রাস্ট্র সংজ্ঞা বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি বিষয়ক বিভিন্ন মতবাদ অধায়ের প্রশ্ন উওর | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর

0

 রাস্ট্র সংজ্ঞা বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি বিষয়ক বিভিন্ন মতবাদ অধায়ের প্রশ্ন উওর | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উওর
রাষ্ট্রবিজ্ঞান একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উওর


আজকের এই পোস্টে থাকছে, একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় - " রাস্ট্র সংজ্ঞা বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি বিষয়ক বিভিন্ন মতবাদ " অধায়ের প্রশ্ন উওর। রাষ্ট্রবিজ্ঞান একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উওর হিসেবে এটি প্রথম পর্বএর পরবর্তী পোস্টে

রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর class 11 দ্বিতীয় অধ্যায় এর বাকি প্রশ্ন উওর গুলো শেয়ার করা হবে।। আজকের এই পোস্টে রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর class 11 দ্বিতীয় অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন উওর থাকবে। পরবর্তীকালের পোস্টে class 11 political science question and answer হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর class 11 দ্বিতীয় অধ্যায়ের বাকি প্রশ্ন উওর গুলো থাকবে। 

Tags : class 11 political science question and answer | Political Science Class 11 important questions with answers | class 11 political science chapter 2 question answer | Political Science Question and Answer in Bengali Class 11


1 - সর্বপ্রথম বৃহদায়তন রাষ্ট্রের কথা কে বা কারা বলেছিলেন? রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংজ্ঞা লেখো।

উওর : সর্বপ্রথম বৃহদায়তন রাষ্ট্রের কথা "টিউটনরাই" বলেছিলেন।


রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংজ্ঞা :

• আধুনিক রাষ্ট্র সম্পর্কে বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।  আধুনিক রাষ্ট্র সম্পর্কে প্রায় 145 টির বেশি সংজ্ঞা রয়েছে। সেই 145 টি সংজ্ঞার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা  নিচে আলোচনা করা হলো।

⚫ - অ্যারিস্টটল প্রদত্ত রাষ্ট্রের সংজ্ঞা : অ্যারিস্টোটল প্রদও রাষ্টের সজ্ঞাটি হল-  "স্বাবলম্বী ও পরিপূর্ণ জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে সংগঠিত কয়েকটি পরিবার ও গ্রামের সমষ্টিই হল "রাষ্ট্র"। 

⚫ - সিসেরো প্রদও রাষ্ট্রের সংজ্ঞ  : রোমান দার্শনিক সিসেরোর মতে রাষ্ট্র বলতে বোঝায় এমন এক সমাজ কে  - যেই সমাজের বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ অধিকারবোধ ও পারস্পরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুযোগ সুবিধা আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়।

⚫ - বোঁদা কর্তৃক রাষ্ট্রের প্রদত্ত সংজ্ঞা : বোঁদা কর্তৃক রাষ্ট্রের প্রদত্ত সংজ্ঞাটি হলো - " রাষ্ট্র হল পরিবারও ধনসম্পত্তির এমন একটি মিলিত সংগঠন, যা চূড়ান্ত ক্ষমতা ও যুক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

⚫ -  বার্জেস প্রদও রাষ্ট্রের সংজ্ঞা : বার্জেসের মতে রাষ্ট্র হলো- '" কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত জনসমষ্টি। "

⚫- উড্রো উইলসন প্রদও রাষ্ট্রের সংজ্ঞা : উইড্রো উইলসন- " কোনো নির্দিষ্ট ভূখন্ডে আইন প্রণয়নের জন্য সংগঠিত জনসমষ্টিকে " রাষ্ট্র " বলে সজ্ঞায়িত করেছেন।

⚫- রাষ্ট্রের ম্যাক আইভার প্রদত্ত সজ্ঞা :  

সমাজতত্ত্ববিদ ম্যাক আইভারের মতে রাষ্ট্র হল এমন একটি সংঘ যা বল প্রয়োগের অধিকারী সরকার কতৃক প্রণীত আইনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলে নির্দিষ্ট কোনো জনসমাজের সামাজিক শৃঙ্খলা ও বাহ্যিক অবস্থা বজায় রাখে।

⚫- হ্যারল্ড লাস্কি প্রদ্ব রাষ্ট্রের সংজ্ঞা ; অধ্যাপক হ্যারল্ড লাস্কি রাষ্ট্র বলতে এমন এক ভৌগোলিক সমাজকে বুঝিয়েছেন, যা শাসক এবং শাষিতের মধ্যে বিভক্ত।  এবং যেখানে শাসক তার নির্দিষ্ট স্বাভাবিক সীমারেখার মধ্যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান উপর আধিপত্য দাবী করে।


2 -  সর্বপ্রথম আধুনিক অর্থে রাষ্ট্র কথাটি কে ব্যবহার করেছিলেন? ল্যাস্কি, বার্কার ও গার্নার প্রদত্ত রাষ্ট্রের সংজ্ঞা গুলি আলোচনা করো।  রাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যা জানো তা লেখো।


উওর : আধুনিক অর্থে সর্বপ্রথম " নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি " তার " দ্য প্রিন্স " গ্রন্থে রাষ্ট্র কথাটি ব্যবহার করেছিলেন।

⚫- হ্যারল্ড লাস্কি প্রদত্ত রাষ্ট্রের সংজ্ঞা : অধ্যাপক হ্যারল্ড লাস্কি রাষ্ট্র বলতে এমন এক ভৌগোলিক সমাজকে বুঝিয়েছেন, যা শাসক এবং শাষিতের মধ্যে বিভক্ত।  এবং যেখানে শাসক তার নির্দিষ্ট স্বাভাবিক সীমারেখার মধ্যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান উপর আধিপত্য দাবী করে।

⚫- আর্নেস্ট বার্কার প্রদত্ত রাষ্ট্রের সংজ্ঞা : আর্নেস্ট বার্কার রাষ্ট্র বলতে এক বিশেষ ধরনের সংগঠনকে বোঝাতে চেয়েছেন, যা বাধ্যতামূলক আইন ব্যবস্থা সংরক্ষণের বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের নিয়োজিত এবং যা প্রচলিত প্রথা ও প্রয়োগযোগ্য আইনের মাধ্যমে তার কার্যাবলী পরিচালনা করে।।।

⚫ -  গার্নার প্রদত্ত রাষ্ট্রের সংজ্ঞা : গার্নার প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসারে - যখন কোনো একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে অতিবৃহৎ বা নাতিবৃহৎ জনগণ স্থায়ীভাবে বসবাস করে এমন একটি সুগঠিত সরকারের প্রতিষ্ঠা করে,যা প্রায় বা সম্পূর্ণ ভাবে বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণমুক্ত। এবং সেই ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনগণ সেই সরকারের প্রতি স্বাভাবিক আনুগত্য প্রদর্শন করে, তাকেই রাষ্ট্র বলা হয়।

⚫  - রাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা। কোনো সংগঠনের যদি নির্দিষ্ট জনসংখ্যা, নির্দিষ্ট ভূখন্ড এবং সরকার থাকা সত্বেও   যদি সেই নির্দিষ্ট সংগঠনের কোনো সার্বভৌমিক ক্ষমতা না থাকে তাহলে তাকে রাষ্ট্র বলে অভিহিত করা যায় না। সুতরাং রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সার্বভৌমিকতা হলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক গেটেল সার্বভৌমিকতার ধারণাকে " আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি " বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে সরকারকে যদি রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক বলে মনে করা হয়, তাহলে সার্বভৌমিকতাকে রাষ্ট্রের প্রাণ বলে চিহ্নিত করা যুক্তিযুক্ত।


3 - রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উওর : রাষ্ট্র সম্পর্কে ধ্যাপক গার্নার একটি  গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা দিয়েছিলেন যার মধ্যে আমরা রাষ্ট্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারি যেমন- রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূখন্ড, রাষ্ট্রের জনসমষ্ঠি,  রাষ্ট্রের জন্য একটি সুগঠিত সরকার এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা।

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা -

⚫- জনসমষ্ঠি: রাষ্ট্র গঠনের প্রথম উপাদানটি হলো রাষ্ট্রের জনসমষ্টি বা জনগণ। যেহুতু রাষ্ট্র জনগণের কল্যাণ এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যেই গঠিত হয়, সুতরাং জনগণকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রগঠন কখনোই সম্ভব নয়। আধুনিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তিন ধরনের জনগণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গঠন হয়ে।
যথা - ১ - নাগরিক, ২ - বিদেশি এবং ৩ - প্রজা।

• আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিক হলো তারাই-  যাদের রাষ্ট্রে নাগরিক বলে স্বীকৃতি দেওয়া আছে এবং যারা রাষ্ট্র থেকে সকল প্রকার অধিকার ভোগ করে। এবং রাষ্ট্রের প্রতি তারা স্বাভাবিক আনুগত্য প্রদর্শন করে।
•  বিদেশি বলতে তাদের বোঝায় যারা একটি রাষ্ট্রের সদস্য হয়ে অন্য একটি রাষ্ট্রের স্থায়ী ভাবে বা স্থায়ীভাবে বসবাস করে।
•  বিদেশি শক্তি দ্বারা শাসিত রাষ্ট্রের জনগণকে প্রজা বলে অভিহিত করা হয়।

⚫ - নির্দিষ্ট ভূখন্ড : রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূখন্ড বলতে নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমারেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ অঞ্চলকে বোঝায়।  সেইসঙ্গে রাষ্ট্রের অন্তর্গত ভূভাগ,  ভূগর্ভস্থ পদার্থ, নদনদী, আকাশপথ, সমুদ্র উপকূল  প্রকৃতিকেও বোঝায়। যতক্ষণ না পর্যন্ত কোনো জনসমষ্টি কোনো নির্দিষ্ট ভূখন্ডের অন্তর্গত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেখানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে না পারায়, তাকে রাষ্ট্র স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া যায় না।
তাই রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে ভূখণ্ড বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

• কোনো একটি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তার ভূখণ্ডের আয়তন  ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ দুই-ই হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে তার সীমারেখা সবসময়ই সুনির্দিষ্ট হওয়া একান্ত প্রয়োজন।

⚫ - সরকার : রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে সরকার হল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সরকারকে রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক বলে মনে করা হয়।।কারণ,  সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র তার বিমূর্ত রূপকে বাস্তবে পরিণত করে থাকে। অর্থাৎ কার্যক্ষেত্রে রাষ্ট্র বলতে সরকারকেই বোঝায়।

• উইলোবি বলেছেন -" সরকার হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান বা যন্ত্র, যার সাহায্যে রাষ্ট্র তার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে পারে। "
•  অধ্যাপক গার্নারের মতে - " সরকার হল রাষ্ট্রের এমন এক প্রতিনিধি বা যন্ত্র, যার দ্বারা সাধারণ নীতিসমূহ নির্ধারিত, সাধারন বিষয়াদি নিয়ন্ত্রিত এবং জনসাধারণের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। "।
•  বর্তমানে আধুনিক রাষ্ট্রে বিশ্বের সরকারগুলোকে প্রধানত দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।  যথা -
•  ১- বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সরকার এবং  ২- সমাজতান্ত্রিক সরকার।
সুতরাং বলা যায় - রাষ্ট্রের সঠিক ভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকার হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।।

⚫ - সার্বভৌমিকতা : অধ্যাপক গেটেল সার্বভৌমিকতার ধারণাকে আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি বলে বর্ণনা করেছেন। মনে করা হয় যে সরকারকে যদি রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক বলে মনে করা হয়, তবে সার্বভৌমিকতাকে রাষ্ট্রের প্রাণ বলে অভিহিত করাই যুক্তিযুক্ত।।এর পেছনে কারণ হল - কোনো একটি সংগঠনের সুনির্দিষ্ট জনসংখ্যা, নির্দিষ্ট ভূখন্ড এবং একটি সুগঠিত সরকার থাকলেও যদি তার সার্বভৌমিকতা না থাকে, তাহলে তাকে কখনোই ' রাষ্ট্র' বলে অভিহিত করা যায় না।। কারণ সার্বভৌম ক্ষমতার মাধ্যমেই কোনো একটি রাষ্ট্র প্রায় বা সম্পূর্ণ বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকে। অর্থাৎ কোনো সংগঠনের যদি জনগণ, নির্দিষ্ট ভূখন্ড, সরকার এবং সার্বভৌম ক্ষমতা থাকে, তাহলে সেই সংগঠন হবে একটি রাষ্ট্র।। এবং অন্য কোনো রাষ্ট্র তাকে তার ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

• রাষ্ট্র সার্বভৌমিকতা দুই প্রকারের।

  প্রথমত: অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিকতা

▶ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিকতা বলতে সেই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে বোঝায়।

• দ্বিতীয়ত : বাহ্যিক সার্বভৌমিকতা :

▶ বাহ্যিক সার্বভৌমিকতা বলতে কোনো একটি রাষ্ট্রের কোনো বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে প্রায় বা সম্পূর্ণ মুক্ত থাকার ক্ষমতাকে বোঝায়।

সুতরাং বলা যায় যে রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সার্বভৌম ক্ষমতা হলো সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে "  রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব " -  "অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি " এবং জাতীয়তাবাদ কেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব : আধুনিক রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের অনেকেই স্থায়িত্বকেই রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলে মনে করেন।।তাদের মতে যে রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব নেই, তাকে আর যাই হোক ' রাষ্ট্র' বলে অভিহিত করা যায় না। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রই চিরস্থায়ী নয়।  রাষ্ট্রে আজ যে সরকার ক্ষমতায় রয়েছে কাল সেই সরকার ক্ষমতায় নাও থাকতে পারে। সুতরাং রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সম্পর্কে এই মতবাদটিকে মার্কসবাদীরা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন না।

অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ; রাষ্ট্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল - একটি রাষ্ট্রকে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি - " রাষ্ট্র " হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে কি না। যদি কোনো একটি সংগঠনের জনসংখ্যা, নির্দিষ্ট ভূখন্ড, সরকার ও সার্বভৌমিকতা থাকা সত্বেও অন্যান্য রাষ্ট্র - তাকে রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি না দেয় তখন তা আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে 'রাষ্ট্র' বলে বিবেচিত হবে না।  তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অর্জন করা অনেক রাষ্ট্রের পক্ষেই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই অনেকে অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভকে রাষ্ট্রের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য বলে মেনে নিতে সম্মত নন।।

জাতীয়তাবাদ : অনেকে মনে করেন যে - কোনো একটি রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূখন্ড বসবাসকারী জনগণের মধ্যে যদি জাতীয়তাবাদ না থাকে, তাহলে কখনই সেখানে রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে না। কিন্তু বিশ্বায়নের যুগে এরূপ দৃষ্টিভঙ্গি সংকীর্ণতা দোষে দুষ্ট। তাই বিশ্বায়নের প্রবক্তারা এই অভিমতকে ভ্রান্ত বলে মনে করেন।


4 - গার্নার রাষ্ট্রের যে-চারটি বৈশিষ্ট্যকে বিশেষ  গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছিলেন, সেগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।

উওর : রাষ্ট্র সম্পর্কে অধ্যাপক গার্নারের সংজ্ঞার মধ্যে আমরা রাষ্ট্র সম্পর্কে তার উল্লেখ্য চারটি বৈশিষ্ট্যে সম্পর্কে জানতে পারি। 

• রাষ্ট্র সম্পর্কে গার্নারের চিহ্নিত চারটি বৈশিষ্ট্য : -
• রাষ্ট্র সম্পর্কে অধ্যাপক গার্নার তার সংজ্ঞায় ,
• ১ - জনসমষ্টি বা জনগণ, ২ - নির্দিষ্ট ভূখন্ড , ৩ - রাষ্ট্রের সুগঠিত সরকার এবং ৪ - সার্বভৌমিকতার  উল্লেখ করেছেন।

• ⚫- জনসমষ্ঠি: রাষ্ট্র গঠনের প্রথম উপাদানটি হলো রাষ্ট্রের জনসমষ্টি বা জনগণ। যেহুতু রাষ্ট্র জনগণের কল্যাণ এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যেই গঠিত হয়, সুতরাং জনগণকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রগঠন কখনোই সম্ভব নয়। আধুনিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তিন ধরনের জনগণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গঠন হয়ে।
যথা - ১ - নাগরিক, ২ - বিদেশি এবং ৩ - প্রজা।

• আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিক হলো তারাই-  যাদের রাষ্ট্রে নাগরিক বলে স্বীকৃতি দেওয়া আছে এবং যারা রাষ্ট্র থেকে সকল প্রকার অধিকার ভোগ করে। এবং রাষ্ট্রের প্রতি তারা স্বাভাবিক আনুগত্য প্রদর্শন করে।
•  বিদেশি বলতে তাদের বোঝায় যারা একটি রাষ্ট্রের সদস্য হয়ে অন্য একটি রাষ্ট্রের স্থায়ী ভাবে বা স্থায়ীভাবে বসবাস করে।
•  বিদেশি শক্তি দ্বারা শাসিত রাষ্ট্রের জনগণকে প্রজা বলে অভিহিত করা হয়।

⚫ - নির্দিষ্ট ভূখন্ড : রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূখন্ড বলতে নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমারেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ অঞ্চলকে বোঝায়।  সেইসঙ্গে রাজ্যের অন্তর্গত ভূভাগ,  ভূগর্ভস্থ পদার্থ, নদনদী, আকাশপথ, সমুদ্র উপকূল  প্রকৃতিকেও বোঝায়। যতক্ষণ না পর্যন্ত কোনো জনসমষ্টি কোনো নির্দিষ্ট ভূখন্ড অন্তর্গত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেখানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে না পারায়, তাকে রাষ্ট্র স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া যায় না।
তাই রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে ভূখণ্ড বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

• কোনো একটি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তার ভূখণ্ডের আয়তন  ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ দুই-ই হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে তার সীমারেখা সবসময়ই সুনির্দিষ্ট হওয়া একান্ত প্রয়োজন।

⚫ - সরকার : রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে সরকার হল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সরকারকে রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক বলে মনে করা হয়।।কারণ,  সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র তার বিমূর্ত রূপকে বাস্তবে পরিণত করে থাকে। অর্থাৎ কার্যক্ষেত্রে রাষ্ট্র বলতে সরকারকেই বোঝায়।

• উইলোবি বলেছেন -" সরকার হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান বা যন্ত্র, যার সাহায্যে রাষ্ট্র তার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে পারে। "
•  অধ্যাপক গার্নারের মতে - " সরকার হল রাষ্ট্রের এমন এক প্রতিনিধি বা যন্ত্র, যার দ্বারা সাধারণ নীতিসমূহ নির্ধারিত, সাধারন বিষয়াদি নিয়ন্ত্রিত এবং জনসাধারণের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। "।
•  বর্তমানে আধুনিক রাষ্ট্রে বিশ্বের সরকারগুলোকে প্রধানত দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।  যথা -
•  ১- বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সরকার এবং  ২- সমাজতান্ত্রিক সরকার। তাই বলা যায় - রাষ্ট্রের সঠিক ভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকার হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।।

⚫ - সার্বভৌমিকতা : অধ্যাপক গেটেল সার্বভৌমিকতার ধারণাকে আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি বলে বর্ণনা করেছেন। মনে করা হয় যে সরকারকে যদি রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক বলে মনে করা হয়, তবে সার্বভৌমিকতাকে রাষ্ট্রের প্রাণ বলে অভিহিত করাই যুক্তিযুক্ত।।এর পেছনে কারণ হল - কোনো একটি সংগঠনের সুনির্দিষ্ট জনসংখ্যা, নির্দিষ্ট ভূখন্ড এবং একটি সুগঠিত সরকার থাকলেও যদি তার সার্বভৌমিকতা না থাকে, তাহলে তাকে কখনোই ' রাষ্ট্র' বলে অভিহিত করা যায় না।। কারণ সার্বভৌম ক্ষমতার মাধ্যমেই কোনো একটি রাষ্ট্র প্রায় বা সম্পূর্ণ বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকে। অর্থাৎ কোনো সংগঠনের যদি জনগণ, নির্দিষ্ট ভূখন্ড, সরকার এবং সার্বভৌম ক্ষমতা থাকে, তাহলে সেই সংগঠন হবে একটি রাষ্ট্র।। এবং অন্য কোনো রাষ্ট্র তাকে তার ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

• রাষ্ট্র সার্বভৌমিকতা দুই প্রকারের।

•  প্রথমত: অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিকতা

▶ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিকতা বলতে সেই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে বোঝায়।

• দ্বিতীয়ত : বাহ্যিক সার্বভৌমিকতা :

▶ বাহ্যিক সার্বভৌমিকতা বলতে কোনো একটি রাষ্ট্রের কোনো বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে প্রায় বা সম্পূর্ণ মুক্ত থাকার ক্ষমতাকে বোঝায়। তাই বলা যায় রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সার্বভৌম ক্ষমতা হলো সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ


5 - আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে গেটেল রাষ্ট্রের কোন্ বৈশিষ্ট্যটিকে চিহ্নিত করেছেন? পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা কী রাষ্ট্র? তোমার বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করো।

উওর : আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে গ্রেটেল-
"রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা" বৈশিষ্ট্যটিকে চিহ্নিত করেছেন।

পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা রাষ্ট্র নয়।  এর স্বপক্ষে আমার যুক্তি হলো -
• অধ্যাপক গার্নারের সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তার জনসমষ্টি বা জনগণ, নির্দিষ্ট ভূখন্ড একটি সুগঠিত সরকার এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সার্বভৌমিকতা থাকা প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরার ক্ষেত্রে এই চারটি বৈশিষ্ট্য আছে কিনা তা আলোচনা করলেই আমরা এর সঠিক যুক্তি দেখতে পাই। যেমন  -

জনসমষ্টি : রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে জনসমষ্টি বা জনগণ প্রথম এবং প্রধান উপাদান। কারণ জনগণকে ছাড়া কখনোই কোনো রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে না। যদি আমরা পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরার ক্ষেত্রে দেখি তাহলে পশ্চিমবঙ্গে এবং ত্রিপুরার (2011 সালের জনগণনা অনুযায়ী) জনসংখ্যা হলো  - 91, 347, 736 এবং 3, 671,032।

নির্দিষ্ট ভূখন্ড :  রাষ্ট্র গঠনের দ্বিতীয় উপাদানটি হলো নির্দিষ্ট ভূখন্ড। পশ্চিমবঙ্গের এবং ত্রিপুরার ক্ষেত্রে তাদের নির্দিষ্ট ভূখন্ড রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মোট আয়তন হল 88,752 বর্গ কিলোমিটার এবং ত্রিপুরার ক্ষেত্রে তার আয়তন হল 10,491.69 বর্গ কিলোমিটার।

সরকার:  রাষ্ট্রের বিমুর্ত ধারণাকে বাস্তবায়িত করা হয় সরকারের মাধ্যমে। সরকারকে রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক বলা হয়। কারন কার্য ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বলতে সরকারকে বোঝায়।। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরার সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে জনগণের নির্বাচিত সরকারের অস্তিত্ব রয়েছে। সুতরাং রাষ্ট্রগঠনের তৃতীয় বৈশিষ্ট্যটিও পশ্চিমবঙ্গে এবং ত্রিপুরায় রয়েছে।

সার্বভৌমিকতার অনুপস্থিতি : অধ্যাপক গেটেল সার্বভৌমিকতাকে আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি বলে বর্নণা করেছেন।  কারণ সার্বভৌমিকতার হলো রাষ্ট্রগঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।  জনগণ, নির্দিষ্ট ভূখন্ড,  একটি সুগঠিত সরকার থাকা সত্ত্বেও যদি কোনো সংগঠনের সার্বভৌম ক্ষমতা না থাকে তাহলে তাকে রাষ্ট্র বলে অভিহিত করা যায় না।। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরার ক্ষেত্রে  উপযুক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও এই দুটি রাজ্যের সার্বভৌম ক্ষমতা নেই। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরাকে কেন্দ্রীয় সরকারের যে-কোন নির্দেশ এবং অধ্যাদেশ প্রভৃতি মেনে চলতে হয়।। সুতরাং এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে এবং ত্রিপুরার সার্বভৌম ক্ষমতার অভাব দেখা যায়। সার্বভৌমিকতা না থাকার জন্য পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরাকে " রাষ্ট্র " বলা যায়না।


6 - রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে সরকার ও সার্বভৌমিকতা সম্পর্কে আলোচনা করো। পশ্চিমবঙ্গ কি একটি রাষ্ট্র? তোমার বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দেখাও

উওর : রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে সরকার এবং সার্বভৌমিকতা সম্পর্কে আলোচনা :-

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে সরকার ; রাষ্ট্র গঠিত হয় প্রধানত জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে। এবং প্রত্যেকটি রাষ্ট্র ভালো কাজ কর্মের মাধ্যমে রাষ্ট্রের জনগণের কল্যাণ করে থাকে। এবং রাষ্ট্র এরূপ কল্যাণমূলক কাজগুলি সরকারের মাধ্যমে করে থাকে। কার্যক্ষেত্রে রাষ্ট্র বলতে সরকারকে বোঝায়। সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র তার বিভিন্ন বিমূর্ত ইচ্ছাকে বাস্তব রূপে পরিণত করে। সুতরাং বলা যায়-  সরকারের মাধ্যমেই একটি রাষ্ট্র সঠিকভাবে পরিচালিত হয়।। এজন্যই সরকারকে রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক বলা হয়।

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে সার্বভৌমিকতা : রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা বা সার্বভৌম ক্ষমতা। জনসমষ্ঠি, নির্দিষ্ট  ভূখন্ড এবং সরকার থাকা সত্ত্বেও যদি কোন সংগঠনের সার্বভৌমিকতা না থাকে তাহলে তাকে রাষ্ট্র বলা যায়না। একটি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সার্বভৌমিকতাই প্রধান। কারণ অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিকতার মাধ্যমে রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী হয়। এবং বাহ্যিক সার্বভৌমিকতার মাধ্যমে রাষ্ট্র অন্যান্য রাষ্ট্রের বা অন্যান্য শক্তির নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়। এজন্যই অধ্যাপক গেটেল সার্বভৌমিকতাকে আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি বলে বর্নণা করেছেন। সার্বভৌমিকতাকে রাষ্ট্রের প্রাণ বলে অভিহিত করা হয়।

▶  পশ্চিমবঙ্গ কী একটি রাষ্ট্র? 

•  পশ্চিমবঙ্গ একটি রাষ্ট্র নয়।।  এর কারণ হলো একটি রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে জনসমষ্টি, নিজস্ব ভূখণ্ড,  একটি সুগঠিত সরকার এবং সার্বভৌমিকতা থাকা প্রয়োজন।
•   পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে - (2011 সালের জনগণনা অনুযায়ী) জনসংখ্যা হলো  - 91, 347, 736 সংখ্যক জনসমষ্ঠি, 88,752 বর্গ কিলোমিটারের নির্দিষ্ট ভূখন্ড এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটারদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত একটি সুগঠিত সরকার থাকা সত্ত্বেও, পশ্চিমবঙ্গের সার্বভৌমিকতা নেই। তাই পশ্চিমবঙ্গ একটি রাষ্ট্র নয়।

পশ্চিমবঙ্গকে একটি রাষ্ট্র না বলার কারণ:

• সার্বভৌমিকতার অনুপস্থিতি : অধ্যাপক গেটেল সার্বভৌমিকতাকে আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি বলে বর্নণা করেছেন।  কারণ সার্বভৌমিকতার হলো রাষ্ট্রগঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। জনগণ, নির্দিষ্ট ভূখন্ড,  একটি সুগঠিত সরকার থাকা সত্ত্বেও যদি কোনো সংগঠনের সার্বভৌম ক্ষমতা না থাকে তাহলে তাকে রাষ্ট্র বলে অভিহিত করা যায় না।। কিন্তু আমরা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কোনো সার্বভৌমিকতা দেখতে পাই না। 
• পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্রের অধীনে কাজ করতে হয়।
• পশ্চিমবঙ্গের প্রধান শাসক হলেন রাজ্যপাল। পশ্চিমবঙ্গ যদি একটি রাষ্ট্র হতো তাহলে পশ্চিমবঙ্গ নিজেই তার শাসককে নির্বাচন করত পারতো।  কিন্তু এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের শাসককে কেন্দ্র নির্বাচন করে থাকে।
• এছাড়াও কেন্দ্র যদি চায় তাহলে পশ্চিমবঙ্গের নির্দিষ্ট ভূখন্ডের সীমানা পরিবর্তন করতে পারে। যদি পশ্চিমবঙ্গ একটি রাষ্ট্র হতো তাহলে তার সার্বভৌম ক্ষমতার মাধ্যমে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের সাথে সেটি করতে পারত না।

• সুতরাং এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের সার্বভৌমিকতার অভাব রয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গকে একটি রাষ্ট্র বলা যায়না।


7 - সংঘ বলতে কী বোঝো?  রাস্ট্র ও অন্যান্য সংঘের মধ্যে বৈসাদৃশ্য গুলি নিরূপণ করো।

উওর :
▶• সংঘ :  যখন এক বা একাধিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন তাকে সংঘ বলা হয়।
• সংঘের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।  যেমন-
•  সংঘ গুলো তৈরি হয় প্রধানত জনকল্যাণের উদ্দেশ্য নিয়ে।
• সংঘের আয়তন ক্ষুদ্র বা বৃহৎ দুই ই হতে পারে।
• একজন ব্যক্তি একই সঙ্গে একাধিক সংঘের সদস্য পদ লাভ করতে পারে।
•  সংঘ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় প্রভৃতি।

▶ রাস্ট্র ও অন্যান্য সংঘের মধ্যে কিছু বৈসাদৃশ্য  :

⚫- উদ্দেশ্যগত পার্থক্য : যেকোনো রাষ্ট্র গঠিত জনকল্যাণ মূলক পরিকল্পনা নিয়ে। জনকল্যাণ করাই হল রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য। জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য থাকে না। জনকল্যাণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র নানাবিধ কার্য সম্পাদন করতে পারে বা করে থাকে।।  কিন্তু অন্যদিকে সংঘগুলির উদ্দেশ্য জনকল্যাণ হলেও তারা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি বা নির্দিষ্ট কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়।  কখনোই কোনো সংঘ একটি রাষ্ট্রের মত বহুমুখী উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হতে এবং জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে নানা ধরনের কার্য সম্পাদন করতে পারে না।

⚫ -  ক্ষমতাগত পার্থক্য :  রাষ্ট্র এবং সংঘের মধ্যে ক্ষমতাগত বিরাট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটি রাষ্ট্রই তার সার্বভৌম ক্ষমতার মাধ্যমে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সমাজের ওপর চরম  কর্তৃত্ব বজায় রাখে।  এবং রাষ্ট্রগুলি বাহ্যিক সার্বভৌমিকতার মাধ্যমে অন্যান্য রাষ্ট্র বা অন্য শক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকে। কিন্তু কোনো সংঘের সার্বভৌমিকতা না থাকার ফলে তাদের রাষ্ট্রের অধীনে থেকে কাজ করতে হয়। একটি রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ কোনো সংঘকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু কখনোই কোনো সংঘ কোনো একটি রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

⚫  অস্তিত্ব : একটি রাষ্ট্র নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমারেখা দ্বারা আবদ্ধ ভূখণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানার বাইরে কোনো  রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকে না। কিন্তু একটি সংঘের ক্ষেত্রে এরকম নয়।  কোনোএকটি সংঘের,, এক বা একাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে তার অস্তিত্ব থাকতে পারে। যদি কোনো একটি  সংঘের জনপ্রিয়তা খুব বেশি হয়,তাহলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সদস্যরা সেই সংঘের সদস্য পদ লাভ করে।  এবং এভাবেই সংঘের অস্তিত্ব বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে।

সদস্যপদলাভ গত পার্থক্য :  যেকোনো একজন ব্যক্তি,শুধুমাত্র যেকোনো একটি রাষ্ট্রের সদস্য পদ গ্রহণ করতে পারে।  একজন ব্যক্তি কখনোই একই সঙ্গে একাধিক রাষ্ট্রে সদস্যপদ গ্রহণ করতে পারে না।  কিন্তু একজন ব্যক্তি যেকোনো একটি রাষ্ট্রের সদস্য হয়ে একই সঙ্গে একাধিক সংঘের সদস্য পদ গ্রহণ করতে পারে। বা যেকোনো সংঘের সদস্যপদ যেকোনো রাষ্ট্রের নাগরিক গ্রহণ করতে পারে।

⚫ - কর্মক্ষেত্রের পরিধিগত পার্থক্য : প্রত্যেকটি রাষ্টের ক্ষেত্রে তার কার্যকলাপ তার নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কোনো একটি রাষ্ট্রের কার্যকলাপ কখনোই একাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে হতে পারে না। কিন্তু কোনো সংঘের ক্ষেত্রে এরকম হয় নাও হতে পারে। রেডক্রস সোসাইটির মতো সামাজিক সংঘের কার্যাবলী বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্প্রসারিত।।


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top