মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন -প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ প্রশ্ন উত্তর

0

 

মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন -প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ প্রশ্ন উত্তর || মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন।।


আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে - 

 "প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ  " 

- অধ্যায় থেকে মাধ্যমিক 2022 এর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বড়ো প্রশ্ন তার উওর সহকারে দেওয়া হলো।। এর আগের পোস্টে আমরা 2022 সালের মাধ্যমিক পরিক্ষার্থীদের জন্য, এই চ্যাপ্টারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন দিয়েছিলাম! সেই পোস্টে সাজেশন এর সাথে সাথে কিছু ছোট প্রশ্ন ও তার উত্তর সহকারে দেওয়া হয়েছিল।।   যদি আপনি সেই পোস্টটি না দেখে থাকেন তাহলে এই পোস্ট এর নিচের দিকে আপনি একটি লিঙ্ক দেখতে পাবেন, এবং সেই লিঙ্কে ক্লিক করে আপনি এর আগের পোষ্টটি দেখে নিতে পারেন।।


⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫


প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ প্রশ্ন উত্তর | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ প্রশ্ন উওর |মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায়ের বড়ো প্রশ্ন উওর 


প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ প্রশ্ন উত্তর
প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ প্রশ্ন উত্তর


1- বিপ্লব বলতে কী বোঝায়???

উ- বিপ্লব বলতে কী বোঝায় এমন একটি প্রকিয়া, যার মাধ্যমে কোনো প্রচলিত ব্যবস্থা, বা সমাজের কোনো একটি জিনিস, যেমন - রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা যেকোনো সামাজিক ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন ঘটে যাওয়াই হলো বিপ্লব।।

যেমন - ইউরোপের শিল্পবিপ্লব, 1789 এর ফরাসি বিপ্লব।।

2-  অরণ্য আইন কী??

উ- ব্রিটিশ সরকার, ভারতের বনজ সম্পদ সরকারি ভাবে ব্যবহার করার জন্য, এবং তার সাথে সাথে ভারতের অরণ্যের উপর ব্রিটিশ সরকারের অধিকার বসিয়ে, ভারতীয় অরণ্যের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার জন্য, ব্রিটিশ সরকার 1865 খ্রিষ্টাব্দে, এবং 1878 খ্রিষ্টাব্দে দুটি আইন প্রনয়ন করে।। এবং এই আইন দুটিকেই - "অরণ্য আইন বলা " -হয়।।।

3- জঙ্গলমহল কাকে বলা হয়??

-
-  বর্তমান মেদিনীপুর জেলার চুয়ার অধ্যুষিত অঞ্চলে  একসময় প্রচুর জঙ্গল ছিল।। এবং এরকম জঙ্গলাকীর্ণ অবস্থা থাকার জন্যই মেদিনীপুরের চুয়ার অধ্যুষিত অঞ্চল কে জঙ্গলমহল বলা হয়।।।

4- কাদের - "চুয়ার " বলা হতো???

-
-  উত্তর - আসলে চুয়ার কোন উপজাতির নাম নয়!! মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহল অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীদের উচ্চবর্ণের জমিদার ও মহাজনেরা, এবং ইংরেজ রা ঘৃণা এবং তাচ্ছিল্যের সঙ্গে চুয়ার বলে ডাকতো।। চুয়ার সম্প্রদায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বনজঙ্গলে উপর নির্ভর থাকত,  এবং কখনো কখনো তারা পাইকান জমিতে চাষ বাস করে নিজেদের জীবন চালাতো।। জঙ্গলমহল অঞ্চলে বসবাসকারী এই সাধারণ মানুষগুলোর আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায়,  এবং এরা নিম্নবর্গের শ্রমজীবী মানুষ হওয়ার কারণেই  উচ্চবর্ণের মানুষরা তাচ্ছিল্যের ও ঘৃণার সঙ্গে এদের চুয়ার বলে ডাকতো।।

5- পাইকান জমি কাকে বলে??

- অথবা,

- পাইকান জমি বলতে কী বোঝায়??

-
- উ- বাঁকুড়া জেলা দক্ষিণ -পশ্চিমাঞ্চল এবং মেদিনীপুর জেলার বেশ কিছু অঞ্চলে সেখানকার জমিদারদের অধীনে নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে অনেক চুয়াররা পাইক হিসেবে  কাজ করতো।। এবং তখন সে জমিদাররা সেই নিরাপত্তারক্ষীদের নগদ অর্থ দেওয়ার বদলে,  কিছু খাস জমি ভোগ করতে দিত।।। এবং সেই জমিগুলোতে কখনোই কোনো কর বসানো  থাকতো না!! অর্থাৎ সেই জমিগুলি নিষ্কর হরো।। এবং এই নিষ্কর জমি গুলোকেই পাইকান জমি বলা হতো।।

6- কোল বিদ্রোহের দুটি কারন লেখো।।

উ- 1831 খ্রিষ্টাব্দের কোল বিদ্রোহের প্রধান কয়েকটি কারণ ছিল-
প্রথমত - ছোটনাটনাগপুর অঞ্চলে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উচ্চহারে রাজস্ব বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া বিভিন্ন জমিদার ও মহাজনদের বিভিন্ন অত্যাচারের ফলে কোলদের মধ্যে প্রথম ক্ষোভের সঞ্চার ঘটে।।
দ্বিতীয়ত - কোলরা মনে করতো যে অরণ্যের উপর তাদের জন্মগত অধিকার ।। তাদের অরণ্যে বা, তাদেত জীবনে ব্রিটিশ সরকারের হাত থাকবে না!! কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কোলদের সেই জন্মগত অধিকারের মধ্যেও হস্তক্ষেপ করে.. যার ফলে ব্রিটিশ সরকারের অপর কোলদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।। এবং এরকম আরও অনেক কারণে কোলরা 1831 খ্রিষ্টাব্দে বিদ্রোহের পথে পা বাড়িয়ে দেয়।।।


7- " দিকু " কী?? - 

অথবা,

- কাদের "- দিকু " -বলা হতো?? 

-
- উ - প্রধানত আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে,যেমন চুয়ার, সাঁওতাল বা কোল অধ্যুষিত অঞ্চলে কোন বহিরাগত মহাজন', বহিরাগত ব্যবসায়ী  বা বহিরাগত জমিদারদের  দিকু বলা হতো।।  আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে দিকুরা ছিল সবসময়ই খারাপ!! কারণ আদিবাসী অঞ্চলের আদিবাসীরা ছিল নিরক্ষর এবং এই নিরক্ষর মানুষদের- "দিকুরা " - বিভিন্নভাবে ঠকিয়ে! তাদের খারাপ চুক্তিপত্রে সই করিয়ে তাদের বিপর্যস্ত করে দিত।।। 


8- 1855- খ্রিষ্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলাফল গুলি কি কি??

উ- উত্তর 1875 সালে সাঁওতাল বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এই বিদ্রোহের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল।।
প্রথম - সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলে সরকার - "সাঁওতাল পরগনা " নামে একটি স্বতন্ত্র সংরক্ষিত এলাকা গঠন করে! যেখানে শুধু সাঁওতালদের নিয়মকানুন চলতো।।
দ্বিতীয়তঃ সাঁওতাল বিদ্রোহের পর সরকার সাঁওতাল পরগনায় বা, সাঁওতাল এলাকায় সুদের হার নির্দিষ্ট করে দেয়।। যার ফলে বাইরের কোনো জমিদার অতিরিক্ত কোনো সুদ নিতে পারতো না।।
সাঁওতাল বিদ্রোহের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো - সাঁওতালদের পৃথক উপজাতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তার সাথে সাথে সাঁওতালি এলাকায় বাঙালি মহাজন সহ বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়!! এবং সবশেষে তাদের এলাকায় খ্রিস্টান মিশনারীদের প্রবেশ নিষেধ ও সাঁওতালদের মধ্যে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়।।।

9-  উলগুলান বলতে কী বোঝায়??

অথবা,

-  মুন্ডা উলগুলান কী??


উ- বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে 1899-90 খ্রিষ্টাব্দে মুন্ডা বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল।।  জমিদার এবং ইংরেজদের বিভিন্ন অত্যাচারের কারণে শুরু মুন্ডাদের এই বিদ্রোহ -  উলগুলান - নামে পরিচিত।।  উলগুলান শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো ভয়ংকর বিশৃঙ্খলা! বা,  প্রবল বিক্ষোভ।।

9-   মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল??

উ- 1899-90 খ্রিষ্টাব্দে, বীরসা মুন্ডার নেতৃত্বে পরিচালিত, মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য ছিল -
প্রথমত - যেহুতু  ব্রিটিশ সরকার মুন্ডা সমাজের নিয়ম কানুন, এবং তাদের সাধারণ জীবনে হস্তক্ষেপ করে তাদের স্বাভাবিক জীবন- যাপনে বাধা সৃষ্টি করেছিল,! এবং মুন্ডাদের চিরাচরিত অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করে , তাদের নিজস্ব সমাজে ব্রিটিশ আইন প্রণয়ন করেছিল!! তাই মুন্ডা বিদ্রোহের প্রথম লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের এইসব শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়া।।
দ্বিতীয়ত - মুন্ডাদের জন্য এমন একটি স্বাধীন মুন্ডা সমাজ প্রতিষ্ঠা করা! যেখানে ব্রিটিশ সরকারের কোনো অধিকার থাকবে না।।
তৃতীয়ত - মুন্ডারা বিদ্রোহের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব - " খুৎকাঠি প্রথা " - ফিরে পেতে চেয়েছিল!! এবং তাদের জমি থেকে জমিদার ও ব্রিটিশদের অধিকার শেষ করতে চেয়েছিল।।।

10- খুৎকাঠি প্রথা বলতে কী বোঝায়??

-
- উ - খুৎকাঠি প্রথা হলো জমির মালিকানা সংক্রান্ত একটি ব্যবস্থা, যেটা মুন্ডা সমাজে প্রচলিত ছিল।।।
- সাধারণত কোনো জমির মালিক, সাধারণ ভাবে একজন! বা একটি পরিবারই হতে পারে!! বা তার থেকে দু- একজন বেশী!! কিন্তু এই মালিকানা ব্যবস্থায়, কোনো একটি জমির মালিক থাকতো অনেকজন।। অর্থাৎ জমির যৌথ মালিকানা ব্যবস্থা।।

11-ফরাজি আন্দোলন কি??

-অথবা,

- ফরাজি আন্দোলন কাকে বলে??

উত্তর-  ফরাজি আন্দোলন হল মুসলিমদের একটি ধর্মীয় আন্দোলন।। ফরাজি শব্দের অর্থ হলো ইসলাম নির্ধারিত বাধ্যতামূলক কর্তব্য।। হাজী শরীয়ত উল্লাহ নামে একজন ব্যক্তি ভারতবর্ষে ইসলামের শুদ্ধিকরণ করে ভারতবর্ষকে- " দার -উল-  হাবর" -অর্থাৎ ":বিধর্মীর দেশ "থেকে থেকে "দার-উর - ইসলাম"- অর্থাৎ ইসলামের দেশে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। এবং হাজী শরীয়ত উল্লাহের এই ধর্মীয় আন্দোলনকেই ফরাজি আন্দোলন বলা হয়।।

12- দুদুমিঞা স্বরনীয় কেন??

-  উ- দুদুমিঞা, অর্থাৎ - মহম্মদ মহসিন স্বরনীয় হওয়ার প্রথম কারণ হলো - তিনি ছিলেন ফরাজি আন্দোলনের মুল নেতা, - " হাজি শরিয়ৎ উল্লাহের " - পুএ।।
-  দ্বিতীয়ত - হাজি শরিয়ৎ উল্লাহের মৃত্যুর পর দুদুমিঞা ফরাজি আন্দোলন পরিচালনা করতে শুরু করেন।। যখন দুদুমিঞা ফরাজি আন্দোলনে নেতৃত্বে দিতে শুরু করেছিলেন, তখন ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয় আন্দোলনের বদলে, একটি কৃষক আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল।। এবং এজন্যই ফরাজি আন্দোলন এক নতুন রুপ পেয়েছিল।। যার জন্য দুদুমিঞা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই, দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে এবং, ফরাজি আন্দোলনের বাকি সদস্যদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।।

নিচে দেওয়া লিঙ্ক গুলোর ওপর ক্লিক করে বিভিন্ন অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন গুলো দেখে নিতে পারেন। 👇


1- ইতিহাসের ধারণা অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর 


2- ইতিহাসের ধারণা অধ্যায়ের সমস্ত 2 নম্বরের প্রশ্ন ও উওর 


3-  সংস্কার :  বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর 


3.I - সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উওর | সংস্কার ব‍ৈশিষ্ট‍্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের ২ নম্বরের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উওর 


4- প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর ও সাজেশিন 


5-প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ, বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উওর | ২ নম্বরের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উওর 


6- সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা প্রশ্ন উওর ও সাজেশন 


7-  সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা - মাধ্যমিক গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন || 2 Mark এর সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তার উওর সহকারে।।


8- বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ ( উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথমভাগ পযর্ন্ত  ) - বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর + মাধ্যমিক সাজেশন।।


9-  বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের সমস্ত 2 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উওর 

 10- নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল || নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো || 1860 খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহ কারণ ও ফলাফল


11-বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ পরিচয় 


12- উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভুমিকা। 


13- সংক্ষেপে মহাবিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো || 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো।।


13- " তরিকা - ই - মহম্মদীয়া " - কী??

-
- উ -  তরিকা - ই - মহম্মদীয়া হল মুসলিমদের একটি ধর্মীয় আন্দোলন।। এই আন্দোলনের মুল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের শুদ্ধিকরন !! এবং ইসলামের নির্দেশনমতো পবিত্র সমাজ গড়ে তোলা।। এই আন্দোলনের আরেকটি রুপ হলো ওয়াহাবি আন্দোলন।। কারণ ওয়াহাবি আন্দোলন এই ভাবধারা নিয়েই শুরু হয়েছিল।। ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করেছিলেন - শাহ ওয়ালিউল্লাহ ও তার পুএ আজিজ।। কিন্তু ভারতবর্ষে এই আন্দোলন - "সৈয়দ আহম্মেদ " - এক ব্যক্তি জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।। এবং তার নেতৃত্বে এই আন্দোলন খুব তীব্র হতে দেখা দিয়েছিল।  কিন্তু এখানে উল্লেখযোগ্য কথা হলো এটাই যে - সৈয়দ আহম্মেদ তার আন্দোলন ওয়াহাবি ভাবধারার নিয়ে শুরু করলেও.. ওয়াহাবি আন্দোলনের লক্ষ্য ! এবং তার আন্দোলনের লক্ষ্য অনেকটাই আলাদা ছিল।

14-  নীলকররা নীলচাষিদের ওপর কীভাবে অত্যাচার করতো? তা সংক্ষেপে লেখো।।

উ-  নীলকর সাহেবদেরা নীলচাষিদের ওপর নানা ভাবে অত্যাচার করতো।। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ ছিল, নীলচাষ করাটাই!! কারণ যখন নীলচাষিরা তাদের জমিতে নীলচাষ করতো, তখন তাদের জমিতে খাদ্যফসল চাষ করতে পারতো না!! যার ফলে চাষিদের গড়ে খাদ্যাভাব দেখা যেত।।
যার জন্য অনেক চাষিকে না খেয়ে দিন কাটাতে হতো।। যখন কোনো চাষি নীলচাষ করতে চাইতো না, তখন ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিত। এরপর সেই চাষিকে গরু বাধা খুটির সঙ্গে বেধে চাবুক মারা হতো।। তার গবাদি পশু ছিনিয়ে নেওয়া হতো!! এমনকি সেই চাষির ঘরে স্ত্রীকন্যাকেও নির্যাতন করা হতো।। এবং এভাবেই চলতো নীলকর সাহেবদের অত্যাচার।।

15-বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে লেখ।।

- উত্তর অষ্টাদশ শতকে আরবে আব্দুল ওয়াহাব নামে   এক ব্যক্তি ওয়াহাবী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন
-  ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলন, শাহ ওয়ালিউল্লাহ এবং তার পুএ আজিজ শুরু করলেও,ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সৈয়দ আহমেদ।। এরপর মক্কায় হজ করতে গিয়ে বাংলার তিতুমীর ( মীর নিশার আলী) -  সৈয়দ আহমেদের সংস্পর্শে আসেন।।  এবং তিতুমীর ওয়াহাবী আন্দোলনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন।
-  এবং এরপর তিতুমীরের বাংলায় ফিরে এসে,তার অনুগামীদের নিয়ে ওয়াহাবী আন্দোলন শুরু করেন।।  যা বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত।।
-  কিন্তু এখানে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই যে তিতুমীরের আন্দোলন ওয়াহাবি আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও এর মধ্যে অনেকগুলো দিক এবং চরিত্র লুকিয়ে ছিল।। যা ওয়াহাবী আন্দোলনের অর্থের থেকে অনেকটাই আলাদা ছিল।।

16- বারাসাত বিদ্রোহ কী??

- ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলনের প্রানপুরুষ ছিলেন - " সৈয়দ আহন্মেদ । মক্কায় হজ করতে গিয়ে, বাংলার তিতুমীর সৈয়দ আহন্মেদের সংস্পর্শে আসেন, এবং তিতুমীর সেখানে ওয়াহাবি আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হন।।। এবং এরপর তিতুমীর বাংলায় ফিরে এসে দরিদ্র কৃষক ও নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে -  অত্যাচারী জমিদার ও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন।। এবং এই বিদ্রোহ ই বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত।।।

17 -  রংপুর বিদ্রোহ কি?? 

অথবা, রংপুর বিদ্রোহের কারন কী ছিল?? 

-
- উত্তর - 1873 খ্রিস্টাব্দের 18 জানুয়ারি রংপুরের কাজিরহাট,কাকিনা,ফতেপুর, ডিমলা প্রভৃতি জায়গার কৃষকরা একত্রে মিলিত হয়ে, দেবীসিংহ নামে একজন ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন! যা রংপুর বিদ্রোহ নামে পরিচিত।। রংপুর বিদ্রোহের প্রধান কারণ ছিল দেবীসিংহ নামে  জনৈক ব্যক্তি বিভিন্ন অত্যাচার!!  দেবী সিংহ রংপুরের কাজিরহাট, কাকিনা ;ফতেপুর,ডিমলা, দিনাজপুর, এদ্রাকপুর প্রভৃতি জায়গার জমিদার এবং কৃষকদের উপর এতটাই রাজস্ব এবং ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিত যে কৃষকরা সেগুলো কখনোই শোধ করতে পারত না!! এবং তার ফলে তাদের বিভিন্ন অত্যাচার এবং শোষণ সহ্য করতে হত!! সবশেষে এসব শোষণ এবং অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কৃষক এবং জমিদাররা রংপুর বিদ্রোহের পথে পা বাড়িয়েছিল।।
-

18- পাগলপন্থী বিদ্রোহ কী??

-অথবা,

- পাগলপন্থী বিদ্রোহ বলতে কী বোঝায়??

উত্তর -  উনিশ শতকে ফকির করিমশাহ নামে একজন ব্যক্তি ময়মনসিংহ জেলার সুসঙ্গ, শেরপুর  অঞ্চলে বসবাসকারী গারো উপজাতির মধ্যে এক নতুন ধর্মমত প্রচার করেন।। আর তখন থেকে গারো উপজাতি পাগলপন্থী নামে পরিচিত হয়।।  এরপর 1813 খ্রিস্টাব্দে ফকির করিমশাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র টিপুশাহ্বর নেতৃত্বে পাগলপন্থী গারো জনগণ অত্যাচারী জমিদার, মহাজন ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনে শামিল হয়।। এবং পাগলপন্থীদের আন্দোলনই পাগলপন্থী বিদ্রোহ নামে পরিচিত।।

19-  1763 -খ্রিস্টাব্দে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন??

-
- উত্তর _ সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পেছনে  নির্দিষ্ট কয়েকটি কারণ ছিল।।  তার মধ্যে প্রধান কারণগুলি ছিল -
- প্রথমত- এই বিদ্রোহের নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য ছিল না।। বিদ্রোহের বিদ্রোহীরা শুধুমাত্র সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিদ্রোহ চালিয়ে গেছেন।। কিন্তু এদের কোন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কখনোই ঠিক না থাকায় বিদ্রোহীরা তাদের বিদ্রোহটাকে নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।।
সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার দ্বিতীয় কারণ ছিল এই বিদ্রোহকে নেতৃত্বে দেওয়ার মতো যোগ্য নেতার অভাব ।। এই বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানী, মজনু শাহ, চিরাগ আলি প্রমুখ।। কিন্তু এরা চলে যাওয়ার পরেই এই বিদ্রোহে যোগ্য নেতার অভাব দেখা দিয়েছিল। যার জন্য বিদ্রোহকে চালিয়ে যাওয়া খুব মুশকিল হয়ে পড়েছিল।।
সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হয় তৃতীয় এবং মূল কারণ ছিল এই বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের কাছে অতটাও আধুনিক অস্ত্র ছিলনা!! য ব্রিটিশ সরকারের সৈন্যদের কাছে ছিল।।  বিদ্রোহীদের কাছে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র না থাকায় বিদ্রোহীরা খুব সহজেই এই বিদ্রোহের হেরে গিয়েছিল।।

20 - নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ভূমিকা কিরূপ ছিল??

-উ-  হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় যেমন ব্রিটিশ সরকারের বাকি অন্যান্য খারাপ দিক গুলি তার পত্রিকায় আলোচনা করতেন, ঠিক তেমনিভাবে তিনি নীলকর সাহেবদের অত্যাচার! ও অন্যান্য খারাপ কাজ কর্মের ব্যপারগুলোও তার প্রতিকার পত্রিকায় নিয়মিতভাবে  প্রকাশ করতেন।। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তার হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার মাধ্যমে নীলকর সাহেবদের করা অত্যাচারের ফলে নীলচাষীদের দুরাবস্থা তার পত্রিকার মাধ্যমে জনসমক্ষে তুলে ধরেছিলেন।। এছাড়াও হরিশচন্দর মুখোপাধ্যায় নীলচাষিরা, নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিলেন!! সেই মামলা গুলো চালানোর জন্য হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সেই নীল চাষীদের সব সময় আর্থিক ভাবে সাহায্য করতেন।।।

21- তিন কাঠিয়া প্রথা কী??

-
- উ- তিনকাঠিয়া প্রথা হল এমন একটি প্রথা, যেটা বিহারে প্রচলিত ছিল।। বিহারের চম্পারণে নীলকর সাহেবরা, নীল চাষিদের জমিতে প্রতি এক বিঘার তিন কাঠা জমিতে নীল চাষ করতে বাধ্য করতো।  এই ব্যবস্থাই তিন কাঠিয়া প্রথা নামে পরিচিত।।।

22- এলাকা চাষ, ও - বে -এলাকা চাষ কি??

-
-  উত্তর - এলাকা চাষ ও বেলাকা চাষ শব্দদুটি নীল চাষের সঙ্গে যুক্ত।। নীলকর সাহেবরা প্রধানত দুই ভাবে নীল চাষ করতো।।
-  প্রথম ভাবে কোন নীলকর সাহেব কোন জমিদারের কাছ থেকে জমি নিয়ে সেই জমিদারের জমিতে নীল চাষ করতো।। এবং জমিদারের কাছ থেকে জমি নিয়ে নীল চাষ করার এই পদ্ধতিকে এলাকা চাষ বা নিজ- আবাদি বলা হত।। এক্ষেত্রে অনেক সময় সেই নীলকর সাহেবের খুব বেশি লাভ বা মুনাফা হতো না।।
-  এজন্য নীলকর সাহেবরা নীল চাষের অন্য একটি পদ্ধতি বের করেছিল। এবং সেই পদ্ধতি হলো বে-এলাকা চাষ।।
-   এখন বেলাকা চাষ বলতে বোঝায় যখন কোনো নীলকর সাহেব কোনো  চাষীকে কিছুটা অগ্রিম অর্থ দিয়ে বা  দাদন দিয়ে তার নিজস্ব জমিতে নীল চাষ করাতো তখন সেই নীল চাষ পদ্ধতিকে বে-এলাকা চাষ বা রায়তি বলা হত।।।

23- দাদন প্রথা কী?? 

-
- উ- দাদন প্রথা কথাটি নীল চাষের সঙ্গে যুক্ত।। দাদন কথার অর্থ হল অগ্রিম অর্থ।। আসলে যখন কোনো নীলকর সাহেব এলাকা চাষ বা, নিজ আবাদি নীল চাষ পদ্ধতিতে নীল চাষ করে অতটা মুনাফা করতে পারত না!! তখন সেই নীলকর সাহেব  দাদন প্রথার সাহায্য নিতো।। দাদন প্রথার মাধ্যমে সে নীলকর সাহেব একজন কৃষককে খুবই কম টাকা অগ্রিম অর্থ দিয়ে অর্থ দিয়ে তার জমিতে নীলচাষে বাধ্য করতো।।  যদি কোনো চাষি একবার দাদন প্রথার কবলে পরে যেতো..তাহলে সেই চাষির অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যেত.. কারন 1830 খ্রিষ্টাব্দের পঞ্চম আইনে বলা হয়েছিল যে কোনো কৃষক যদি নীলকর সাহেবের কাছ থেকে দাদন নিয়ে নীলচাষ করতে না চায়!! তাহলে সেই নীলকর সেই চাষিকে জেলে পাঠাতে পারে।।  এবং এই আইনের পরে দাদন প্রথা চাষিদের জন্য  আরও খারাপ হয়ে দেখা দিয়েছিল।।
-

24-  নীলদর্পণ নাটকটি বিখ্যাত কেন??

- অথবা

- -নীলদর্পণ নাটকটি থেকে কী জানা যায়??

-
- উত্তর - নীলদর্পণ নাটকটি লিখেছিলেন বিখ্যাত নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র।। এবং এই নাটকটি 1860 খ্রিস্টাব্দে ঢাকা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।। -  নীলদর্পণ নাটকটি হলো এমন একটি নাটক যেটা নীল চাষ এবং নীল চাষীদের উপর, নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কাহিনী নিয়ে লেখা।। এই নাটক থেকে জানা যায় যে নীলকর সাহেবরা কিভাবে,নীলচাষিদের ওপর অত্যাচার করতো।। এবং নীল চাষ করার ফলে চাষিদের আর্থিক অবস্থা , মানসিক অথস্থা এবং তাদের পারিবারিক অবস্থা কতটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।। নীলদর্পণ নাটকে সেই সমস্ত তথ্য দেওয়া আছে যে কিভাবে একজন নীলকর সাহেব, একজন নীলচাষীকে নীল চাষ করতে বাধ্য করতো।। এবং সে যদি চাষ না করতো,  তাহলে তাকে কতটা খারাপ ভাবে নির্যাতন করা হতো।।


25- নীল কমিশন কী??  বা, ইন্ডিগো কমিশন কী??

উ-  নীল বিদ্রোহের পর, নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে নীলচাষিদের করা বিভিন্ন অভিযোগগুলো সত্য নাকি মিথ্যা এগুলো খতিয়ে দেখার জন্য!!! এবং নীলচাষিদের নৈতিক দাবিগুলো পূরণের জন্য  1860 খ্রিস্টাব্দের 31 মার্চ একটি কমিশন গঠন করা হয়।।  এবং সেই কমিটিই - " নীল কমিশন " নামে পরিচিত।। নীল কমিশনের প্রধান সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সেটন কার, আর.টেম্পেল, রেভারেন্ড সেল,  ফার্গুসন এবং চন্দ্রমোহন চট্টোপাধ্যায়।।




⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫


-প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষন " 



অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন গুলো দেখার জন্য নিচের লেখার ওপর ক্লিক করুন।।


👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇




প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ - চ্যাপ্টারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং তার উওর।।  মাধ্যমিক 2022 ইতিহাস সাজেশন।।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top