আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-বামাবোধিনী পত্রিকা, হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা, গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা এবং সোমপ্রকাশ সাময়িক পত্র সংক্রান্ত সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর শেয়ার করবো।।
বামাবোধিনী পত্রিকার সংক্রান্ত তথ্য
প্রথম প্রকাশ এবং সম্পাদক ; বামাবোধিনী পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে। বামা কথার অর্থ হল নারী। উমেশচন্দ্র দত্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো। উমেশনচন্দ্র দও পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক এবং সেই সঙ্গে ব্রাহ্মসমাজের একজন উল্লেখযোগ্য নেতা। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নেতার প্রচেষ্টায় নারী জাতির মধ্যে শিক্ষার প্রসারের জন্য অন্তপুর স্ত্রীশিক্ষা সভা নামে একটি সংগঠন স্থাপিত করা হয়। সেই বছরই বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী এবং বসন্তকুমার ঘোষের প্রচেষ্টায় উমেশনচন্দ্র দত্ত বামাবোধিনী পত্রিকাটি প্রকাশ করেন।। বামাবোধিনী পত্রিকাটি ছিল বাংলা মাসিক পত্রিকা।।
পত্রিকার বিষয়বস্তু ; বামাবোধিনী পত্রিকাটি মূলত প্রকাশিত হয়েছিল বাংলার নারী জাতির মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য। এই পত্রিকাটিতে মূলত ভাষা জ্ঞান,ভূগোল,সাহিত্য,ইতিহাস, বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়বস্তু নিয়ে লেখালেখি করা হতো। সেই সঙ্গে বামাবোধিনী পত্রিকা নারীদের সাহিত্যসাধনায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য পত্রিকায় লেখার সুযোগ করে দেয়। এবং এর মাধ্যমে নাকি বেশ কয়েকজন মহিলা লেখিকা হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছিলেন।
এইভাবে প্রায় দীর্ঘ ৬০ বছর প্রকাশিত হওয়ার পর বামাবোধিনী পত্রিকাটি উমেশচন্দ্র দত্তের মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর পর, ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।।
হিন্দু প্যাট্রিয়ট সংক্রান্ত তথ্য ;
হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকাটি ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ জানুয়ারি প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। হিন্দু প্যাট্রিয়ট ছিল একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা।প্রথমে পত্রিকাটি সাপ্তাহিক ছিল এবং পরে তা দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। কিন্তু পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হওয়ার কিছু বছর পরেই গিরিশচন্দ্র ঘোষ সম্পাদকের কাজ ছেড়ে দেন এবং তাঁর বদলে হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায় হিন্দু প্যাট্রিয়েট পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
পত্রিকার বিষয়বস্তু ; হিন্দু পেটের পথিকের মূলত তিনটি বিষয়ে লেখারেখি করা হয়েছিল।
১) প্রথমেই রয়েছে নীল চাষীদের কথা বা নীল বিদ্রোহের বিভিন্ন ঘটনাবলী প্রকাশ করা।
২) দ্বিতীয়ত ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ঘটে যাওয়া সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের হিন্দু ও মুসলিম সিপাহীনদের সমর্থনে বিভিন্ন লেখালেখি।
৩) তৃতীয়ত-বাংলার সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধ বিশ্বাস ও ধর্মীয় কুপ্রথার বিরুদ্ধে লেখালেখি।
গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা ;
গ্রামবার্তা প্রকাশিত পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে। এর সম্পাদক ছিলেন হরিনাথ মজুমদার। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে বতর্মান বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়া জেলার কুমারখালী শহর থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। হরিনাথ মজুমদারের সারা জীবনের অভাব থাকার কারণে তিনি কাঙ্গাল হরিনাথ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।।
গ্রামীণ সংবাদপত্রের জনক-
কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকাটির মাধ্যমেই সর্বপ্রথম গ্রাম বাংলার সমাজ চিত্র শহরের শিক্ষিত সমাজের সামনে তুলে ধরা হয়েছিল। গ্রামীণ সংবাদ পরিবেশন করাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। হরিনাথ মজুমদার গ্রামের পথে পথে ঘুরে ঘুরে যে সমস্ত সংবাদ সংগ্রহ করতেন তাই তিনি এই পত্রিকাতে প্রকাশ করতেন। সেই কারণেই গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকাটিকে গ্রামীণ সংবাদপত্রের জনক বলা হয়।
এই পত্রিকায়- নীল চাষীদের দুরবস্থার কথা,নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কথা, জমিদারি অত্যাচার, সমাজে নারীদের অবস্থান এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিষয় যেমন দর্শন,সাহিত্য,ভাষা ইত্যাদি বিষয়ে লেখালেখি করা হতো। তবে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের প্রচুর অভাব থাকায় মাত্র ২২ বছর চলার পর গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।।
সোমপ্রকাশ সাময়িক পত্র সংক্রান্ত তথ্য.;
১৮৫৮ খ্রিস্টানদের ১৫ ই নভেম্বর দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষনের সম্পাদনায় সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল। সোমপ্রকাশ পত্রিকা ছিল ভারতের প্রথম রাজনৈতিক পত্রিকা। দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অনুপ্রেরণায় এই পত্রিকাটি প্রকাশনা শুরু করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি সর্বকালের সেরা সংবাদপত্রে শিরোপা পেয়েছিল। সোমপ্রকাশ পত্রিকাটিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্রিটিশ বিরোধী বিভিন্ন লেখালেখি প্রকাশ করা হতো ম বিশেষ করে নীল চাষীদের উপর নীলকর সাহেবের অত্যাচারের কাহিনী বা তাদের অত্যাচারে নীল চাষীদের জীবনে যে কষ্ট নেমে এসেছিল সেই সমস্ত লেখা এখানে প্রকাশিত করা হতো।
সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি কেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল?
১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের লর্ড লিটন যে দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন বা ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট চালু করেন, সেখানে বলা হয়েছিল যে কোনো সংবাদপত্র সরকার বিরোধী কোনো লেখালেখি প্রকাশ করতে পারবে না। এবং সেই সঙ্গে সংবাদপত্রগুলিকে কিছু মুচলেকা দিতে হবে। কিন্তু ব্রিটিশ বিরোধী কিছু লেখা প্রকাশ করার কারণে দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষনকে কিছু জরিমানা ধার্য করা হয়। দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষন সেই জরিমানা দিতে রাজি হননি। তার বদলে তিনি সোমপ্রকাশের প্রকাশনা কিছু বছরের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে সোমপ্রকাশ পত্রিকা পুনরায় প্রকাশিত হয়েছিল, তবে পূর্বেকার মতো জনপ্রিয়তা সোমপ্রকাশ পায়নি।।
আমাদের গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করো
আশাকরি আজকের এই বামাবোধিনী পত্রিকা, হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা, গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা এবং সোমপ্রকাশ সাময়িক পত্র সংক্রান্ত সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উওর তোমাদের কাজে আসবে।। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিও।।
ধন্যবাদ