এই ব্লগপোষ্টের মাধ্যমে আমরা দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ দ্বিতীয় অধ্যায়ে বায়ুমণ্ডল এবং তৃতীয় অধ্যায় বারিমন্ডলের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন এবং তার উত্তর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
1 - হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ এর ব্যাখ্যা দাও। [ মাধ্যমিক 2020, 2016,14 ]
উচ্চ পর্বতগাত্রে হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে গঠিত - হাতলযুক্ত চেয়ার বা এম্পিথিয়েটার মতো বা চামচের গর্তের মতো আকৃতি বিশিষ্ট ভূমিরুপকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও স্কটল্যান্ডে করি এবং ফ্রান্সে সার্ক বলা হয়।
পর্বতগাএ দিয়ে নামতে থাকার সময় হিমবাহ উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে পার্শ্বক্ষয় এবং নিম্ন হয় প্রায় সমান ভাবে করে থাকে। যার ফলে সেই হিমবাহ উপত্যকা ইউ আকৃতির হয়। যাকে ইউ আকৃতির উপত্যকা বলা হয়।।
পার্বত্য অঞ্চলে অনেক সময় ছোট ছোট হিমবাহ বিভিন্ন দিক থেকে এসে একটি বৃহৎ বা বড় আকৃতির হিমবাহ উপত্যকায় পতিত হয়।।। ছোট ছোট হিমবাহের তুলনায় মূল বা বড় আকৃতির হিমবাহের ক্ষয়কার্য অধিক বলে ছোট হিমবাহ উপত্যকা গুলিকে মূল হিমবাহের উপত্যকার ওপর ঝুলন্ত বলে মনে হয়।। একে ঝুলন্ত উপত্যকা বলে।।
হিমবাহের গতিপথে বা প্রবাহ পথে কোনো উঁচু শিলাখণ্ড টিভির আকারে অবস্থান করলে, ওই প্রস্তরখন্ডটি হিমবাহের প্রবাহের দিকে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় এবং হিমবাহ প্রবাহের বিপরীত দিকে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ক্ষয় হতে হতে এবড়ো খেবড়ো ও ফাটল যুক্ত ভূমিরূপে পরিণত হয়।।এরূপ ভূমিরূপকে রসেমতানে বলে।।
হিমবাহের গতিপথে যদি কোনো কঠিন শিলাখন্ডের পেছনে যদি কোনো নরম শিলাখণ্ড থাকে, তবে সেই কঠিন শিলাখণ্ড হিমবাহের ক্ষয় কাজের হাত থেকে সেই নরম শিলাখণ্ড কে রক্ষা করে। সামনে থাকা সেই কঠিন শিলাখন্ডটি উঁচু হয়ে ঢিপিত মতো অবস্থান করে যাকে ক্র্যাগ বলা হয়।
উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরুপগুলির বর্ণনা দাও।।
অথবা, নদীর ফলে ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি প্রধান ভূমিরুপ চিএসহ বর্ণনা করো। ( মাধ্যমিক 2019 )
উওর : উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত কয়েকটি প্রধান ভূমিরুপ হলো।।
১- V, & I আকৃতির উপত্যকা, ২- জলপ্রপাত, ৩- মন্থকূপ, ৪- প্রপাতকূপ।
১- V - আকৃতির উপত্যকা :- উচ্চগতিতে নদীর পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্ন ক্ষয় বেশি হওয়ার ফলে সেই নদীর পাড় অত্যন্ত খাড়া এবং নদী উপত্যকা খুব গভীর ও সংকীর্ণ হয়ে ইংরেজি অক্ষর V -এর মতো দেখতে হয়।, নদী উপত্যকা ইংরেজি অক্ষর V এর আকৃতি ধারণ করলে তখন তাকে V আকৃতির উপত্যকা বলা হয়.
- I - আকৃতির উপত্যকা : উচ্চ পার্বত্য প্রবাহে ভূমির ঢাল বেশি হওয়ায় নদীর গতিবেগ বেশি থাকে। সেইসঙ্গে নদীর জলের সঙ্গে প্রস্তরখন্ডের পরিমাণ বেশি থাকে। এরকম অবস্থায় নদী অবঘর্ষ পদ্ধতিতে তার গতিপথে প্রবল বেগে নিম্নক্ষয় করে এবং এরুপ নিম্ন ক্ষয়ের ফলে নদীর উপত্যকায় সৃষ্টি হওয়া ইংরেজি অক্ষর আই ( I ) এর মতো ভূমিরূপকে গিরিখাত বলা হয়।।
২- জলপ্রপাত :
উচ্চগতিতে উপত্যাকার ঢালের হঠাৎ অধিক পার্থক্য ঘটলে নদীর জল প্রবল বেগে উপর থেকে নিচের দিকে পড়ে। একে জলপ্রপাত বলা হয়।।
নদীর গতিপথে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকলে জলপ্রপাত গঠিত হতে পারে। যেমন-
• কঠিন শিলা ও কোন জেলায় অবস্থিত :-
নদীর গতিপথে যদি কঠিন শিলা ও নরম সীরাত অনুভূমিক ও উলম্ব তীর্যকভাবে অবস্থান করে তাহলে কঠিন শিলা অপেক্ষা নরম ছিল বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় জলপ্রপাত গঠিত হয়।।
• ঝুলন্ত উপত্যকা :- হিমবাহের কার্যের ফলে সৃষ্ট ঝুলন্ত উপত্যকা থেকেও জলপ্রপাত গঠিত হতে পারে। যেমন লাডাকের পার্কচাক জলপ্রপাত এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে।
• চ্যুতির সৃষ্টি :- নদীর গতিপথে আড়াআড়ি চ্যুতি ঘটলে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। যেমন জাম্বেসি নদীর ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত,ভারতের নর্মদা নদীর কপিলধারা জলপ্রপাত এরকম ভাবে সৃষ্টি হয়েছে।
• নিক বিন্দু :- ভূমির পুনর্যৌবন লাভে শৃষ্ট নিক বিন্দুতে জলপ্রপাত গঠিত হয়। যেমন সুবর্ণরেখা নদী ও দশম জলপ্রপাত।
• এছাড়াও মালভূমি খাড়া ভাবে সমভূমির সঙ্গে মিশলে জলপ্রপাত তৈরি হয়।।
৩- মন্থকূপ বা পটোহল : নদীর জলের সঙ্গে মিশে থাকা বিভিন্ন কঠিন শিলা, বা শিলাখণ্ড জল প্রবাহের সময় নদীগর্ভে বারবার আঘাত করার পরে নদীগর্ভে অনেক ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়।।। এরকম ছোট ছোট গর্ত পরবর্তীকালে আরও আঘাতের ফলে সেই গর্তগুলি আরও বড় ও গভীর আকার ধারণ করে। নদীগর্ভে সৃষ্ট এরকম বড় ও গভীর গর্ত গুলোকে মন্থকূপ বা পটোহল বলে।।
যেখানে অসংখ্য পটোহল একসঙ্গে গড়ে ওঠে, তাকে পটোহল কলোনি বলে।।।
৪- প্রপাত কূপ বা প্লাঞ্জপুল : জলপ্রপাতের জল যখন অনেক উপর থেকে প্রবল বেগে নিচে গড়িয়ে পড়ে তখন সেই জলরাশি জলপ্রপাতের যে নির্দিষ্ট অংশে বেশি পরিমাণে পড়ছে সেই নির্দিষ্ট অঞ্চলের জলের আঘাতে বা জলে মিশে থাকা বিভিন্ন বালি, কাকড়, শিলাখন্ডের আঘাতে সেখানে একপ্রকার গর্তের সৃষ্টি হয়।। এরূপ গর্ত গুলোকে প্রপাতকূপ বা প্লাঞ্জপূল বলে।
##
বায়ুমন্ডলে উষ্ণতার তারতম্যের যেকোনো দুটি কারণ সংক্ষেপে লেখ। ( মাধ্যমিক 2017,15,07,04 )
উওর : বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের কারণ একাধিক। বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের কিছু প্রধান কারণ নিচে আলোচনা করা হলো।
◼ অক্ষাংশ : কোনো স্থানের বায়ুর উষ্ণতা সেখানকার অক্ষাংশের উপর নির্ভর করে থাকে। কারণ সেখানে সূর্যকিরনের পতন নির্ভর করে সেখানকার অক্ষাংশের উপর। যেখানে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয় সেখানে বায়ুর উষ্ণতা বেশি হয়। কারণ সেখানে সূর্যরশ্মিকে কম বায়ুস্তত ভেদ করে আসতে হয়। এবং সূর্য যেখানে তির্যক তবে কিরণ দেয় সেখানে সূর্যরশ্মি কে বায়ু স্তরের বিভিন্ন উপাদান ভেদ করে আসতে হয় বলে উষ্ণতা কম হয়। নিরক্ষরেখার উপর সূর্য রশ্মি লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে সেখানকার বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতাও বেশি। এবং নিরক্ষরেখার উত্তর মেরুর ও দক্ষিণ মেরুর দিকে গেলে সেখানে সূর্য তীর্যকভাবে কিরণ দেয় বলে সেখানে উষ্ণতাও কম হয়।
◼ উচ্চতা : বিভিন্ন স্থানের উচ্চতাও বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের প্রধান কারন। সূর্যরশ্মি বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন উপাদান ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়। এবং ভূপৃষ্ঠ সেই তাপ শোষণ করে উত্তপ্ত হয়। এরপর ভূপৃষ্ঠ সেই তাপ বিকিরণ করে ভূসংলগ্ন বায়ু স্তরকে উত্তপ্ত করে। এবং সেই বিকিরিত তাপের খুব কম অংশই বায়ুর ওপরের স্তরে পৌঁছাতে পারে। উপরের স্তরের বায়ুতে ধূলিকণা, জলীয়বাষ্প প্রভৃতি কম থাকায় সেখানকার বায়ুর তাপ শোষণ এবং সংরক্ষণ করার ক্ষমতা কম থাকে যার ফলে সেখানে উষ্ণতা কম হয়।
◼ বায়ুপ্রবাহ : বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের আরেকটি প্রধান কারণ হলো বায়ুপ্রবাহ। যেসব অঞ্চলে উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হয় সেখানকার বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়। এবং অঞ্চলের উপর দিয়ে শীতল বায়ু প্রবাহিত হয় সেখানকার বায়ুর উষ্ণতা কম হয়।
যেমন : গ্রীষ্মকালে উত্তর ভারতের " লু " নামক উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হয় সেখানকার বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। এবং শীতল সাইবেরীয় বায়ুর প্রবাহে চীনে শীতকালে উষ্ণতা আরও বেড়ে যায়।
◼ স্থলভাগ ও জলভাগ এর বন্টন : স্থল ও জলের ভৌত বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য জন্য উষ্ণতার তারতম্য হয়ে থাকে। স্বলভাগ দ্রুত উত্তপ্ত ও দ্রুত শীতল হয়ে পরে। অন্যদিকে জলভাগে এই প্রক্রিয়া খুব ধীরে ধীরে হয়। অর্থাৎ জলভাগ ধীরে উত্তপ্ত ও শীতল হয়। তাই মহাদেশ গুলোতে চরমাভাবাপন্ন মহাদেশীয় জলবায়ু ও উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে সমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায়।
◼ মৃত্তিকা : কোনো অঞ্চলের মৃত্তিকার উপরে সেই অঞ্চলের বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার পার্থক্য নির্ভর করে। সেই অঞ্চলের মৃত্তিকার তাপ শোষণ,গ্রহণ ও ত্যাগ ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে সেখানকার বায়ুমণ্ডলের উত্তপ্ত হয়ে থাকে।
যেমন - পাললিক শিলায় কাদার পরিমাণ বেশি থাকায় এর লল ধারণ ক্ষমতা বেশি হলে এই মাটি সহজে ঠান্ডা বা গরম হয়না। আবার বালি ও কাদা মাটির তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি এই মাটি গুলো খুব তাড়াতাড়ি তাপ শোষন ও গ্রহন করে । এই কারণে মরুভূমিতে দিনের বেলায় তাপ বেশি ও রাতের বেলায় তাপমাত্রা খুব কম হয়।
◼ নগরায়ন ও শিল্পাঞ্চল : শহর নগরের পাকা বাড়ি, পাঁকা রাস্তা ঘাট, ইত্যাদি সূর্যকিরণের প্রভাব গরম হয়ে যায় এবং ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন নিম্নস্তরের বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও শহরের যানবাহনের বা কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়ায়।
পৃথিবীর নিয়ত বায়ু প্রবাহ গুলির উৎপত্তি ও গতিপথ চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো ( মাধ্যমিক 2018 )
অথবা, পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়ের সঙ্গে নিয়ত বায়ু প্রবাহের সম্পর্ক চিত্র সহ বর্ণনা দাও।
উওর :
পৃথিবীতে যে সমস্ত অঞ্চলে যে সমস্ত বায়ু নির্দিষ্ট গতি এবং নির্দিষ্ট দিকে নিয়মিত ভাবে প্রবাহিত হয়, তাদের নিয়ত বায়ু বলে।
◼ নিয়ত বায়ু সৃষ্টির কারণ : নিয়ত বায়ু সৃষ্টি হয় বায়ুচাপ বলয় গুলির অবস্থানের জন্য। চাপের বৈপরীত্যই নিয়ত বায়ুগুলির প্রবাহের কারণ।
চারটি উচ্চচাপ বলয় ও তিনটি নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে মূল উষ্ণতা, আর্দ্রবায়ু, বায়ুর বিক্ষেপণ,বায়ুর নিমজ্জন,মেরু বায়ুর আগমন, শীতল এবং শুষ্ক বায়ুর অবস্থানের কারণে।
◼ পৃথিবীর সাতটি বায়ুচাপ বলয় গুলি হল -
• নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়
• কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়
• মকরীয় উচ্চচাপ বলয়
• সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়
• কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়
• সুমেরু উচ্চচাপ বলয়
• কুমেরু উচ্চচাপ বলয়
◼ ফেরেলের সূত্র অনুযায়ী নিয়ত বায়ুগুলি উচ্চচাপ বলয় থেকে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে যাওয়র সময় উত্তর গোলার্ধের ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
◼ আয়ন বায়ুর প্রবাহস্থল : উভয় গোলার্ধে 5 ডিগ্রি থেকে 35 ডিগ্রি অক্ষাংশ।
⚫ উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু : কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় এর দিকে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়।
⚫ দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু : মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় এর দিকে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়।
◼ পশ্চিমা বায়ুর প্রবাহ স্থল : উভয় গোলার্ধে 35 থেকে 60 ডিগ্রি অক্ষাংশ।
⚫ দক্ষিণ পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু : কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়এর দিকে দক্ষিণ পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়।
⚫ উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু : মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়।
◼ মেরু বায়ুর প্রবাহস্থল : উভয় গোলার্ধে 70 থেকে 80 ডিগ্রি অক্ষাংশ।
⚫ উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু : সুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় এর দিকে উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু প্রবাহিত হয়।
⚫ দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু : কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় এর দিকে দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু প্রবাহিত হয়।
সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ গুলি ব্যাখ্যা করো ( মাধ্যমিক 2018,2016,2007, 2006,2004 )
উওর :
• নিয়ত বায়ুপ্রবাহ : বিজ্ঞানীদের মতে প্রবল নিয়ত বায়ু প্রবাহই সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির অন্যতম কারন। প্রবল নিয়ত বায়ু যখন সমুদ্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন জলরাশির উপর যে প্রভাব পরে, তার ফলে সমুদ্রের জলরাশি নিয়ত বায়ু প্রবাহের দিক অনুযায়ী সেই দিকে প্রবাহিত হয়।
• পৃথিবীর আবর্তন গতি ও কোরিওলিস বল: পৃথিবীরপশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করায় যে কোরিওলিস শক্তির উদ্ভব ঘটে তার প্রভাবে সমুদ্রস্রোত নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরুর দিকে সরাসরি উত্তর দিকে প্রবাহিত না হয়ে ফেরেলের সূত্র অনুসারে উওর গোলার্ধের ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
• বায়ুপ্রবাহের ঋতুগত পরিবর্তন : ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র স্রোতের দিক ও গতি দুটোই পরিবর্তনের পরিবর্তন হয়। যেমন ভারত মহাসাগরে মৌসুমী বায়ুর আগমনের সময় সমুদ্রস্রোত দক্ষিণ থেকে উত্তরে এবং প্রত্যাবর্তনের সময় উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। এছাড়া বায়ুর ঘর্ষণজনিত শক্তি, বায়ুচাপের ঢালের তারতম্যে, বাষ্পীভবন ইত্যাদির জন্যেও সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটে।
• সমুদ্র জলের উষ্ণতা, লবনাক্ত, ঘনত্বের পার্থক্য : সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির ক্ষেত্রে সমুদ্রের জলের উষ্ণতার পার্থক্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে সমুদ্রের জল সেখানে বেশি উত্তপ্ত হয়। যার ফলে সেটা হালকা ও প্রসারিত হয়ে বহিস্রোত রূপে প্রবাহিত হয় এবং মেরু অঞ্চলে সূর্য তীর্যকভাবে কিরণ দেয় বলে সেখানকার লল ভারী এবং ঘন হয়ে যাবে সেটা অন্তস্রোত রূপে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।
অন্যদিকে যেখানে সমুদ্রের জলের লবণের পরিমাণ বেশি, সেখানকার সমুদ্রের জল ভারী হয়ে কম লবণাক্ত জলের দিকে অন্ত স্রোত রুপে প্রবাহিত হয় এবং কম লবণাক্ত জল বহিস্রোত রূপে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি করে।
• বরফের গলন : মেরু অঞ্চলের বরফ গলনের ফলে সমুদ্রের লবনতা কমিয়ে দেয়। ফলে সেখানকার জল হালকা হয়ে বহিস্রোত রুপে সমুদ্র স্রোতের সৃষ্টি করে।
• উপকূলের আকৃতি : প্রবাহ পথে মহাদেশের উপকূলভাগ ও দ্বীপপুঞ্জ থাকলে সমুদ্রস্রোত প্রতিহিত হয়ে পরিবর্তন করে। যেমন ব্রাজিলের সাওরোখ অন্তরীপে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত বাধা পেয়ে দক্ষিণমূখী ব্রাজিল স্রোত সৃষ্টি করে।
• বায়ুর চাপ : সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির ক্ষেত্রে বায়ুর চাপেরও ভূমিকা থাকে। যেমন - যেখানে বায়ুর চাপ বেশি, সেই স্থানে সমুদ্রতল অধিক চাপে কিছুটা অবনমিত হয়ে পড়ে। এই সমতা ফিরিয়ে আনতে সমুদ্র জল সঞ্চারিত হয়। এছাড়াও বায়ুচাপের পার্থক্য বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় যা সমুদ্র জলকে এক স্থান থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে সাহায্য করে।
পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রস্রোতের প্রভাব আলোচনা করো। ( মাধ্যমিক 2017, মাধ্যমিক 2012 )
উওর :
• তাপমাত্রার উপর প্রভাব : সমুদ্রস্রোত তার উপকূলবর্তী অঞ্চলের বা নিকটবর্তী অঞ্চলের তাপমাত্রা বা উষ্ণতার উপর প্রভাব ফেলে। যে দেশের উপকূলের পাশ দিয়ে উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হয়, সেই সমস্ত উপকূল অঞ্চলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি হয়। যেমন - উষ্ণ আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে শীতকালেও ব্রিটিশ যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল অঞ্চল গুলি বরফ মুক্ত থাকে। অন্য দিকে শীতল স্রোতের প্রভাবে উপকূল অঞ্চলের তাপমাত্রা অনেক টা হ্রাস পায়। যেমন - শীতকালে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রচণ্ড শীত পড়ে ও তুষার পাত হয়।
• বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ : উষ্ণ সমুদ্র স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বেশি বলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই উষ্ণ স্রোত দ্বারা প্রভাবিত উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে শীতল স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কম বলে তখন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম থাকে। তাই স্রোতের প্রভাবে উপকূল অঞ্চল গুলিতে তেমন একটা বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে।
• মরুভূমি সৃষ্টি : সমস্ত দেশের উপকূলের পাশ দিয়ে শীতল সমুদ্র স্রোত বাহিত হয়, সেই সমস্ত উপকূলবর্তী অঞ্চল গুলিতে তেমন একটা বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। ফলে সেখানে বৃষ্টিপাতের অভাবে মরুভূমির সৃষ্টি হয়। যেমন - আফ্রিকার উত্তর পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত শীতল ক্যানারি স্রোতের প্রভাবে সাহারা মরুভূমি র সৃষ্টি হয়েছে।
• ঘন কুয়াশা এবং ঝড়ঝঞ্জার সৃষ্টি :
যেখানে উষ্ণ স্রোত এবং শীতল স্রোতের মিলন ঘটে,সেখানে এই দুই বিপরীতধর্মী বায়ুর সংঘর্ষের ফলে সেখানে ঘন কুয়াশা,ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাতসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।
যেমন নিউফাউল্যান্ড উপকূকে উষ্ণ উপসাগরীয় এবং শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলন ঘটায় এবং জাপান উপকুলে উষ্ণ কুরোশিয়া এবং শীতল ওয়াশিয়ো স্রোতের মিলন ঘটায় জাপান উপকূলে ঘন কুয়াশা, ঝড়-ঝঞ্ঝা পূর্ণ আবহওয়া সৃষ্টি হয়।
• এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব : এল-নিনো এবং লা-নিনো এই দুটি উষ্ণ ও শীতল স্রোতের পর্যায়ক্রমিক আবির্ভাব প্রশান্ত মহাসাগরের দুই উপকূলবর্তী অঞ্চলের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।। যেমন লা- নিনার বছরগুলিতে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায় ও প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে এলনিনোর বছরে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে (পেরু ইকুয়েডর উপকূল) বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও পশ্চিম উপকূলে (দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া) হ্রাস পায়।
• মগ্নচড়া সৃষ্টি : সমুদ্রস্রোত অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যের ওপরেও প্রভাব ফেলে। উষ্ণ এবং শীতল স্রোতের মিলনস্থলে সৃষ্ট মগ্নচড়া গুলি মৎস্য জীবিদের জন্য মৎস্য আহরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।