উডের নির্দেশনামা অথবা উডের ডেসপ্যাচ কী? || ‘উডের নির্দেশনামা' (১৮৫৪) কে এদেশের শিক্ষা বিস্তারের ‘মহাসনদ' বলা হয় কেন ?

0

উডের নির্দেশনামা অথবা উডের ডেসপ্যাচ কী? || ‘উডের নির্দেশনামা' (১৮৫৪) কে এদেশের শিক্ষা বিস্তারের ‘মহাসনদ' বলা হয় কেন ?

Table Of Contents : 

• উডের নির্দেশনামা কাকে বলে? অথবা উডের ডেসপ্যাচ কী? 
• উডের নির্দেশনামা' (১৮৫৪) কে এদেশের শিক্ষা বিস্তারের ‘মহাসনদ' বলা হয় কেন ? বা উডের ডেসপ্যাচ কে ভারতীয় শিক্ষা বিস্তারের ম্যাগনাকার্টা বলা হয় কেন?
• উডের ডেসপ্যাচ এর সুপারিশ গুলি কী কী ছিল?
• উডের ডেসপ্যাচের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভুমিকাঃ 1854 সালে বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি স্যার চার্লস উড কর্তৃক জারি করা একটি নির্দেশনামায়, ভারতীয় শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, ভারতীয় শিক্ষার উন্নতির জন্য সরকারকে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। 1854 সালে স্যার চার্লস উডের সেই রিপোর্ট ই উডের নির্দেশনামা অথবা উডের ডেসপ্যাচ নামে পরিচিত।।

উডের ডেসপ্যাচ এর সুপারিশ গুলি কী কী ছিল? 

1816 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত স্যার চার্লস উডের নির্দেশনামায় ভারতীয় শিক্ষার উন্নতির জন্য যে সমস্ত সুপারিশ করা হয়েছিল, সেগুলো হলো -

আলাদা আলাদা শিক্ষা বিভাগ গঠনঃ উডের নির্দেশনামার আগে ব্রিটিশ সরকারের শাষন ব্যবস্থা মূলত পাঁচটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। যথ - 

• বাংলা

• মাদ্রাজ

• বোম্বে

• উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ

• পাঞ্জাব

এই 5 টি পপদেশের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত একটি মাত্র শিক্ষা কমিটির মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হতো। তাই শিক্ষার ক্ষেত্রে সেরকম কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যেত না। তাই স্যার চার্লস উড তার নির্দেশনামায় প্রত্যেকটি প্রদেশের জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষা বিভাগ গঠন করার সুপারিশ করেছিলেন। যাতে সেই আলাদা আলাদা শিক্ষা বিভাগ নিজের নিজের প্রদেশের শিক্ষার উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। 

বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনঃ ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতে উচ্চ শিক্ষা প্রসারের জন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। 1845 খ্রিস্টাব্দে বোর্ড অফ কাউন্সিল সরকারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব জানিয়েছিল। কিন্তু তখন তা কার্যকর হয়নি। তাই পরবর্তীকালে স্যার চার্লস উডের নির্দেশনামায় ভারতের প্রেসিডেন্টের শহরগুলিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

নারী শিক্ষার প্রসারঃ উডের নির্দেশনামা সরকারের কাছে, ভারতে নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য বিভিন্ন স্কুল স্থাপনের আবেদন করা হয়। 

বৃত্তি শিক্ষার প্রসারঃ স্যার চার্লস উড তার নির্দেশনামায় সাধারণ শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি, চিকিৎসা,আইন কারিগরি ইত্যাদি শিক্ষার প্রসারেও উদ্যোগ নেওয়ার আবেদন জানায়।

এছাড়াও উডের ডেসপ্যাচ এর সুপারিশ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল - 

• সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবে শিক্ষাদান করতে হবে।

•  প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।

• শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে ইত্যাদি।

1854 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত স্যার চার্লস উডের নির্দেশনামা ভারতীয় শিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ ব্রিটিশ সরকার স্যার চার্লস উডের নির্দেশনামার অনেকগুলো সুপারিশ মেনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। যেমন - 

প্রথমতঃ স্যার চার্লস উডের নির্দেশনামা অনুযায়ী সরকার 1855 সালে জনশিক্ষা বিভাগ চালু করে।

দ্বিতীয়তঃ উডের নির্দেশনামা অনুযায়ী 1856 সালে কলকাতা, মাদ্রাসা এবং বোম্বেতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার দ্রুত হতে থাকে।

তৃতীয়তঃ স্যার চার্লস উডের নির্দেশনামা অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার স্কুলগুলোকে সরকারি অনুদান প্রদান করার ব্যবস্থা করে। 

1854 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত উডের নির্দেশনামা বা উডের ডেসপ্যাচ ভারতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে এতোটা গুরুত্ব পূর্ণ হওয়ার কারণে, উডের ডেসপ্যাচ কে অথবা উডের নির্দেশনামাকে এদেশের শিক্ষা বিস্তারের ‘মহাসনদ' অথবা ভারতীয় শিক্ষা বিস্তারের ম্যাগনাকার্টা বলা হয়।

Tags : 

ক্লাস টেন ইতিহাস প্রশ্ন উওর | মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উওর | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর | class 10 history notes | class 10 history suggestion | class 10 history question answer | Madhyamik history question answer | ইতিহাস প্রশ্ন উওর

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top