মাধ্যমিক 2022 ইতিহাস সাজেশন | WB Madhyamik History Suggestion 2022
আজকে আমরা 2022 সালের মাধ্যমিক ( wb Madhyamik 2022 ) পরীক্ষার্থীদের জন্য মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় " বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ " এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন এবং সেইসঙ্গে তার উত্তরও তোমাদের সাথে শেয়ার করব।
আজকের বিষয় :
1- ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।।
( মাধ্যমিক 2019, মাধ্যমিক 2017 )
2 - বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরুপ অবদান ছিল?( মাধ্যমিক 2019 )
3- কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বাংলায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের কী ভুমিকা ছিল??( মাধ্যমিক 2017 )
4- ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ সম্পর্কে লেখো।।
5- বাংলার ছাপাখানার বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ভুমিকা আলোচনা করো।।
7- বসু বিজ্ঞান সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।।
8- বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে IACS এর ভুমিকা লেখ।
9- বাংলার বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের ভূমিকা।
10- শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে একটি অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলো? ( মাধ্যমিক 2018 )
মাধ্যমিক 2022 ইতিহাস সাজেশন ( বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ )| WB Madhyamik History Suggestion 2022
1- ছাপাখানার বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ভূমিকা || বাংলার ছাপাখানার বিকাশে উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরীর ভুমিকা আলোচনা করো।।
ছাপাখানার ক্ষেত্রে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী বিখ্যাত কেন?
উওর:
ভুমিকা: বাংলার ছাপাখানার বিকাশে যে সমস্ত বাঙালির কথা আসে, তাদের মধ্য অন্যতম ছিলেন লেখক এবং প্রকাশক উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী। উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী তার লেখা বই " ছেলেদের রামায়ন" যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে ছাপানোর কথা ভাবেন। কিন্তু এই বইটি সিটি বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশনার পর উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী বইটির প্রকাশনায় খুবই হতাশ হন। এবং এই হতাশা থেকেই 1885 খ্রিষ্টাব্দের তিনি নিজের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় আনেন। এবং 1885 খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার শিবপুর লেনে নিজস্ব একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। যার 1895 খ্রিষ্টাব্দে নাম হয়" ইউ.এন. রায় অ্যান্ড সন্স"। এবং এরপরই তার ছাপাখানার জগতে প্রবেশ শুরু হয়।
বাংলার ছাপাখানার বিকাশে উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরীর ভুমিকা ছিল এরুপ::-
1, নিজস্ব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ :: উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী লেখা " ছেলেদের রামায়ন" বইটি যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে 1884 খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। কিন্তু সিটি বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত এই বইটিরপ্রকাশনা উপেন্দ্র কিশোরকে খুশি করতে পারেনি। এই বইটির ছাপা তাকে খুবই হতাশ করে। যার জন্য উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী ঠিক করেন যে তিনি নিজস্ব ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা করবেন।
2, নিজস্ব ছাপাখানা :
যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটির ছাপাখানা থেকে তার প্রকাশিত বইয়ের হতাশা থেকে উপেন্দ্র কিশোর 1885 খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার শিবনারায়ন লেনে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এই ছাপাখানার নাম পরবর্তীকালে পরিবর্তিত হয়ে হয় " ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স "
3, হাফ- টোন ব্লকের প্রবর্তন ::-
উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী তার নিজস্ব ছাপাখানার মাধ্যমে ছাপাখানার জগতে পরিবর্তন আনেন। তিনি ছাপাখানা থেকে প্রকাশিক বিভিন্ন বই পএ বা খবরের কাগজ গুলিতে সাদা - কালো ছবির পরিবর্তে রঙিন ছবি ছাপানোর উদ্যোগ নেন।
তিনি এর জন্য ভারতে হাফ- টোন ব্লকের প্রবর্তন করেন। এর তার এই পদ্ধতিতে সত্যি ছাপাখানার জগতে এক নতুন দিক খুলে যায়। এর আগর ছাপাখানার বই গুলিতে যে সাদা কালো ছবি ছাপা হত তাতে খুদে শিশুদের মন হয়তো ভরতো না। কিন্তু বই -পএে রঙিন ছবি আসার পর তাদের পড়ার আগ্রহ টা অনেক গুন বেড়ে যায়।।
4, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র, এবং নতুন পদ্ধতি: উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী ছাপাখানার প্রসারে শুধুমাত্র রঙিন ছবির পদ্ধতি উদ্ভাবনেই থেমে থাকেননি। তিনি হাফ-টোন ব্লক পদ্ধতি প্রবর্তেন পর বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র , যেমন - ডুয়োটাইপ, ট্রিন্ট প্রসেস,ডায়াফর্ম যন্ত্র, স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার প্রভৃতি যন্ত্র ও পদ্ধতি তৈরি করেন।
5, সুকুমার রায়ের ভুমিকা::-
উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী ছাপাখানার প্রকাশনা সম্পর্কিত ফোটোগ্রাফি ও মুদ্রন সম্পর্কে শিক্ষা লাভের জন্য তার পুএ সুকুমার রায়কে 1911 খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে এ পাঠাম।
6, পথ প্রদর্শক হিসেবে ::বলা হয় যে উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরীর পরিকল্পনা অনুসরণ করে ইংল্যান্ডে বাণিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন ধরনের মুদ্রন যন্ত্র, স্ক্রিন অ্যাডজাস্টিং মেশিন বানানো হয়েছিল। তাই অনেকে তাকে এ বিষয়ে পথ প্রদর্শক হিসেবে মনে করেন।
উপসংহার: সবশেষে বলা যে যগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত " ছেলেদের রামায়ন" বইটির প্রকাশনার অখুশি থেকেই উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী ছাপাখানার জগতে পা রাখার কথা পরিকল্পনা করেন।। এবং ইউ.এন.রায় অ্যান্ড সন্স প্রতিষ্ঠা করেন। এবং আস্তে আস্তে তিনি বাংলার ছাপাখানার জগতে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান তৈরী করে যান।
2 - ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।
উওর : আঠারো শতকের শেষদিক থেকে শুরু করে উনিশ শতকে শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে ছাপাখানা ছাপা বইয়ের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক -
• বিভিন্ন বই প্রকাশ : ছাপাখানা প্রসারের পর বিভিন্ন শিক্ষিত ব্যক্তিরা শিক্ষার প্রসারের জন্য বিভিন্ন ধরনের বই প্রকাশ করতে শুরু করেন। যেমন পিয়ারসনের " বাক্যাবলী ", লসণের " পশ্বাবলি " রাজা রাধাকান্ত দেবের " বেঙ্গলি স্পেলিং বুক " ইত্যাদি প্রকাশিত হওয়ার পর,সেই সমস্ত ছাপা বই জনসাধারনের হাতে এলে শিক্ষার্থীরা নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়। ফলে শিক্ষার প্রসারের সূত্রপাত ঘটে।
• শিশু শিক্ষা : শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে শিশুদের শিক্ষার দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ শিশুরাই হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যুবসমাজ। বর্তমানকালে শিশুরা শিক্ষা পেলে ভবিষ্যতের যুব সমাজ এমনিই শিক্ষিত হবে। শিশুদের শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে মদনমোহন তর্কালঙ্কার, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রাধাকান্ত দেব,রামসুন্দর বসাকের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা তাদের বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা এবং প্রকাশ করেন।
• উচ্চ শিক্ষার প্রসার : ছাপাখানার বিকাশের ফলে প্রথমদিকে শুধুমাত্র স্কুল-কলেজের বইপত্র ছাপা হতো। কিন্তু পরবর্তীকালে উচ্চ শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন বইপত্র প্রকাশ ঘটতে থাকে। ফলে বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রীরাও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য আগ্রহী হয়।
• সস্তা পাঠ্য বই : ছাপাখানার বিকাশে থাকে শিক্ষালাভ খুব কঠিন ছিল। কারণ ছাপাখানার বিকাশের আগে বিভিন্ন বই পত্র গুলী হাতে লেখা হতো। যার মূল্য হতো অনেক। হলে অনেক শিক্ষার্থীরাই দামি বই কিনতে না পেরে শিক্ষালাভ করতে পারতো না। কিন্তু ছাপাখানায়, যন্ত্রে ছাপানো বইয়ের মূল্য হাতে লেখা পুথির মূল্য থেকে অনেক কম ছিলো। যার ফলে বহু শিক্ষার্থীরাই খুব কম মূল্যে বিভিন্ন বইপত্র কিনে শিক্ষালাভের সুযোগ পেয়েছিল।
উপসংহার : সবশেষে বলা যেতে পারে, ছাপাখানার বিকাশের ফলে অল্পসংখ্যক হাতে লেখা বিভিন্ন বিষয়ের পুথির মধ্যে আটকে থাকা জ্ঞান মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। এবং শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের প্রয়োজন অথবা চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয় - যেমন, পদার্থবিদ্যা,ইতিহাস,ভূগোল, গণিতবিদ্যা,সাহিত্য,শাস্ত্র,জ্যোতির্বিদ্যা অভিধান,ব্যাকরণ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছিল।
3 - কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বাংলায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের কী ভুমিকা ছিল?
উওর : সম্পূর্ণ দেশীয় উদ্যোগে এবং দেশীয়ভাবে ব্রিটিশ শাসন এবং নিয়ন্ত্রণমুক্ত একটি পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তৎকালীন আইনজীবী তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে 1906 খ্রিস্টাব্দের 25 শে জুলাই কলকাতায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট নামে একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট বাংলার কারিগরি শিক্ষার প্রসারে যে ভূমিকা নিয়েছিল,তা হল -
• বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার :
বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণমুক্ত, সম্পূর্ণ দেশীভাবে প্রতিষ্ঠিত দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন এবং বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
• পাঠ্য ক্রমের বিষয়বস্তু :
• বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে দুই ধরনের পাঠক্রম প্রচলিত ছিল।
• একটি ছিল তিন বছরের জন্য অন্তর্বর্তী পাঠক্রম এবং অপরটি ছিল চার বছরের জন্য মাধ্যমিক পাঠ্যক্রম।
• প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অন্তর্বর্তী পাঠ্যক্রমে শিক্ষালাভের সুযোগ পেত। পাঠক্রমের মধ্যে ছিল পদার্থবিদ্যা, রসায়ন,গণিত এবং ইংরেজি শেখা।
• এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা - চামড়া পাকা করা, ছাপার কাজ, রং মাখানো, ছুতোরের কাজ, সাবান তৈরি,খোদাইয়ের কাজ ইত্যাদি শেখার সুযোগ পেত।
• অন্যদিকে মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমের মূল পাঠক্রমের শিক্ষা লাভের সুযোগ পেত। তাদের জন্য মূলত তিনটি বিষয় ছিল -
• যন্ত্রবিজ্ঞান ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রবিজ্ঞান
• ফলিত রসায়ন
• ভূবিদ্যা
মূলত এই ভাবে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এ বিভিন্ন ছাত্র ছাত্রীরা কারিগরি শিক্ষা এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে।
• মিলন : 1910 খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল টেকনিক্যাল স্কুল, বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজের সঙ্গে মিলিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই মিলিত প্রতিষ্ঠানে পদার্থবিদ্যা,রসায়ন প্রযুক্তি, শিল্প প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়। 1928 খ্রিস্টাব্দে এর নতুন নাম হয় " কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি "। স্বাধীনতার পর 1955 খ্রিস্টাব্দে এটিই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
উপসংহার : সবশেষে বলা যায় যে, 1906 খ্রিস্টাব্দে তারকানাথ পালিতের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত " বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট " ছিল স্বদেশীভাবে দেশে কারিগরি এবং বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটানোর এক উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।। যার মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষক ও পণ্ডিতগণ নিজেদের সবটুকু দিয়ে,শিক্ষাদানের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করার দায়িত্ব পালন করেছিলন।
4 - বসু বিজ্ঞান মন্দির সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।
অথবা, বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে বসু বিজ্ঞান মন্দিরের ভূমিকা লেখ
উওর :
ভূমিকা : উনিশ শতক ও বিশ শতকের দিকে ভারতে যে সমস্ত দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান চর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল,তার মধ্যে 1917 খ্রিষ্টাব্দে জগদীশচন্দ্র বসুর প্রতিষ্ঠিত " বসু বিজ্ঞান মন্দির " উল্লেখযোগ্য।
প্রতিষ্ঠা : জগদীশচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপনা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর, তিনি তার নিজস্ব উদ্যোগে স্বাধীনভাবে বিজ্ঞান চর্চা এবং প্রসারের জন্য 1917 খ্রিস্টাব্দের 30 নভেম্বর কলকাতায় " বসু বিজ্ঞান মন্দির " বা " বোস ইনস্টিটিউট " প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য :
প্রথমত : জগদীশচন্দ্র বসু মাতৃভাষায় ও স্বাধীনভাবে বিজ্ঞান চর্চার উদ্দেশ্যে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও জ্ঞানের প্রসার ঘটানোর।
দ্বিতীয়তঃ জগদীশচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার সময়ে তার নিজস্ব গবেষণার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাই তিনি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চেয়ে ছিলেন যেন পরবর্তী প্রজন্মে বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে সেরকম কোনো সরকারি বাধা-বিপওি শিক্ষার্থীদের সামনে না আসে। এবং সেখানে তারা স্বাধীনতাভাবে বিজ্ঞানচর্চা করতে পারে।
গবেষণার বিষয়বস্তু : জগদীশচন্দ্র বসুর প্রতিষ্ঠিত বসু বিজ্ঞান মন্দির এ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করা হতো। যেমন - পদার্থবিদ্যা,রসায়ন বিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা,মাইক্রোবায়োলজি বায়োকেমিস্ট্রি,বায়োফিজিক্স, পরিবেশ বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণা করার ব্যবস্থা এখানে ছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, 1917 খ্রিস্টাব্দে জগদীশচন্দ্র বসুর প্রতিষ্ঠিত বসু বিজ্ঞান মন্দির ছিল একটি স্বাধীন বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে বিজ্ঞান চর্চা করতে পারতেন। জগদীশচন্দ্র বসুর তার এই " বসু বিজ্ঞান মন্দির " -এই দীর্ঘদিন গবেষণা করার পরে " কেস্কোগ্রাফ যন্ত্র " টি আবিষ্কার করেছিলেন।।
5 - বিকাশ শিক্ষার প্রসারে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স এর ভূমিকা লেখ।
অথবা, বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকার ভূমিকা লেখ।
অথবা, বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে IACS এর ভুমিকা লেখ।
উওর :
• বাংলা বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকারের ভূমিকা :-
ভূমিকা : উনিশ শতকে বেসরকারি উদ্যোগে যে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলার বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল,তাদের মধ্যে ডক্টর মনিলাল সরকারের প্রতিষ্ঠিত " ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স " ছিল উল্লেখযোগ্য।
প্রতিষ্ঠা : সেই যুগের বিখ্যাত চিকিৎসক ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকার এদেশের বিজ্ঞান চর্চা ও তার প্রচার করার জন্য ফাদার ইউজ ইন লাফোর সহযোগিতায় 1876 খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বউবাজার স্ট্রিটে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স প্রতিষ্ঠা করেন।
• উদ্দেশ্য : ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকার এদেশে স্বাধীনভাবে বিজ্ঞান চর্চা এবং বিজ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন।। বিজ্ঞানের অনুশীলন সাধন ও প্রকৃত গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানের পরিধির বিস্তার ঘটেছে ছিলেন।
বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে IACS এর ভুমিকা :-
• গবেষণা : ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স এর বিভিন্ন শাখায় গবেষণা করা হতো। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, জীব বিদ্যা, শক্তি প্রভতি বিষয়গুলিতে গবেষণা করা হতো।
• এক্ষেত্রে প্রতিটি ক্ষেত্রে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল।।
• পত্রিকা প্রকাশ : ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স এর যে সমস্ত বিষয়ে গবেষণা করা হতো, সেই গবেষণা সম্পর্কে বিজ্ঞানে আগ্রহী অন্যান্যদের কাছে সেটা প্রকাশ করার জন্য " ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ফিজিক্স " নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন এর বিভিন্ন গবেষণা সম্পর্কে লেখা-লেখি করা হতো।
উপসংহার : সবশেষে বলা যায়,,ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকারের প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন ছিল সম্পূর্ণ দেশীয় স্বাধীন বিজ্ঞান চর্চা এবং বিজ্ঞানের প্রসারের একটি কেন্দ্র। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি, তাদের বিজ্ঞান গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানের দুনিয়ায় নিজেদের চাপ রেখে গেছেন। যেমন -
• ডক্টর সিভি রমন তার রামান ইফেক্টের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।
• উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী এখানে গবেষণা করেই তার কালাজ্বরের ঔষধ আবিষ্কার করেছিলেন।
• মেঘনাথ সাহা তার " তাপ সূত্রের " জন্য বিজ্ঞান মহলের বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছিলেন।
6 - শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল।
অথবা, উইলিয়াম কেরি বাংলার মুদ্রণ শিল্পের বিখ্যাত কেন?
উওর :
ভূমিকা : উনিশ শতকের বাংলায় ছাপাখানার বিকাশে যে সমস্ত ছাপাখানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল,তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ছিল " শ্রীরামপুর মিশন প্রেস "।
মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠা : শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন এর প্রাণপুরুষ " উইলিয়াম কেরি" বাংলা ভাষায় বাইবেল ছাপানোর উদ্দেশ্যে 1800 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস স্থাপন করেছিলেন। বলা হয় যে " উইলিয়াম কেরি " 1800 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠিত করার দুই বছর আগে থেকেই কাঠের মুদ্রণ যন্ত্র এবং বাংলা হরফ সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছিলেন।
বিভিন্ন পুস্তক, পত্র-পত্রিকা প্রকাশ : শ্রীরামপুর ত্রয়ী অর্থাৎ উইলিয়াম কেরি নজোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড এর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে কিছুদিনের মধ্যেই এটি বাংলার অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে।
ধীরে ধীরে এখান থেকে বিভিন্ন রকম ধর্মপুস্তক,,পাঠ্যপুস্তক এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা প্রকাশনা শুরু হয় যার ফলে কিছুদিনের মধ্যেই এটি একটি জনপ্রিয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
উপসংহার : সবশেষে বলা যায় যে 1800 খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরির উদ্যোগে যে প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের পত্রপত্রিকা, পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের মাধ্যমে একটি জনপ্রিয় ছাপাখানায় পরিণত হয়।
মাধ্যমিক 2022 এর জন্য " দশন শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় - " বিকল্প চিন্তা ও উদ্যাগ " - এর যে সমস্ত প্রশ্ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা হল -
1-
বাংলার মুদ্রণশিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য্যের কীরুপ ভুমিকা ছিল?
( মাধ্যমিক 2018 )
2 -
শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে একটি অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলো? ( মাধ্যমিক 2018 )
****3 -
ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।।
( মাধ্যমিক 2019, মাধ্যমিক 2017 )
4 -
বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরুপ অবদান ছিল?( মাধ্যমিক 2019 )
*****5 -
কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বাংলায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের কী ভুমিকা ছিল??( মাধ্যমিক 2017 )
6- ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ সম্পর্কে লেখো।।
*******7-
বাংলার ছাপাখানার বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ভুমিকা আলোচনা করো।।
****8- বসু বিজ্ঞান সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।।
9- বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে IACS এর ভুমিকা লেখ।
***10 - বাংলার বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের ভূমিকা।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
Table Of Contents
আজকের এই পোস্টের বিষয়-