মৌর্য সাম্রাজ্য ও ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের তুলনামূলক আলোচনা |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ( WBBSE Class 11 history Question Answer chapter 3 questions and answers in bengali ) রাজনৈতিক বিবর্তন শাসনকার্য ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা অধ্যায়ের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন 'মৌর্য সাম্রাজ্য ও ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের তুলনামূলক আলোচনা করো বা পার্থক্য লেখো।' এর উত্তর ( Wb Class xi history Question Answer & Suggestion 2023 ) তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।।
মৌর্য সাম্রাজ্য ও ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের তুলনামূলক আলোচনা করো বা পার্থক্য লেখো।
ভূমিকাঃ প্রাচীনকালে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। প্রাচীনকালের পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু সাম্রাজ্যের মধ্যে সময়ে ভারতে গড়ে ওঠা মৌর্য সাম্রাজ্য এবং অপরদিকে গ্রিক দেশে গড়ে ওঠা ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্য ছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এই দুটি সাম্রাজ্যের মধ্যে অবস্থানগত পার্থক্য ছাড়াও ভারতের মৌর্য সাম্রাজ্য এবং গ্রিকের ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের মধ্যে আমরা একাধিক ক্ষেত্রে পার্থক্য লক্ষ্য করতে পারি। যেমন -
মৌর্য সাম্রাজ্য এবং মেসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের উৎপত্তিগত পার্থক্যঃ-
• ভারতের মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য মূলত নন্দ বংশের শেষ রাজা ধননন্দকে পরাজিত করে ৩২৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ভারতবর্ষে মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
• অপরদিকে প্রাচীন গ্রিসে আনুমানিক ৮০৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ক্যারানাস সর্বপ্রথম মেসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু আনুমানিক ৩৯৩ থেকে ৩৭০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে তৃতীয় সর্বপ্রথম শক্তিশালী মেসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।।
মৌর্য সাম্রাজ্য এবং মেসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বগত পার্থক্যঃ-
• চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য মূলত ৩২৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং অশোকের আমলে মৌর্য সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত প্রসার ঘটেছিল। কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটতে শুরু করে। তাই বলা যায় মৌর্য সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত আধিপত্য বজায় ছিল মূলত ১০০ বছর।
• কিন্তু অপরদিকে ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্য চূড়ান্ত পর্যায়ের স্থায়িত্বকাল অনেক কম ছিলো। ম্যাসিডোনিয়া সম্রাট দ্বিতীয় ফিলিপের সিংহাসন আরোহণের সময় থেকে শুরু করে সম্রাট তৃতীয় আলেকজান্ডার এর মৃত্যু পর্যন্ত মাত্র ৩৬ বছর ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত অস্তিত্ব ছিল।।
মৌর্য সাম্রাজ্য এবং ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের - সাম্রাজ্যের প্রসারগত পার্থক্যঃ-
• চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি গ্রহণ করেছিলেন। যার ফলে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসন কালে মৌর্য সাম্রাজ্যের যথেষ্ট প্রসার ঘটেছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর এবং সম্রাট অশোকের শাসন কালে, সম্রাট অশোক যখন সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি গ্রহণ করেন তখন তিনি কলিঙ্গ যুদ্ধ করেন। কিন্তু কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতায় তিনি যুদ্ধনীতি ত্যাগ করেন এবং তিনি ধর্মের পথে পড়ে যান। যার ফলে সম্রাট অশোকের সময়কালের মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রসার একদমই থেমে যায়।
• অন্যদিকে ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের সম্রাট দ্বিতীয় দ্বিতীয় ফিলিপ এবং তৃতীয় আলেকজান্ডারের সময়কালে ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের যথেষ্ট পরিমাণে প্রসার ঘটে। মূলত তৃতীয় আলেকজান্ডারের সময়েই ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটেছিল। কিন্তু তৃতীয় আলেকজান্ডারের ভারত অভিযান এবং সেই অভিযানে তার মৃত্যু ঘটার পর ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের প্রসার বন্ধ হয়ে যায়।।
মৌর্য সাম্রাজ্য এবং ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের মধ্যে ধর্মের প্রসার গত পার্থক্যঃ-
• সম্রাট অশোক যখন মৌর্য সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন, তখন তিনি সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি গ্রহণ করায় কলিঙ্গ যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু কলিঙ্গ যুদ্ধে যে পরিমাণ মানুষের মৃত্যু ঘটে সেই ভয়াবহতার জন্য তিনি যুদ্ধনীতি ত্যাগ করেন এবং এরপর সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারে অগ্রসর হন। এবং তিনি ভারতবর্ষ ছাড়াও সিংহল,সিরিয়া,মিশর ইরাক, আফগানিস্তান সহ বহু দেশে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটিয়েছিলেন।
• কিন্তু ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের কোনো সম্রাট ই কখনোই কোনো ধর্মের প্রসারের জন্য কোনো ভূমিকা পালন করেননি।।
সাংস্কৃতিক মিশ্রনগত পার্থক্যঃ-
• মৌর্য সাম্রাজ্যের শাসন কালে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল এবং সেই সভ্যতা এবং সংস্কৃতির মধ্যে বৈদেশিক প্রভাব ছিল না। অর্থাৎ মৌর্য সাম্রাজ্যে যে সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল তা সম্পূর্ণভাবেই বৈদেশিক প্রভাবমুক্ত ছিল।
• কিন্তু মেসিডোনিয়া সম্রাট তৃতীয় আলেকজান্ডারের দিগবিজয়ের ফলে গ্রিসের মধ্যে প্রাচ্যের যে যোগসুত্র স্থাপিত হয়েছিল তার ফলে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটেছিল। ফলে গ্রীক ও প্রাচ্যের সংস্কৃতির সংমিশ্রণে এক নতুন সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটেছিল যার নাম দেওয়া হয়েছিল হেলেনিস্টিক ভা আলেকজান্দ্রীয় সংস্কৃতি।।
উপসংহার, প্রাচীন ভারতের মৌর্য সাম্রাজ্য এবং প্রাচীন গ্রিসের ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের মধ্যে উপরিক্ত কিছু পার্থক্য ছাড়াও আরও একাধিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পার্থক্য ছিল। যেমন শিল্পকলার ক্ষেত্রে পার্থক্য, প্রতিষ্ঠাতা গত পার্থক্য,অবস্থানগত পার্থক্য ইত্যাদি।
আশাকরি যে, একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের ( WBBSE Class 11 history Question Answer chapter 3 questions and answers in bengali ) রাজনৈতিক বিবর্তন শাসনকার্য ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা অধ্যায় থেকে যে, 'মৌর্য সাম্রাজ্য ও ম্যাসিডোনিয়া সাম্রাজ্যের তুলনামূলক আলোচনা করো বা পার্থক্য লেখো।' এর উত্তর তোমাদের দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের ভালো লাগবে।।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন