প্রাচীন মিশরের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে কি জানো? মিশরের বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চার অগ্রগতির পরিচয় দাও || একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় অধ্যায়ের ( WB Class 11 history chapter 2 question answers in bengali ) আদিম মানব থেকে প্রাচীন সভ্যতা সমূহের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ( Class 11 history chapter 2 questions and answers ) " প্রাচীন মিশরের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে কি জানো? মিশরের বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চার অগ্রগতির পরিচয় দাও " প্রশ্নটির উওর ক্লাস 11 ইতিহাস নোট হিসাবে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
প্রাচীন মিশরের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে কি জানো? মিশরের বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চার অগ্রগতির পরিচয় দাও
উওরঃ মিশরের মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা : মিশর ছিল একটি মাতৃতান্ত্রিক দেশ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ বা অন্যান্য সম্প্রদায়ের যেমন সমাজে পুরুষকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হত। মিশরের ঠিক তার উল্টো কাজটা হতো।। সমাজের সমস্ত ক্ষমতা ছিল নারীদের হাতে। আর নারীদের হাতে এত ক্ষমতা থাকার জন্যই পৃথিবীর প্রথম মহিলা শাসক হিসেবে ছিলেন হাটাসু ছিলেন মিশরের প্রথম শাসক।।
মিশরের শাসকশ্রেণী : মিশরী সমাজে মাতৃতান্ত্রিক হলেও এখানে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে মিশরের সভ্যতাকে শাসন করা হতো। মিশরের সমস্ত সমাজব্যবস্থা এখানকার ফ্যারাওদের হাতে থাকতো।। মিশরের ফ্যারাওদের হাতেই সমাজের আইন শাসন ও বিচার ব্যবস্থা ইত্যাদি হাতে থাকতো।। সাধারণ মানুষ মনে করতেন যে মিশরের ফ্যারাওদের হাতেই সমস্ত শক্তি আছে এবং ফ্যারাও রাই প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।। যেমন সূর্যের উদয় হওয়া, ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিভিন্ন কার্যকলাপ তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।।এজন্য সমাজে ফ্যারাওদের একটি বিশিষ্ট ভাবে জায়গা দেওয়া হতো
ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ : মিশরীয় সমাজব্যবস্থায় ধনী - দরিদ্রের ভেদাভেদ খুবই তীব্রভাবে দেখা যেত। মিশরীয় ফ্যারাও, বিভিন্ন বণিক, বিভিন্ন শিল্প কর্মী, ক্রীতদাস বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ তাদের নিজের মতন করে নিজস্ব জীবন যাপন করতেন। কিন্তু সেটা তাদের নিজস্ব ক্ষেত্রে ছিল।। সমাজের প্রত্যেকের জন্যই সমাজ পৃথক হতো।। এবং প্রত্যেকটি আলাদা সমাজে নিজ নিজ এলাকার সর্বময় কর্তা তাদের নিজস্ব সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতো।
শোষক ও শোষিত মানুষ : অন্যান্য যে কোন সমাজের মতো মিশরীয় সমাজেও ন্যায়-অন্যায় জিনিসটি ছিল। কিন্তু মিশরীয় সমাজের ক্ষেত্রে ন্যায় এর তুলনায় অন্যায় জিনিসটি বেশি ছিল। সমাজের উচ্চবিত্ত ব্যক্তিরা সমাজের সাধারণ শ্রেণীর মানুষদের বিভিন্ন শোষণ করতো।। সমাজের উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ফ্যারাও, পুরোহিত, আঞ্চলিক প্রশাসক রাজকর্মচারী, কারারক্ষকদের দ্বারা সমাজের নিম্ন শ্রেণীর মানুষ গুলোকে অর্থাৎ কৃষক, কারিগর, ক্রীতদাসরা খুব বাজেভাবে শোষিত হতো।।
সমাজে ক্রীতদাসদের অবস্থা : মিশরে প্রাক রাজবংশীয় যুগেই ক্রীতদাস প্রথা বা দাসপ্রথার শুরু হয়েছিল। ক্রীতদাসরা ছিলেন এমন মানুষ যাতে সমাজে তো দুরের কথা! তাদের নিজস্ব জীবনেও তাদের কোনো অধিকার ছিল না।। ক্রীতদাসদের সেই মালিকের নিয়ম অনুসারেই বা সে মানিকের ইচ্ছে মতোই চলতে হতো, যেই মালিক সেই ক্রীতদাসকে কিনে নিয়েছে।। মিশরীয় সভ্যতায় সবচেয়ে খারাপ ছিল এই ক্রীতদাস প্রথা।। কারণ এই ক্রীতদাসরাই ছিল সমাজের সবচাইতে বেশি শোষিত হওয়া মানুষ।
মিশরের বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চা :
মিসরীয় সভ্যতায় বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চা ছিল খুবই উন্নত। মিশরের বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে মিশরীয়রা গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুবই উন্নতি করেছিল।।
গণিত শাস্ত্র : প্রাচীন মিশরেই পাটি গণিত ও জ্যামিতি উদ্ভব ঘটেছিল বলে অনেকে মনে করে। সে দেশের মানুষ যোগ, বিয়োগ, গুন ভাগ করার পদ্ধতি, দশমিকের ব্যবহার, ক্ষেত্রফল ঘনফল নির্ণয়ের পদ্ধতি খুবই সহজ ভাবে জানতো।।
জ্যোতির্বিদ্যা: গণিত শাস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে মিশরীয়রা জ্যোতির্বিদ্যায় ও খুবই পারদর্শী ছিল। অন্যান্য সংস্কৃতির মত মিশরীয় সংস্কৃতিতেও জ্যোতির্বিদ্যায় কাজ ছিল পুরোহিতদের।।
চিকিৎসা বিদ্যা : মিশরীয়রা চিকিৎসাবিদ্যা ছিল খুবই আধুনিক।। মিশরীয়রা বিভিন্ন গাছপালা থেকে বিভিন্ন রকম ওষুধ তৈরি করত।। এবং এছাড়াও মিশরীয় ব্রোঞ্জ থেকে বিভিন্ন শল্য চিকিৎসার যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হয়েছিল।। মিশরীয়রা চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে শরীর বিদ্যার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছিল এবং অ্যানাটমিতে এত উন্নত হওয়ার জন্যই মিশরের মমি বছরের-পর-বছর অক্ষত অবস্থায় থাকতো।।
মিশরে সাহিত্য : প্রাচীন মিশরীয়রা অন্যান্য দিক গুলির মত সাহিত্যের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি ঘটিয়েছিল। মিশরীয় যা প্রধানত গদ্য সাহিত্য কাব্যচর্চা রচনা করতো। মিশরের এরকম রচনা গুলির মধ্যে পঞ্চম ও ষষ্ঠ রাজবংশের কথা তাদের লিপিতে পাওয়া যায়।। মিশরীয় সাহিত্যের ক্ষেত্রে মিশরীয়দের ধর্মীয় সাহিত্য মৃতের পুস্তক নামে অভিহিত নিদর্শনগুলি মিশরের একটি উল্লেখযোগ্য ধর্ম সাহিত্য।। মিশরের এছাড়াও অন্যান্য সাহিত্য গুলির মধ্যে ইখনাটন এর রাজকীয় স্তুতি, মেমফাইট ড্রামা প্রভৃতি মিশরীয় সাহিত্যের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।।