একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসনযন্ত্র ( WB Class 11 history chapter 4 question answers in bengali ) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন 'ইক্তা প্রথা কী? ইক্তা প্রথার বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করো ভূমিকা' এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
ইক্তা প্রথা কী? ইক্তা প্রথার বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করো ভূমিকা।
ভূমিকাঃ- মধ্যযুগের ভারতে সুলতানি শাসনকালে ভূমি রাজস্ব ছিল সুলতানের আয়ের প্রধান উৎস। সুলতানি শাসনের যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা হতো তার কিছু ভাগ সেই রাজ্যের শাসক শ্রেণীর লোকেদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়ার জন্য সেই যুগে এক ধরনের বিশেষ প্রথার প্রচলন করা হয়েছিল যার ইক্তা প্রথা নামে পরিচিত।। ইক্তা কথার অর্থ হল এক অংশ।।
ইক্তা প্রথার বিবর্তনঃ -
ইলতুৎমিসের আমলেঃ-
ইক্তা ব্যবস্থা মূলত ইসলামীও জগতে প্রচলিত ছিল। সেখান থেকে তুর্কিরা ভারতে ইক্তা ব্যবস্থা আমদানি করেছিলেন। ভারতে দিল্লি সুলতান ইলতুৎমিস সর্বপ্রথম ইক্তা ব্যবস্থার প্রচলন করেছিলেন। ইলতুৎমিস এর আমলে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে ইক্তাদাররা কেন্দ্রীয় শাসন এর সহায়ক হয়ে উঠেছিল এবং তাদের বিভিন্ন কাজ কর্মের ফলে সে সময় সুলতানি শাসন বেশ মজবুত ছিল।
বলবনের আমলেঃ-
ইলতুৎমিস এরপর ইক্তা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছিলেন বলবন। বলবন তার আমলে ইক্তা ব্যবস্থার বেশ কিছু নিয়মের পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি ইক্তাদারদের প্রকৃত আয় ব্যয় ও কোনো মৃত ইক্তাদারের পেছনে অর্থ ব্যয় হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য খোয়াজা নামক একটি সরকারি বাহিনী গঠন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ইক্তাদাররা যাতে বংশগতভাবে শক্তিলাভ বা পদলাভ করতে না পারে সেক্ষেত্রে তিনি বিশেষ নজর রেখেছিলেন। এর ফলে বলবনের আমলে ইক্তাদারদের বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হয়।।
আলাউদ্দিন খলজির আমলেঃ-
বলবনের শাসনের পর আলাউদ্দিন খলজির আমলে ইক্তা ব্যবস্থার ঠিক একইভাবে আরো কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। প্রথমত আলাউদ্দিন খলজী প্রতিটি ইক্তাদারের রাজস্বের হার নির্ধারণ করে দেন।। অর্থাৎ আলাউদ্দিন খলজির আমলে সরকারিভাবে তাদের রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত তার আমলে এই নিয়ম চালু হয়েছিল যে, যদি কোনো ইক্তাদার সঠিক ভাবে কাজ-কর্ম না করে অথবা এমন কোনো কাজ কর্ম করে যা সঠিক নয় বা রাজদ্রোহীতার সমান, তখন সেই সমস্ত কাজের জন্য ইক্তাদারদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছিল।।তৃতীয়ত ইক্তাদারদের বেতনের বিষয়ে বিরাট পরিবর্তন দেখা দেখা গিয়েছিল। আলাউদ্দিন খলজির আমলে কেবলমাত্র সেনাপতিকে ইক্তা এবং বাকি সেনাদের নগদ অর্থে বেতন দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছিল। এর ফলে খলজির আমলে রাজকোষের আয় অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল।
মুহাম্মদ বিন তুঘলকের আমলেঃ-
মুহাম্মদ বিন তুঘলকের আমলে ইক্তা ব্যবস্থায় এক অদ্ভুত পরিবর্তন আসে। মুহাম্মদ বিন তুঘলকের আমলে ইক্তা ব্যবস্থা নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আনেন। তিনি যোগ্য বা সঠিক,সুযোগ্য ব্যক্তির বদলে যে ব্যক্তি সর্বোচ্চ রাজস্ব প্রদান করতে ইচ্ছুক, তাকেই ইক্তাদার হিসেবে নিযুক্ত করার নিয়ম চালু করেছিলেন।।
ফিরোজ তুঘলকের আমলেঃ-
ফিরোজ তুঘলকের আমলে ইক্তা ব্যবস্থায় মূলত বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ফিরোজ তুঘলকের আমলে ইক্তা ব্যবস্থায় যে পরিবর্তনগুলো আসে তা মূলত সুলতানি শাসনের পক্ষে ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত হয়। যেমন প্রথমত ফিরোজ তুঘলকের আমলে ইক্তা ব্যবস্থা ইক্তাদারদের রাজস্ব জমার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। দ্বিতীয়ত জমার পরিমাণ নির্দিষ্ট হওয়ায় কখনোই কোনো ইক্তাদার নির্দিষ্ট পরিমাণের থেকে বেশি রাজস্ব জমা করতো না। এর ফলে সুলতানের সম্পত্তির পরিমাণ বৃদ্ধির বদলে ধীরে কমতে শুরু করে এবং সুলতানকে চরম আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হতে হয়।।
Tags :
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন