একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর | আদিম মানব থেকে প্রাচীন সভ্যতা সমূহ অধ্যায়ের বিশ্লেষনধর্মী প্রশ্ন উওর |

0


একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর | আদিম মানব থেকে প্রাচীন সভ্যতা সমূহ অধ্যায়ের বিশ্লেষনধর্মী প্রশ্ন উওর | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর 


একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর


একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর | আদিম মানব থেকে প্রাচীন সভ্যতা সমূহ অধ্যায়ের বিশ্লেষনধর্মী প্রশ্ন উওর | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর 


1-মেহেরগড় সভ্যতার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য গুলি উল্লেখ করো। মেহেরগড় সভ্যতার প্রাচীনত্ব নির্ণয় করো ও বিভিন্ন কেন্দ্রগুলি উল্লেখ করো।

✅ উওর :

মেহেরগড় সভ্যতার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য :

হাতিয়ার : মেহেরগড় সভ্যতায় নব্য প্রস্তর যুগের বিভিন্ন হাতিয়ার আবিষ্কৃত হয়েছে বলে, স্বাভাবিক ভাবে বলা যায় যে মেহেরগড় সভ্যতায় নব্যপ্রস্তর যুগের বিভিন্ন হাতিয়ার গুলি তাদের শিকারের কাজে বা কৃষিকাজে ও অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো।। মেহেরগড় সভ্যতার মানুষদের হাতিয়ার ছিল অনেকটাই আধুনিক।। তারা বিভিন্ন ধরনের পাথর ও অন্যান্য ধাতুর হাতিয়ার ব্যবহার করতো।। এসব হাতিয়ায়ের ও কাজের যন্ত্রপাতির মধ্যে ছিল কাস্তে,  মৃৎপত্র, যাতা,,হামানদিস্তা,নিড়ানি প্রভৃতি।

স্থায়ী বসতি নির্মাণ :   নবপ্রস্তর যুগে মেহেরগড় সভ্যতার মানুষেরা বনজঙ্গলে ও পাহাড়ের বিভিন্ন গুহায় ঘুরে বেড়ানো বাদ দিয়ে নিজেদের স্থায়ী বসতি নির্মাণ করতে শুরু করেছিল।। প্রথমদিকে শিকার করা ও পশুপালনের পাশাপাশি একটি জায়গায় স্থায়ীভাবে থেকে সেখানে কৃষি কাজ করে খাদ্য উৎপাদনের জন্য এসব বসতি নির্মাণ শুরু হয়েছিল।।  প্রথম দিকে মেহেরগড় সভ্যতার মানুষেরা রোদে পোড়া মাটির ইট দিয়ে তাদের বাড়িঘর নির্মাণ করতে শুরু করেছিল।। পরবর্তীকালে কোথাও কোথাও পাথরের অংশ ভালো করে কেটে তা ইট হিসেবে ব্যবহার করে ঘরবাড়ি বানানো হতো।।

কৃষিকাজ :    মেহেরগড় সভ্যতার মানুষেরা প্রাচীন মানুষের মতো পশু শিকার করার মাধ্যমে মাংস সংগ্রহ করার প্রথাকে বাদ দিয়ে কৃষিকাজ করার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনের বিভিন্ন পদ্ধতিকেই  প্রধান জীবিকা হিসেবে বেছে  নিয়েছিল।। মেহেরগড় সভ্যতার মানুষেরা তাদের একটি জমিতে নিজেরা কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন পশুদেরও তাদের কৃষি জমিতে ব্যবহার করত।। নিজেরা কাজ করার মাধ্যমে এবং পশুদের কাজে লাগানোর মাধ্যমে মেহেরগড় সভ্যতার মানুষেরা বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদনকারী ফসলের চাষ করতে পেরেছিল।।

তামার ব্যবহার  :   যেহেতু লৌহ যুগ নব্য প্রস্তর যুগের অনেক পড়ে এসেছিল! তাই মেহেরগড় সভ্যতার মানুষেরা লৌহের ব্যবহার ঠিকভাবে জানতো না! তখন তাদের হাতে লোহা কিভাবে পৌঁছায়নি।। কিন্তু মেহেরগড় সভ্যতায় মানুষেরা তমার ব্যবহার প্রথম পর্যায় থেকেই জানতো।। মেহেরগড় সভ্যতার মানুষেরা তামাকে বিভিন্নভাবে তাদের যন্ত্রপাতি বিভিন্ন,হাতিয়ার ও সিলমোহর বানানোর জন্য ব্যবহার করত।।

পশুপালন :  মেহেরগড় সভ্যতার মানুষেরা তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে বিভিন্নভাবে পশুদের ব্যবহার করত।। পশু থেকে দুধ সংগ্রহ,মাংস সংগ্রহ তাদের লোম, চামড়া এবং কৃষি কাজে ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন পশুকে পোষ মানানো হত।।  মেহেরগড় সভ্যতার মানুষেরা ছাগল, গরু,,কুঁজ ওয়ালা ঘোড়া প্রভৃতি পশুকে তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে পোষ মানাতে পেরেছিল।।

মেহেরগড় সভ্যতার মানুষদের সমাধি :    মেহেরগড় সভ্যতার মানুষের সমাধির ক্ষেত্রে এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।। মেহেরগড় সভ্যতার কিছু কিছু সমাধিতে মৃত ব্যক্তির শরীরে রঙ্গিন মাটি, পশু শিকার করা বিভিন্ন হাতিয়ার ও অলংকার,. নীলকান্তমণি,  নীলা প্রকৃতির দামি পাথর পাওয়া গেছে।। আবার মেহেরগড় সভ্যতায় এমনও কিছু মৃত ব্যক্তির সমাধি পাওয়া গেছে  যেখানে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কোন কিছুই দেওয়া ছিল না।।

মৃত ব্যক্তিকে এরকম আলাদা আলাদাভাবে সমাধিতে দেওয়ার দুটি আলাদা  দিক থেকে বোঝা যায় যে মেহেরগড় সভ্যতা সমাজে সামাজিক বৈষম্যর ছিল।। যে সব সমাধি গুলিতে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে বিভিন্ন দামি রত্ন, পাথর, তা শিকার করা বিভিন্ন হাতিয়ার, বস্ত্র ইত্যাদি দেওয়া হতো সেগুলি স্বাভাবিকভাবেই সমাজের উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের সমাধি। অন্যদিকে যেই সমাধিগুলোতে মৃত ব্যক্তির সাথে কিছুই থাকত না সেগুলি স্বাভাবিকভাবেই সমাজের সাধারণ বা নিচু স্তরের মানুষের সমাধি।

এছাড়াও মেহেরগড় সভ্যতার মানুষেরা বৈদেশিক সম্পর্ক, বস্ত্র বয়ন শিল্প এবং অন্যান্য শিল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন বাণিজ্যক কার্যকলাপের সঙ্গেও যুক্ত ছিল।

মেহেরগড় সভ্যতার প্রাচীনত্ব : আজ থেকে ঠিক কত বছর আগে মেহেরগড় সভ্যতার সূচনা হয়েছিল সেটা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।। কিন্তু আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 7000 অব্দ নাগাদ বর্তমান পাকিস্তানের বালুচিস্তান এর কাছাকাছি এই মেহেরগড় সভ্যতার সূচনা হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। মেহেরগড় সভ্যতা মোটামুটিভাবে 7টি পর্বে বিকশিত হয়েছিল।
মেহেরগড় সভ্যতার প্রথম পর্যায় শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব 7000 অব্দ নাগাদ।। এর দ্বিতীয় সময়কাল শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব 5000 অব্দ নাগাদ।। মেহেরগড় সভ্যতার চতুর্থ পর্যায় শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব 4000 অব্দ নাগাদ।। মেহেরগড় সভ্যতার চতুর্থ পর্যায় থেকে সপ্তম পর্যায় পর্যন্ত সময়কাল ছিল  খ্রিস্টপূর্ব 3500  অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব 2500 অব্দ পর্যন্ত।

মেহেরগড় সভ্যতার প্রধান কেন্দ্র সমূহ :   বর্তমান পাকিস্তানের বালুচিস্তানে গড়ে ওঠা এই মেহেরগড় সভ্যতার প্রধান কেন্দ্র গুলি ছিল তরকাইকেল্লা,  শেরিখান,  তরকাই কাচ্ছিবেগ মুল্ডিগাক, পিরিয়ানো, কুল্লি, নন্দুরা, আমরিনাল, ঘুন্ডাই ও থারো প্রভৃতি।

২০২২ সালের একাদশ শ্রেণির ইতিহাস সাজেশন দেখতে চাও? তাহলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে সেই সমস্ত প্রশ্ন গুলো একবার দেখে নাও, যেগুলো তোমাদের সামনের পরিক্ষার আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। 👇👇

WB Class 11 History Suggestion 2022 || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস সাজেশন ২০২২


2- হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করো।

✅ উওর :

ভূমিকা : হরপ্পা একটি প্রাচীন সভ্যতা হলেও এর নগর পরিকল্পনা ছিল যথেষ্ট আধুনিক রকমের।। হরপ্পা সভ্যতার প্রধান কেন্দ্র করে যেমন হরপ্পা,  মহেন - জো - দারো,  রুপার,  লোথাল ও কালিবঙ্গানরর মত প্রধান কেন্দ্রগুলিতে হরপ্পা সভ্যতার আধুনিক নগর পরিকল্পনার লক্ষন খুজে পাওয়া গিয়েছিল।।

হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা -

নগরের সাদৃশ্য :     হরপ্পা সভ্যতার প্রধান কেন্দ্র গুলি একটি অপরের থেকে দূরে থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রধান কেন্দ্রগুলিতে জীবনযাত্রার সাদৃশ্য দেখা যেত।।  হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্র গুলিতে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, যানবাহন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি নজর এসব জিনিসগুলো প্রায় একই ধরনের ছিল।।

হরপ্পা সভ্যতার পাকা বাড়ি ঘর :     হরপ্পা সভ্যতা একটি প্রাচীন সভ্যতা হলেও সেই যুগের মানুষ  পাকা বাড়িঘর ব্যবহার করত। সাধারণভাবে বর্তমান যুগের ইটের সঙ্গে সেই যুগের ইটের কোন মিল ছিল না। হরপ্পা সভ্যতার বাড়ি গুলি বানানো হতো রোদে শুকানো বা আগুনে পোড়ানো ছোট ছোট ইটের মাধ্যমে।  সেখানে বাড়িগুলোতে সাধারণভাবেই সমাজের উচ্চবিত্ত ধনী ব্যক্তিরা বসবাস করতো।। অন্যদিকে যেই বাড়ি গুলি আকারে ছোট এবং কম কামরা বিশিষ্ট ছিল সেই বাড়িগুলোতে সমাজের সাধারণ মানুষের বসবাস করতো।।

রাস্তা- ঘাট :     হরপ্পা সভ্যতা রাস্তাঘাট ছিল থেকে অনেকটাই উন্নত ধরনের। শহরের বিভিন্ন রাস্তাগুলি বানানো হতো পাথর, চুন,  সুরকির মাধ্যমে।।যেগুলো থাকতো সবসময় সোজা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।। রাস্তাগুলো সাধারণভাবে 9 থেকে 34 ফুট পর্যন্ত চওড়া হত। রাস্তাগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বড় পাকা বাড়ি ঘরের পাশেই বানানো হতো এবং সেখান থেকে শহরের অলিগলিতে বিভিন্ন সরু রাস্তা বেরিয়ে যেত।। রাস্তাঘাট গুলির আশেপাশের বিভিন্ন ডাস্টবিন রাখা থাকতো,  যাতে পথচারীরা তাদের আবর্জনা সে ডাস্টবিনে ভিতরে ফেলতে পারে!! এবং যার ফলে রাস্তাঘাট গুলি যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতো।।

শস্যাগার :    হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা অন্যান্য দিকগুলির সঙ্গে খাদ্য সঞ্চয় এবং সংরক্ষণ এর দিকটিও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছিল।। হরপ্পা সভ্যতার হরপ্পাতে বেশ কয়েকটি শস্যাগার পাওয়া গিয়েছে যেখানে বিভিন্ন শস্য সংগ্রহ করা হতো।। হরপ্পা সভ্যতার এসব শস্যাগার গুলিতে আপৎকালীন সময় ওজন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিভিন্ন শস্যদানা বা কৃষিজ ফসল সংরক্ষণ করে রাখতে।

স্নানাগার:     হরপ্পা সভ্যতার মহেঞ্জোদারো থেকে 108 ফুট দীর্ঘ এবং 180 ফুট প্রস্থ বেশ কয়েকটি স্নানাগার এর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।। অনুমান করা হয় এসব স্নানাগারে ঠান্ডা এবং গরম জল দুই এর ই  ব্যবস্থা ছিল।। প্রত্যেকটি জলাশয়ের পাশে একটি ঘরে ছোট ঘরে রাখা হতো।। অনুমান করা হয় যে সে ঘর গুলির মধ্যে অনেকেই তাদের পোশাক পরিবর্তনের কাজ করে থাকতেন।।

পয়- প্রণালী :: হরপ্পা সভ্যতার বেশিরভাগ রাস্তার আশেপাশে এখনকার মতো পয় প্রণালীর ব্যবস্থা ছিল।। এসব প্রণালীর মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন বাড়ি ঘরের নোংরা আবর্জনা এবং নোংরা বেরিয়ে যেত।।

ম্যানহোল এবং ডাস্টবিন :    হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন রাস্তা ঘাটের পাশে প্রণালী সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ডাস্টবিন রাখা হতো। এই ডাস্টবিন গুলি মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন রাস্তার যে নোংরা আবর্জনা জমে থাকতো, সেগুলি ডাস্টবিনে ফেলা হতো। এবং নিয়মিতভাবেই সেই ডাস্টবিন গুলো পরিষ্কার করা হতো।। ডাস্টবিনের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন নর্দমার সঙ্গে যুক্ত থাকতো বিভিন্ন ম্যানহোল।। সেসব ম্যানহোলের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন জায়গায় নোংরা আবর্জনা জল অন্য কোথাও বেরিয়ে যেত।।

নগরদুর্গ :    হরপ্পা সভ্যতার মহেঞ্জোদারোতে 40 ফুট উঁচু একটি ভিভির উপর একটি দুর্গের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে যদি ছিল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।। ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে সেসব দুগ ব্যবহার করত শাসক শ্রেণীর লোকজনেরা।। অনেকে আবার এটাও মনে করেন যে সেসব দুর্গে মাধ্যমে নগরের  নিরাপত্তার দিকটি দেখা হত।।

উপসংহার :   হরপ্পা সভ্যতা একটিপ্রাচীন সভ্যতা হলেও এই সভ্যতার নগর পরিকল্পনা ছিল অন্যান্য যে কোন প্রাচীন সভ্যতা থেকে যথেষ্ট পরিমাণে উন্নত এবং আধুনিক।।। হরপ্পা সভ্যতার পরিচালক শাসন ব্যবস্থা এবং সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনা হরপ্পা সভ্যতায় সাধারন থেকে উচ্চবিত্ত মানুষদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন প্রদান করতে সক্ষম হয়েছিল।।


3- হরপ্পা সভ্যতার প্রাচীনত্ব নির্ণয় করো। হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্র গুলির বিবরণ দাও

✅উওর :

ভূমিকা : অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতা গুলির মধ্যে হরপ্পা সভ্যতা হলো একটি অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা।। হরপ্পা সভ্যতার সূচনা এবং এর অবলুপ্তি আজ থেকে কত বছর আগে হয়েছিল তার নির্দিষ্ট কোন সময় নির্ধারণ করা যায়নি।।  তবে আনুমানিকভাবে এর সূচনা হল ও অবলুপ্তির কাল নির্ধারণ করা হয়।।

হরপ্পা সভ্যতার সূচনা কাল::   বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মধ্যে ডক্টর ফ্যারি, জে. গ্যাড প্রমুখ ঐতিহাসিক হরপ্পা সভ্যতার সূচনা কাল হিসেবে 3000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 2000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ  সময়কে চিহ্নিত করেন।। অন্যদিকে মর্টিমার হুইলার হরপ্পা সভ্যতার সূচনা হিসেবে খ্রিস্টপূর্ব 2500 অব্দকে চিহ্নিত করেন।।

হরপ্পা সভ্যতা সূচনা কাল নিয়ে বেশকিছু ভারতীয় ঐতিহাসিক,  গবেষক - যেমন রমেশচন্দ্র মজুমদার,  হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী ও কালী শঙ্কর দত্ত হরপ্পা সভ্যতা সূচনা কাল হিসেবে 3500 খ্রিস্টপূর্বাব্দ সময় কালকে করেন।।

হরপ্পা সভ্যতা সূচনা কাল নিয়ে স্যার জন মার্শাল মত দিয়েছেন যে হরপ্পা সভ্যতা থেকে যেসব সিলমোহর পাওয়া গিয়েছে তা থেকে বোঝা যায় যে হরপ্পা সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল 3200 খ্রিস্টপূর্বাব্দ সময় থেকে থেকে 2750 খ্রিস্টপূর্বাব্দ সময়কালের মধ্যে।।

এরকম ভাবে নানা ঐতিহাসিক এবং গবেষকদের নানা রকম  মতামত থেকে নির্দিষ্ট একটি সময় কালকে হরপ্পা সভ্যতার সূচনা কাল হিসেবে 3000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ সময়টিকে হরপ্পা সভ্যতার সূচনা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।।

হরপ্পা সভ্যতার অবলুপ্তির কারণ :   যেমনভাবে হরপ্পা সভ্যতার সূচনা কালের কোন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।। ঠিক একইভাবে ঠিক কবে হরপ্পা সভ্যতার অবলুপি ঘটেছিল সেটারও কোন নির্দিষ্ট সময়ে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।।। তবে ডক্টর মর্টিমার হুইলার মনে করেন যে - পনেরশো খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ যখন আর্য প্রজাতি হরপ্পা সভ্যতা আক্রমণ করেছিল, তখন সেই আর্য প্রজাতির আক্রমণের পরেই হরপ্পা সভ্যতার অবলুপ্তি ঘটেছিল।

হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন প্রধান কেন্দ্র সমূহ : প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতা ছিল বহুদূর বিস্তৃত একটি বিরাট অঞ্চল নিয়ে গঠিত  সভ্যতা।। হরপ্পা সভ্যতায় অন্তত 1500 টি কেন্দ্র ছিল।। তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি কেন্দ্র হল হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, কালিবঙ্গান, লোথাল রুপার প্রভৃতি।

হরপ্পা : হরপ্পা সভ্যতার মধ্যে একটি ছিল পাঞ্জাবের রাভি বা ইরাবতী নদীর তীরে অবস্থিত।। 1921 খ্রিস্টাব্দে হরপ্পা সভ্যতা হরপ্পা কেন্দ্রটি আবিষ্কৃত হয়।

মহেন- জো - দারো :  সিন্ধু নদীর তীরে অবস্থিত নগরটি ছিল মহেন- জো - দারো।। মহেন- জো - দারো নগরটি 1922 খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃত হয়েছিল।

কালিবঙ্গান :: 1953 খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার কামিংহাম দ্বারা আবিষ্কৃত ঘর্ঘরা নদীর তীরে অবস্থিত কেন্দ্রটির নাম ছিল কালিবঙ্গান।

রুপার  : কালিবঙ্গান আবিষ্কারের একই বছরে পাঞ্জাবের শতদ্রু নদীর তীরে হরপ্পা সভ্যতার আরও একটি প্রধান কেন্দ্র আবিষ্কার হয় যার নাম রুপার।

লোথাল:   হরপ্পা সভ্যতার একটি প্রধান কেন্দ্র হল হল লোথাল।। এটি গুজরাটের ভোগাবর নদীর তীরে অবস্থিত ছিল।। সে সময় এটি সিন্ধু সভ্যতার একটি সামুদ্রিক বন্দর হিসেবে কাজ করত।। এবং এটি আবিষ্কার করা হয়েছিল 1954 খ্রিস্টাব্দে।

উপরের পাঁচটি কেন্দ্র ছাড়াও হরপ্পা সভ্যতার আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রধান কেন্দ্র গুলির মধ্যে ছিল সুতকাজেনদোর, দাবারকোট, কোটডিজি, চানহুদারো,  রাখিগড়ি, রংপুর, ধোলাবিরা ও আলমগিরপুর প্রভৃতি।


4- প্রাচীন মিশরের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে কি জানো?? মিশরের বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চার অগ্রগতির পরিচয় দাও।

✅উওর :
মিশরের মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা : মিশর ছিল একটি মাতৃতান্ত্রিক দেশ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ বা অন্যান্য সম্প্রদায়ের যেমন সমাজে পুরুষকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হত। মিশরের ঠিক তার উল্টো কাজটা হতো।। সমাজের সমস্ত ক্ষমতা ছিল নারীদের হাতে।  আর নারীদের হাতে এত ক্ষমতা থাকার জন্যই পৃথিবীর প্রথম মহিলা শাসক হিসেবে ছিলেন হাটাসু ছিলেন মিশরের প্রথম শাসক।।

মিশরের শাসকশ্রেণী :  মিশরী সমাজে মাতৃতান্ত্রিক হলেও এখানে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে মিশরের সভ্যতাকে শাসন করা হতো। মিশরের সমস্ত সমাজব্যবস্থা এখানকার ফ্যারাওদের হাতে থাকতো।। মিশরের ফ্যারাওদের হাতেই  সমাজের আইন শাসন ও বিচার ব্যবস্থা ইত্যাদি হাতে থাকতো।। সাধারণ মানুষ মনে করতেন যে মিশরের ফ্যারাওদের  হাতেই সমস্ত শক্তি আছে এবং ফ্যারাও রাই প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।। যেমন সূর্যের উদয় হওয়া, ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক  বিভিন্ন কার্যকলাপ তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।।এজন্য সমাজে ফ্যারাওদের একটি বিশিষ্ট ভাবে জায়গা দেওয়া হতো 

ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ : মিশরীয় সমাজব্যবস্থায় ধনী - দরিদ্রের ভেদাভেদ খুবই তীব্রভাবে দেখা যেত। মিশরীয় ফ্যারাও,  বিভিন্ন বণিক, বিভিন্ন শিল্প কর্মী,  ক্রীতদাস  বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ তাদের নিজের মতন করে নিজস্ব জীবন যাপন করতেন। কিন্তু সেটা তাদের নিজস্ব ক্ষেত্রে ছিল।। সমাজের প্রত্যেকের জন্যই সমাজ পৃথক হতো।। এবং প্রত্যেকটি আলাদা সমাজে নিজ নিজ এলাকার সর্বময় কর্তা তাদের নিজস্ব সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতো।

শোষক ও শোষিত মানুষ  :   অন্যান্য যে কোন সমাজের মতো মিশরীয় সমাজেও ন্যায়-অন্যায় জিনিসটি ছিল। কিন্তু মিশরীয় সমাজের ক্ষেত্রে ন্যায় এর তুলনায় অন্যায় জিনিসটি বেশি ছিল। সমাজের উচ্চবিত্ত ব্যক্তিরা সমাজের সাধারণ শ্রেণীর মানুষদের বিভিন্ন শোষণ কর‍তো।। সমাজের উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ফ্যারাও, পুরোহিত, আঞ্চলিক প্রশাসক রাজকর্মচারী,  কারারক্ষকদের দ্বারা সমাজের নিম্ন শ্রেণীর মানুষ গুলোকে অর্থাৎ কৃষক,  কারিগর, ক্রীতদাসরা খুব বাজেভাবে শোষিত হতো।।

সমাজে ক্রীতদাসদের অবস্থা :    মিশরে প্রাক রাজবংশীয় যুগেই ক্রীতদাস প্রথা বা দাসপ্রথার শুরু হয়েছিল। ক্রীতদাসরা ছিলেন এমন মানুষ যাতে সমাজে তো দুরের কথা! তাদের নিজস্ব জীবনেও তাদের কোনো অধিকার ছিল না।। ক্রীতদাসদের সেই মালিকের নিয়ম অনুসারেই বা সে মানিকের ইচ্ছে মতোই চলতে হতো, যেই মালিক সেই ক্রীতদাসকে কিনে নিয়েছে।। মিশরীয় সভ্যতায় সবচেয়ে খারাপ ছিল এই ক্রীতদাস প্রথা।। কারণ এই  ক্রীতদাসরাই ছিল সমাজের সবচাইতে বেশি শোষিত হওয়া মানুষ।

মিশরের বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চা :

মিসরীয় সভ্যতায়  বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চা ছিল খুবই উন্নত। মিশরের বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে মিশরীয়রা গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুবই উন্নতি করেছিল।।

গণিত শাস্ত্র  : প্রাচীন মিশরেই পাটি গণিত ও জ্যামিতি উদ্ভব ঘটেছিল বলে অনেকে মনে করে। সে দেশের মানুষ যোগ, বিয়োগ, গুন ভাগ করার পদ্ধতি, দশমিকের ব্যবহার, ক্ষেত্রফল ঘনফল নির্ণয়ের পদ্ধতি খুবই সহজ ভাবে জানতো।।

জ্যোতির্বিদ্যা:  গণিত শাস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে মিশরীয়রা জ্যোতির্বিদ্যায় ও খুবই পারদর্শী ছিল। অন্যান্য সংস্কৃতির মত মিশরীয় সংস্কৃতিতেও জ্যোতির্বিদ্যায় কাজ ছিল পুরোহিতদের।।

চিকিৎসা বিদ্যা : মিশরীয়রা চিকিৎসাবিদ্যা ছিল খুবই আধুনিক।। মিশরীয়রা বিভিন্ন গাছপালা থেকে বিভিন্ন রকম ওষুধ তৈরি করত।।  এবং এছাড়াও মিশরীয় ব্রোঞ্জ থেকে বিভিন্ন শল্য চিকিৎসার যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হয়েছিল।। মিশরীয়রা চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে শরীর বিদ্যার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছিল এবং অ্যানাটমিতে এত উন্নত হওয়ার জন্যই মিশরের মমি বছরের-পর-বছর অক্ষত অবস্থায় থাকতো।।

মিশরে সাহিত্য :  প্রাচীন মিশরীয়রা অন্যান্য দিক গুলির  মত সাহিত্যের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি ঘটিয়েছিল।  মিশরীয় যা প্রধানত গদ্য সাহিত্য কাব্যচর্চা রচনা করতো। মিশরের এরকম রচনা গুলির মধ্যে পঞ্চম ও ষষ্ঠ রাজবংশের কথা তাদের লিপিতে পাওয়া যায়।।  মিশরীয় সাহিত্যের ক্ষেত্রে মিশরীয়দের ধর্মীয় সাহিত্য মৃতের পুস্তক নামে অভিহিত নিদর্শনগুলি মিশরের একটি উল্লেখযোগ্য ধর্ম সাহিত্য।।  মিশরের এছাড়াও অন্যান্য সাহিত্য গুলির মধ্যে ইখনাটন এর রাজকীয় স্তুতি, মেমফাইট ড্রামা প্রভৃতি মিশরীয় সাহিত্যের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।।

5- বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার উৎকর্ষের পরিচয় দাও।। প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল??

উওর:

সুমেরীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি উৎকর্ষ  :    সুমেরীয় সভ্যতার মানুষেরা শিক্ষা-সংস্কৃতির অগ্রগতি ঘটিয়েছিল। অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার তুলনায় সুমেরীয় সভ্যতার যেসব নিদর্শন পাওয়া যায়  তা থেকেই সুমেরীয় সভ্যতার শিক্ষা ও সংস্কৃতির অগ্রগতি সম্পর্কে বোঝা যায়।

চিত্রলিপি:      অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতা গুলির মধ্যে লিপির ব্যবহার ঠিক ততোটাও আধুনিক ছিল না! যতটা আধুনিক ছিল সুমেরীয় সভ্যতার মানুষদের কাছে।  বিভিন্ন ঐতিহাসিকরা মনে করেন সর্বপ্রথম সুমেরীয়রাই লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছিল। প্রথমদিকে সুমেরীয়রা যেসব লিপি আবিষ্কার করেছিল সেসব লিপি হত কোন চিত্রের ওপর।। প্রথমদিকে তারা বিভিন্ন ছবি এঁকে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করত।। এবং ছবির মাধ্যমে বিদ্যার বা মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে  চিত্র লিপি পিকটোগ্রাফি বলা হত। 

কিউনিফর্ম লিপি :      প্রথমদিকে সুমেরীয়রা যে চিত্রলিপি বা পিকটোগ্রাফি তৈরি করত তার মাধ্যমে তাদের সম্পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশ করা সম্ভব হতো না।। এজন্য সুমেরীওরা কিউনিফর্ম লিপির আবিষ্কার হয়েছিল। সুমেরীয় ভেজা মাটি প্লেটের আকারে বানিয়ে নিতে তারপর সেই ভেজা মাটির উপর তারা কোনো কিছু দিয়ে তার ওপর লিখতো।। এরপর সেই ভেজা মাটির উপর লেখা লিপি আগুনে পুড়িয়ে বা রোদের শুকিতে শক্ত করে নেওয়া হতো।। এবং এভাবে তৈরি করা হতো কিউনিফর্ম লিপি।

গ্রন্থাগার :     অনেক ঐতিহাসিক এবং গবেষক মনে করেন যে প্রাচীন সুমেরীয়রা তাদের বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদানের জন্য কিউনিফর্ম লিপির ব্যবহার করতো।। এবং এই সব কিউনিফর্ম লিপি ভালোভাবে সংরক্ষণ করে রাখার জন্য তারা বিভিন্ন গ্রন্থাগারের স্থাপন করেছিল। সুমেরের একটি প্রাচীন শহরের একটি মন্দিরে যখন খনন করা  হয় তখন সেখানে একটি প্রাচীন গ্রন্থাগার এর সন্ধান পাওয়া যায।। যেখানে হাজার বছর পুরনো বহু কিউনিফর্ম লিপি পাওয়া গিয়েছিল।।

স্থাপত্য ও চিত্রকলা  :    বাকি অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতা গুলির মতোই সুমেরীয় সভ্যতাতেও বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপত্য দেখা যায়।। সুমেরীয়রা আগুনে পোড়ানো  বা রোদে শুকানো মাটির ইটকে ব্যবহার করে তারা যেমন নিজেদের বাড়িঘর তৈরি করত ঠিক একই ভাবে তাদের উপাস্য দেবতাদের জন্য এক প্রকার বিশেষ ধরনের কৃত্রিম পাহাড় বা মিনার তৈরি করত। সেসব সুউচ্চ পাহাড় গুলিকে বা মন্দির গুলিকে জিগুরাত  বলা হত।। জিগুরাত কথার অর্থ হল  স্বর্গের পাহাড়।।

বিজ্ঞানের অগ্রগতি  :   সুমেরীয় রা অন্যান্য দিক গুলি সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানের দিকেও যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছিল।।  বিজ্ঞানে ক্ষেত্রে সুমেরীওরা গণিতশাস্ত্র,  জ্যোতির্বিদ্যা এবং চিকিৎসা বিদ্যার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছিল। তারা গণিত শাস্ত্রে বিভিন্ন গাণিতিক সংখ্যা ব্যবহার করা, যোগ, বিয়োগ, গুন ভাগ, বর্গমূল ঘনমূল নির্ণয় ইত্যাদি গাণিতিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিল।। জ্যোতির্বিদ্যায় তারা চন্দ্র মাসের প্রচলন করেছিল।। এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে তারা নিজেদের তৈরি বিভিন্ন ওষুধ-পত্রই তারা তাদের  বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করত।।

এছাড়াও উপরের তথ্যগুলো ছাড়াও সুমেরীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তাদের শিল্প যেমন মৃৎশিল্প, বস্ত্র শিল্প,ধাত্য শিল্প ছিল যথেষ্ট পরিমাণে ভালো।। সুমেরীয়দের সমাজ ব্যবস্থা এবং আইন-কানুন ব্যবস্থাও ছিল অন্যান্য দিকগুলোর মতোই যথেষ্ট ভালো।।


6- প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল?

উওর: সুমেরীয় সভ্যতার মানুষদের জীবনযাত্রা প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা থেকে অনেকটাই উন্নত মানের ছিল।। কারণ সুমেরীয় সভ্যতার অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং পারদর্শিতায় পরিচয় দেখিয়েছিল।।

সুমেরীয় সভ্যতার কৃষি : ইউফ্রেটিস এবং টাইগ্রিস নদীর তীরে গড়ে ওঠা সুমেরীয় সভ্যতার মানুষদের একটি প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকাজ করা।। সুমেরীয় সভ্যতার মানুষেরা ইউফ্রেটিস এবং টাইগ্রিস নদীর তীরবর্তী উর্বর মাটিতে বিভিন্ন চাষাবাদ করে বিভিন্ন রকমের ফসল ফলাতো।। এবং সেখানে উৎপাদিত ফসল থেকে তাদের সাধারণ জীবনযাপন খুব ভালো ভাবেই কেটে যেত।।

পশুপালন :   বাকি অন্যান্য সভ্যতা গুলির মত সুমেরীয় সভ্যতার পশুপালনের দিকটি ছিল।। কৃষিক্ষেত্রের প্রয়োজনে বা পশুপালন থেকে অন্যান্য উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সুমেরীয়রা গরু,  ছাগল,  ভেড়া ও অন্যান্য পশু পালন করতে শুরু করেছিল।।
পশু পালনের ফলে তারা সেই সব পশুর নিজের কৃষি ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন পশু থেকে লোম সংগ্রহ, খাদ্য সংগ্রহ, তাদের চামড়া ইত্যাদি সংগ্রহ করত।

বাণিজ্য :    সুমেরীয়রা তাদের অর্থনৈতিক দিক থেকে আারো উন্নতি লাভের জন্য তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের পথে পা বাড়িয়েছিল।  সুমেরীয়রা স্থল ও জলপথের মাধ্যমে দেশে এবং বিদেশে তাদের নিজস্ব জমিতে উৎপাদিত ধান গম যব ও অন্যান্য ফল, ফুল,  পশম বস্ত্র, কার্পেট অলংকার ইত্যাদি নানান জিনিসের বাণিজ্য শুরু হয়েছিল।। প্রথমদিকে এসব ব্যবসার মধমাধ্যম ছিল খাদ্য সম্পদ।। আমি কিন্তু পরবর্তীকালে এসব ব্যবসার কাজে রুপার মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়েছিল।।

জীবন বৃক্ষ :  সুমেরীয়দের জীবনযাত্রার সঙ্গে জীবন বৃক্ষ অর্থাৎ খেজুর গাছের দিকটি বিশেষ ভাবে জড়িয়ে আছে। সুমেরু অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে খেজুর গাছ জন্মাত তার সঙ্গে তারা তাদের নিজেদের বাড়িঘর বা বসতি অঞ্চলেও প্রচুর পরিমাণে খেজুর গাছ লাগাতো।। সেসব খেজুর গাছ থেকে তারা খেজুর গাছের রস, খেজুরের ফল এবং খেজুরের রস থেকে তৈরি সুমিষ্ট গুড় পেত।।। এছাড়াও খেজুর গাছের সমস্ত রস থেকে তাড়ি জাতীয় এক ধরনের বিশেষ মাদক তৈরি করা হত।। এজন্যই তারা খেজুর গাছকে জীবন বৃক্ষ বলতো।

ধর্মবিশ্বাস :  বেশিরভাগ প্রাচীন সভ্যতা গুলিতেই ধর্মের একটি বিশেষ গুরুত্ব দেখা যায়।। প্রাচীন সুমেরীয় আদিবাসীদের কাছেও ধর্মের ঠিক একই  জায়গা বা গুরুত্ব ছিল।।  প্রাচীন সুমেরীয় রাত প্রকৃতির বিভিন্ন দিক গুলোর  জন্য তারা বিভিন্ন আলাদা আলাদা দেবতার পূজা করতো।। সুমেরীয়দের কাছে সমুদ্র ও মাতৃ দেবতা হলেন নাম্মা। আকাশের দেবতা ছিল আন বা  আনু।। জলের দেবতা ছিলেন এনকি।। এবং বাতাসের দেবতা হলেন এনলিস।।  এসব দেব- দেবীর আরাধনা করার জন্য সমেরীয়রা একপ্রকার মন্দিরের নির্মাণ করতেন যা ছিল বেশ উঁচু।। সুমেরীয়দের দেবদেবীর আরাধনার জন্য তৈরি মন্দিরগুলিতে জিগুরাত বলা হয়।। যার অর্থ হলো স্বর্গের পাহাড়।।

পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top