-উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভুমিকা।
উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভুমিকা |
আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভুমিকা শেয়ার করেছি আশাকরি আজকের এই পোস্ট টা কিছুটা হলেও তোমাদের কাজেে লাগবে।
উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের সুচনা -
- ব্রাহ্ম সভা:: -
-
- আঠারো শতকের দিকে ভারতের বিভিন্ন জায়গা বিভিন্ন ধরনের কুপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস ইত্যাদি ছিল।
যেমন গংঙ্গায় সন্তান দান, অস্পৃশ্যতা, সতীদাহ প্রথা প্রভৃতি।। আর এসব কুপ্রথা ভারতের অন্যান্য জায়গার সাথে সাথে বাংলার সমাজেও বেশ জোড়ালো ভাবে ছিল। সমাজে প্রচলিত এসব ভয়ংকর কুপ্রথা গুলি দুর করার উদ্দেশ্য বিভিন্ন সমাজ সংস্কারক এগিয়ে আসেন। এবং তাদের মধ্যে সবার আগে এগিয়ে আসেন" রাজা রামমোহন রায়"
তিনি বাংলা তথা ভারতীয় সমাজে প্রচলিত এসব ভয়ংকর কুপ্রথা গুলি দুর করার জন্য এবং বিভিন্ন ভাবে সমাজের উন্নয়ন করার উদ্দেশ্য "1828 খ্রিষ্টাব্দে কয়েকজন সদশ্যকে নিয়ে "ব্রাহ্ম সভা "গঠন করেন।"। এই ব্রাহ্ম সভার উদ্দেশ্য ছিল - সমাজের প্রচলিত কুপ্রথা দুর করা এবং সমাজ সংস্কার করে সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে উন্নয়ন করা।
- ব্রাহ্ম সমাজ::-
-
- সমাজের কু- সংস্কার ও কুপ্রথা দুরের পাশাপাপাশি সমাজ কল্যাণের উদ্দেশ্য নিয়ে রাজা রামমোহন রায়ের 1828 খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই "ব্রাহ্ম সভার " নাম 1830 খ্রিষ্টাব্দে পরিবর্তিত হয়ে হয় 'ব্রাহ্ম সমাজ"
- 1833 খ্রিষ্টাব্দে রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর 1843 খ্রিষ্টাব্দে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম সমাজের হাল ধরেন। এছাড়া ব্রাহ্মসমাজের সদশ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন- কেশবচন্দ্র সেন, শিবনাথ শাস্ত্রী, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, আনন্দ মোহন বসু প্রমুখ।
- ব্রাহ্মসমাজে কেশবচন্দ্র সেন যোগ দেওেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুরের প্রিয় পাএ হয়ে ওঠেন। এবং তাই দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কেশবচন্দ্র সেনকে -"ব্রহ্মানন্দ ""উপাধি দান করেন।।
- ব্রাহ্মস্মাজের বিভাজন ::-
-
- সমাজের কু- সংস্কার ও কুপ্রথা দুরের পাশাপাপাশি সমাজ কল্যাণের উদ্দেশ্য নিয়ে রাজা রামমোহন রায়ের 1828 খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু এই ব্রাহ্ম সমাজ সময়ের সাথে সাথে বার বার বিভাজিত হয়েছে। 1866 খ্রিষ্টাব্দে দেবেন্দ্রনাঠ ঠাকুর এবং ব্রাহ্মসমাজের ব্রহ্মানন্দ কেশব চন্দ্র সেনের মধ্যে মত পার্থক্য শুরু হতে থাকে। এবং এর ফলে 1866 খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজে ভাঙ্গন ধরে, এবং 1866 খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ দুটি আলাদা আলাদা ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে যেই ব্রাহ্মসমাজ থাকে তার নাম হয় "" আদি ব্রাহ্মসমাজ "
- এবং কেশব চন্দ্র সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ব্রাহ্মসমাজের নাম হয়"" ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ""
- এর বেশ কিছু বছর পর কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ""ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজে "" শিবনাথ শাস্ত্রীর সহ আরও বেশকয়েক জনের সাথে কেশবচন্দ্র সেনের সাহে বিরোধের সৃষ্টি হয়। কারন কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্ম সমাজের আইন ভঙ্গ করে তার 13 বছরের নাবালিকা কন্যাকে কোচবিহারের রাজকুমারের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এবং এই ঘটনায় "ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ " আবার 1878 খ্রিষ্টাব্দে দু ভাগে আলাদা আলাদা হয়ে যায়।
- এইবার কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত অংশের নাম হয় "নববিধান" (1880).
- এবং শিবনাথ শাস্ত্রী, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, আনন্দ মোহন বসু প্রমুখের নেতৃত্বে থাকা ব্রাহ্মসমাজের নাম হয় "" সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ" (1878)
নিচে দেওয়া লিঙ্ক গুলোর ওপর ক্লিক করে বিভিন্ন অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন গুলো দেখে নিতে পারেন। 👇
1- ইতিহাসের ধারণা অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর
2- ইতিহাসের ধারণা অধ্যায়ের সমস্ত 2 নম্বরের প্রশ্ন ও উওর
3- সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
4- প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর ও সাজেশিন
6- সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা প্রশ্ন উওর ও সাজেশন
9- বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের সমস্ত 2 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উওর
-উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভুমিকা -
-ভুমিকা ::-
- উনিশ শতকের ভারত তথা বাংলার সমাজের প্রচলিত কূ- সংস্কার দুর ও সমাজের বিভিন্ন দিক উন্নয়নের উদ্দেশ্য রাজা রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজের সমাজ সংস্কারে ভুমিকা হল-
- 1, সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন ::-
-
- উনিশ শতকের বাংলা এবং তার সাথে ভারতের বেশ কিছু স্থানে এক ভয়ংকর কুপ্রথা চালু ছিল, যা ""সতীদাহ প্রথা বা সহমরন"" নামে পরিচিত। এই প্রথায় কোনো মহিলার স্বামী মারা গেলে তার স্ত্রীকেও স্বামীর মৃত দেহের সাথে জ্যন্ত চিতার আগুনে পুড়িয়ে মারা হত। এই মর্মান্তিক কুপ্রথা বন্ধ করা নিয়ে সমাজের কোনো উচ্চ ব্যক্তি বা সমাজ কখনোই কোনো কথা বা আন্দোলন বা প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু রাজা রামমোহন যখন এই ভয়ংকর কুপ্রথা সম্পর্কে অবগত হন তখন তিনি এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। কিন্তু সমাজে এমন ও মানুষ রুপি পশু ছিল যারা এই কথা বলতেন যে সতীদাহ প্রথার কথা নাকি হিন্দু শাস্ত্রে বলা আছে। তাই এটি বন্ধ করা পাপ হবে। কিন্তু রাজা রামমোহন সমস্ত হিন্দু শাস্ত্র ঘেটে ফেলেও কোথাও এই কথা দেখতে পাননি। এবং তিনি তার এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। অবশেষে তিনি সমাজের বেশ কিছু উচ্চ সম্মানিও ব্যক্তিদের সই সহ একটি আবেদন পএ 1829 খ্রিষ্টাব্দে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং এর কাছে জমা দেন। এবং লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং 1829 খ্রিষ্টাব্দের 4 ডিসেম্বর 17 নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেন।
- সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট::-
-- বাংলা এবং ভারতীয় সমাজে এই প্রথার চল ছিল যে খুব অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া।
- এবং এই প্রথার জন্য নারীদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এই বেকার কুপ্রথার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মসমাজের নেতা কেশবচন্দ্র সেন তার অনুগামী সহ ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনের চাপে পড়ে সরকার 1872 খ্রিষ্টাব্দে " সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট বা তিন আইন" পাস করে। এবং বাল্য বিবাহ বন্ধ করে।
- নারীকল্যানে ভুমিকা ::-
-- ভারতীয় নারীদের মধ্যে পর্দাপ্রথার বিলুপ্তি, বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহের পাশাপাশি ব্রাহ্মসমাজ নারীদের শিক্ষার ক্ষেত্রও এগিয়ে আসে। এবং ব্রাহ্মসমাজ নারীদের শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন স্থানে ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করে।।
- সমাজসেবা::-
-- সমাজসেবা ও জনহিতকর কাজের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী আর্দশের প্রতিষ্ঠা ছিল ব্রাহ্মসমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কেশবচন্দ্র সেন এবং ব্রাহ্মসমাজের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন মহামারি এবং দুর্ভিক্ষের সময় সেখানে এান পৌঁছে দিতেন। এবং এছাড়াও কৃষকদের সামান্যতম শিক্ষিত করতে বিভিন্ন জায়গায় নৌশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল।
-উপসংহার -::-
-- 1828 খ্রিষ্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় সমাজের উন্নয়ন করার উদ্দেশ্য ব্রাহ্ম সভা গঠন করেন। এবং এই ব্রাহ্মসভা বিভিন্ন সময়ে তাদের মত করে সমাজের উন্নয়ন করে যায়। ব্রাহ্ম সমাজের বিভাজন সম্পর্কে তাদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও তারা ব্রাহ্মসমাজের মুল নীতি ; অর্থাৎ সমাজ কল্যান এবং সমাজসেবা থেকে দুরে সরে যায়নি। রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্ম সভা বা সমাজের এরুপ উদ্যোগের ফলেই সমাজের ভয়ংকর কিছু কুপ্রথা মুছে গিয়েছে।
⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫
Nice
উত্তরমুছুন