নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো || একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

0

 

নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো || একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় আদিম মানব থেকে প্রাচীন সভ্যতা সমূহের ( WBBSE Class 11 History Question Answer Chapter 2 In Bengali ) একটি 8 মার্কের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন 'নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো'-র উত্তর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।।

নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো

ভূমিকাঃ ঐতিহাসিকরা প্রস্তর যুগকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করে থাকেন। যথা -প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ, নব্য প্রস্তর যুগ এবং তাম্র প্রস্তর যুগ। এই চারটি প্রস্তর যুগের মধ্যে প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং মধ্য প্রস্তর যুগের তুলনায় নব্য প্রস্তর যুগ ছিল অনেকটাই উন্নত ছিল। যার ফলে নব্য প্রস্তর যুগের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব ছিল।। 

নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা-

নব্য প্রস্তর যুগের সময়কালঃ 

নব্য প্রস্তর যুগের সময়কাল ধরা হয় প্রাচীন প্রস্তর যুগের সমাপ্তি এবং তাম্র প্রস্তর যুগের শুরুর আগে পর্যন্ত সময়কালকে।  অর্থাৎ নব্য প্রস্তর যুগের সময়সীমা হল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 10,000 অব্দ থাকে খ্রিস্টপূর্ব 5000  অব্দ পর্যন্ত। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার যে, ভারতে নব্য প্রস্তর যুগের সূচনা হয়েছিল 6000 খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে।।

নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রাঃ 

প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং মধ্য প্রস্তর যুগের তুলনায় নব্য প্রস্তর যুগে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটা উন্নত এবং আধুনিক ছিল।  যেমন- 

স্থায়ী বসতি নির্মাণঃ 

নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ খাদ্য বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য বন জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো না। নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ স্থায়ী বসতি নির্মাণ করতে শিখেছিল যার ফলে তারা নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে, একটি গোষ্ঠী গঠন করে সেখানে নিজেদের স্থায়ী বসতি নির্মাণ করে বসবাস করতো। ফলে নব্য প্রস্তর যুগে মানুষের জীবনের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করার ফলে এই যুগের মানুষের বিভিন্ন রকম সুবিধা হয়েছিল। যেমন-বন্যপ্রাণী থেকে আত্মরক্ষা,  সমাজ গঠন ইত্যাদি।।

কৃষি কাজের সূচনা এবং উন্নতিঃ

নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করার পর তারা তাদের খাদ্যের প্রয়োজনে যাযাবর হিসেবে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করে, নিজেদের অঞ্চলেই খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষি কাজের সূচনা করেছিল। নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বসতি স্থাপন করার ফলে নদীর তীরবর্তী উর্বর জমিতে তারা কৃষি কাজের সূচনা করে। এবং এভাবে তারা খাদ্য সংগ্রহ কারী মানুষ থেকে খাদ্য উৎপাদনকারী মানুষে পরিণত হয়।।

পশুপালনঃ

নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ কৃষি কাজে ব্যবহার করার জন্য এবং অন্যান্য কাজে নিজেদের সুবিধার্থে বিভিন্ন ধরনের পশুকে পোষ মানিয়ে গৃহ পালিত পশু পশু হিসেবে লালন-পালন করতে শুরু করে। নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ বিভিন্ন পশু থেকে দুধ, মাংস-চামরা ইত্যাদি সংগ্রহ করতো। এবং তাছাড়াও পশুশক্তিকে কৃষিকাজে কিছু কাজে ব্যবহার করে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করতো।

নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের হাতিয়ারঃ 

নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ যে সমস্ত হাতিয়ার ব্যবহার করতো, তা অনেকটাই আধুনিক এবং উন্নত ছিল। এই সময় হাতিয়ার গুলি মূলত তীক্ষ্ম, মসৃণ এবং কম ওজনের হতো। ফহলে সেই হাতিয়ার গুলি ব্যবহার করা অনেকটাই সহজ ছিলো। নব্য প্রস্তর যুগে মূলত হামানদিস্তা,শিলনোড়া, জাতা, হাতুড়ি, কাস্তে, বাটালি প্রভৃতি যন্ত্রের আবিষ্কার হয়েছিল।।

যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতিঃ 

নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ মূলত স্থলপথ এবং জলপথ,উভয়ক্ষেত্রেই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছিল। তারা নৌকা আবিষ্কারের ফলে জলপথে দূর-দূরান্তে পাড়ি দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে পেরেছিল। ঠিক একইভাবে স্থলভাগে তারা পশুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবং চাকার ব্যবহার করে গাড়ি তৈরি করার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে ঘটিয়েছিল।।

নব্য প্রস্তর যুগে ভাষার বিকাশঃ 

নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ নির্দিষ্ট স্থানে স্থায়ী বসতি নির্মাণ করার ফলে তাদের যে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, সেই সমাজ ব্যবস্থায় একে অপরের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করার জন্য তাদের মধ্যে ভাষার আবিষ্কার হয়। এবং ধীরে ধীরে সেই ভাষার বিকাশ ঘটে।

নব্য প্রস্তর যুগে উপরিক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি ও গুরুত্ব ছাড়াও আরও একাধিক বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন - এই যুগে আমরা শিল্পকলার বিশেষ উন্নতি দেখতে পাই। নব্যপ্রস্তর যুগে বিভিন্ন প্রতীক চিহ্নের সাহায্যে চিত্র অঙ্কন করা হতো যা লিখল পদ্ধতির প্রথম প্রয়াস ছিল।এছাড়াও নব্য প্রস্তর যুগের রাষ্ট্রব্যবস্থার সূচনা, উপজাতীয় সমাজ, অর্থনৈতিক জীবনের বিকাশ ইত্যাদি হয়েছিল।।


আশাকরি যে, আজকের এই ব্লগ পোস্ট থেকে তোমরা একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় আদিম মানব থেকে প্রাচীন সভ্যতা সমূহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন 'নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো' প্রশ্নটির উওর পেয়ে গেছো। আমরা পরবর্তীতে ক্লাস 11 ইতিহাসের বাকি প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করবো। এবং চেষ্টা করবো, ক্লাস xi ইতিহাস  ( wb class 11 history ) এর সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উওর তোমাদের সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি শেয়ার করার। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top