেষ করে বাংলার সমাজে বিভিন্ন কুপ্রথা, ধর্মীয় কূসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস,জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা,সতীদাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ পর্দাপ্রথা ইত্যাদি নানা কিছু প্রচলিত ছিল। যার ফলে সমাজের অবস্থা তখন খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু সেই সময় খুব কম লোকই ছিলেন যারা সমাজ থেকে এই সমস্ত জিনিস গুলো দূর করে সমাজকে আধুনিক করে তোলার চেষ্টা করে, সমাজের উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন। যারা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, তাদের মধ্যে সেই সময়কার আধুনিক মানব " রাজা রামমোহন রায় " ছিলেন অন্যতম। রাজা রামমোহন রায় সমাজ থেকে এই সমস্ত অন্ধ বিশ্বাস, কূপ্রথা, জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা, বাল্যবিবাহের প্রথা ইত্যাদির মতো এই জিনিসগুলো দূর করে সমাজে যুক্তিবাদী এবং আধুনিক ভাবধারা প্রসার করার মাধ্যমে সমাজকে আধুনিক করে তুলে সমাজকে উন্নত করে তুলতে চেয়েছিলেন। এবং এই কাজগুলো করার জন্যই তিনি 1828 একটি সভা গঠন করেন যার নাম ছিল " ব্রাহ্মসভা "।  কিন্তু পরবর্তীকালে 1830 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্ম সভার নাম পরিবর্তিত হয়ে নতুন নাম হয় " ব্রাহ্মসমাজ "। 

ব্রাহ্ম সভার বিভাজন : 1828 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্ম সভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে 1866 খ্রিস্টাব্দের পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় 38 বছর পর্যন্ত ধরে চলা ব্রাহ্ম সমাজে কোনো রকম ভাঙ্গন বা বিভাজন দেখা যায়নি। 1833 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ব্রাহ্ম আন্দোলন এর হাল ধরেছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেসবচন্দ্র সেন, শিবনাথ শাস্ত্রী আনন্দমোহন বসু,দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী প্রমুখ। রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মসমাজের উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মতপার্থক্য অথবা বিরোধের সৃষ্টি হয়েছিল। যার ফলে ব্রাহ্ম সমাজের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ভাঙ্গন অথবা বিভাজন সৃষ্টি হয়েছিল। যেমন - 

আদি ব্রাহ্মসমাজ এবং ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজ:

1866 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজের প্রথম বিভাগ সংঘটিত হয়। ব্রাহ্মসমাজের এই বিভাজনের প্রথম কারণ ছিল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কেশব চন্দ্র সেনের মধ্যে কিছু মতের পার্থক্য। কেশব চন্দ্র সেন প্রথম ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করলে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে ব্রহ্মানন্দ উপাধি দেন। কিন্তু পরে তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। ফলস্বরূপ, 1866 সালে, ব্রাহ্মসমাজ প্রথমবারের মতো বিভক্ত হয়। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে ব্রাহ্মসমাজের অংশটিকে "আদি ব্রাহ্মসমাজ" বলা হয় এবং কেশব চন্দ্র সেনের নেতৃত্বে থাকা অংশটিকে "ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ" বলা হতো

সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ এবং নববিধান ব্রাহ্মসমাজ:

1867 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজের প্রথম বিভক্তির পর, আবার 1878 সালে ব্রাহ্মসমাজের নিয়মের বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কেশব চন্দ্র সেন এবং শিবনাথ শাস্ত্রী, বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী এবং আনন্দ মোহন বসুর সাথে তীব্র বিরোধ দেখা দেয়। ফলে ব্রাহ্মসমাজ দ্বিতীয়বার বিভক্ত হয়। মূলত তখন ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হয়ে পড়ে।

সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ এবং নববিধান ব্রাহ্মসমাজ: কেশব চন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজের নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করেছিলেন। তাছাড়া তিনি সরকারের সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট আইন লঙ্ঘন করতে যাচ্ছিলেন। যার ফলে ব্রাহ্মসমাজে পূনরায় মতোবিরোধের সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের ফলস্বরূপ, 1878 খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হয়ে যায়। ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ ভেঙ্গে আবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়। শিবনাথ শাস্ত্রী, বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী এবং আনন্দ মোহন বসুর নেতৃত্বে গঠিত ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের নতুন শাখাটিকে " সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ " বলা হয় এবং কেশব চন্দ্র সেনের নেতৃত্বে থাকা অংশটি "নববিধান " নামে তাদের ব্রাহ্ম আন্দোলন পরিচালনা শুরু করে। নববিধান"।

আরও পড়ো👇

সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্ম সমাজের অবদান 

উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভুমিকা।

উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভুমিকা।-


ব্রাহ্ম সমাজ সম্পর্কে এতোটা সময় নিয়ে এই ব্লগটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

Tags : 

ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হয়েছিল কেন? | ব্রাহ্ম সমাজ সম্পর্কে টীকা লেখ | সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্ম সমাজের অবদান | ক্লাস 10 ইতিহাস প্রশ্ন উওর দ্বিতীয় অধ্যায় | ক্লাস 10 ইতিহাস বড় প্রশ্ন উওর দ্বিতীয় অধ্যায় | দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর দ্বিতীয় অধ্যায় | দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা বড় প্রশ্ন উত্তর | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা প্রশ্ন উত্তর | class 10 history 2 nd chapter notes | মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | wb class 10 history question answer | wb class 10 history suggestion | History question answer|  class 10 history 2nd chapter question answer | class 10 history question answer | wb class 10 history notes in Bengali | history notes | class 10 history notes


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top