ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের অবদান কী ছিল?| ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা কী ছিল
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের অবদান! |
- ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের অবদান -
✅- উওর=
ভূমিকা:- ভারতে খ্রিস্টান মিশনারীরা প্রধানত খ্রিস্টধর্ম প্রচার এর জন্য এসেছিলেন।। এদেশের লোকেরা যাতে খ্রিস্টধর্মের পবিত্র গ্রন্থ বাইবেল পড়তে পারে, সেজন্য খ্রিস্টান মিশনারীরা বহু আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে।।
-ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভুমিকা ছিল -
⚫- শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগ-
-
- 1800 খ্রিস্টাব্দে উয়িলিয়াম কেরি,জোশুয়া মার্শম্যান, এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড এর উদ্যোগে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
- এই শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের জন্য, 126 টি বিদ্যালয় স্থাপন করে।।।
⚫ শ্রীরামপুর কলেজ -
উইলিয়াম কেরি নামে একজন ব্যাপটিস্ট মিশনারী, জোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড সহযোগিতায় শ্রীরামপুরে- " শ্রীরামপুর মিশন "- নামের ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।। পরবর্তীকালে এই বিদ্যালয়টি - " শ্রীরামপুর কলেজ"- এ পরিণত হয়।।
⚫-লন্ডন মিশনারীদের উদ্যোগ-
লন্ডন মিশনারির সদস্য রবার্ট মে - 1814, খ্রিস্টাব্দে চুঁচুড়ায় একটি ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।। এবং পরবর্তীকালে তিনি আরও 36 ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করেন।। - চার্চ মিশনারি সোসাইটি ছিল এরকম একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।।।
⚫- উচ্চশিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারীদের
ভূমিকা-
শ্রীরামপুর মিশনারীরা 1818 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন - শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন কলেজ "- 1819 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিশপস্ কলেজ।। তবে স্কটিশ মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফ কলকাতার আসার পর মিশনারীদের প্রচেষ্টায় ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে এক নতুন গতি আসে ।। তিনি 1830 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ফিরিঙ্গি কমল বোসের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন- " জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইন্সটিটিউশন " - নামের ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।। পরবর্তীকালে এটি স্কটিশচার্চ কলেজ নামে পরিণত হয়।। এছাড়াও 1835 খ্রিস্টাব্দে জেসুইট মিশনারীরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ।।
⚫উপসংহার: -
- সবশেষ বলা যায় যে ভারতে খ্রিস্টান মিশনারীরা তাদের খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতে এলেও, তারা ভারতীয়দের নৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছিলেন।।এবং এই বিষয়টি অনুধাবন করার পরেই তারা ভারতে বিভিন্ন পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক বিদ্যালয় এবং কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।। এবং খ্রিস্টান মিশনারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভারতের বহু ছাত্রছাত্রীরা আধুনিক শিক্ষালাভের সুযোগ পেয়েছিল।। এবং এভাবেই ভারতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারীদের বিশেষ ভূমিকা রয়েগেছে।।
প্রাচ্য পাশ্চাত্য বিতর্ক কী | প্রাচ্য পাশ্চাত্য বিষয়ক দ্বন্দ্ব কী | প্রাচ্য পাশ্চাত্য বিষয়ক দ্বন্দ্ব কাকে বলে | প্রাচ্য পাশ্চাত্য বিতর্ক কাকে বলে?
অথবা,
টীকা লেখো : - প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বিতর্ক।।
- প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বিষয়ক দ্বন্দ্ব-
✅উওর=
⚫ভূমিকা : 1810 খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল মিন্টো ভারতীয়দের শিক্ষার শোচনীয় অবস্থার কথা একটি রিপোর্টে তুলে ধরেন, এবং কোম্পানির কাছে ভারতীয় শিক্ষার উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তার আবেদন করেন।। গভর্নর-জেনারেল মিন্টোর সাথে সাথে খ্রিস্টান মিশনারীরা ভারত ও ইংল্যান্ডে কোম্পানির শিক্ষানীতির তীব্র সমালোচনা করেছিল, যার ফলে সরকার 1813 খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন পাস করে এবং এই কথা ঘোষণা করে যে এখন থেকে সরকার ভারতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতি বছর 1 লক্ষ টাকা ব্যয় করবে।। কিন্তু এই টাকা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য শিক্ষা পদ্ধতিতে বা প্রসারে খরচ করা হবে সে সম্পর্কে আঠারোশো কুড়ি দশকে একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল যা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব বা প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক নামে পরিচিত।।
⚫- প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বিতর্কের সৃষ্টি -
1823 খ্রিস্টাব্দে গঠিত কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন বা জনশিক্ষা কমিটির সদস্যরা মূলত এই বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় যে,, চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইনের এক লক্ষ টাকা ভারতের কোন ধরনের শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে!! অর্থাৎ সরকার যে এক লক্ষ টাকা ভারতের শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় করবে সেটা কি ভারতে প্রাচ্য শিক্ষা পদ্ধতিতে ব্যয় করা হবে নাকি আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা পদ্ধতিতে ব্যয় করা হবে।। এবং এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে প্রাচ্যবাদী অর্থাৎ ওরিয়েন্টালিস্ট এবং পাশ্চাত্যবাদী বা অ্যাংলিসিস্টদের মধ্যে একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয় যা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বিতর্ক! বা প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব নামে পরিচিত।।
⚫ -বিতর্কের অবসান: -
যখন প্রাচ্যবাদী অর্থাৎ ওরিয়েন্টালিস্ট, এবং পাশ্চাত্যবাদী অথবা অ্যাংলিসিস্টদের মধ্যে, এই বিতর্ক খুব বড় আকার ধারণ করে, তখন কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন এর সভাপতি এবং লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং এর আইন সচিব টমাস বেবিংটন মেকলে 1835 সালের 2 ফেব্রুয়ারি তার একটি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন!, যা মেকলে মিনিট নামে পরিচিত।। এবং এই মিনিট বা প্রতিবেদনে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষে মত ব্যক্ত করেন।। এবং আইন সভায় এই বিতর্ক বহু তর্ক বিতর্ক শুরু হয়েছিল।। কিন্তু অবশেষে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক টমাস ব্যাবিংটন মেকলের প্রতিবেদন এর গুরুত্ব দেন।। এবং এভাবেই প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে।।।
⚫- সরকারি শিক্ষানীতি :-
-
- কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন এর সভাপতি এবং লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং এর আইন সচিব টমাস বেবিংটন মেকলের - মেকলে মিনিট বা তা প্রতিবেদন কি গুরুত্ব দিয়ে 1835 খ্রিষ্টাব্দের 7 ই মার্চ ভারতীয় শিক্ষার উন্নয়নে পাশ্চাত্য শিক্ষা কে সরকারি নীতি হিসেবে ঘোষণা করেন।।
⚫ উপসংহার :- 1813 খ্রিস্টাব্দে হাত ধরে ভারতের প্রথম শিক্ষার উন্নয়ন ভাবনাটি উঠে আসে।। এবং 1823 খ্রিস্টাব্দের কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন এর পরের ভারতে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব শুরু হয়।। এবং সবশেষে টমাস বেবিংটন মেকলে মিনিট মেকলে প্রতিবেদন এর হাত ধরে ভারতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার কে সরকারি নীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।। যার ফলে ভারতের বাংলা প্রদেশে সহ অন্যান্য প্রদেশগুলিতেও আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটে।।
-পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।