- বিধবা বিবাহ আন্দোলনের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভুমিকা -
বিধবা বিবাহ আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভুমিকা।। |
⚫ বিধবা বিবাহ আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা⚫
🔴🔴🔴🔴🔴🔴ভুমিকা ::-
-- রাজা রামমোহন রায়ের উদ্যোগ ও আন্দোলনের ফলে সতীদান প্রথা আইনত নিষিদ্ধ হলেও স্বামীর মৃত্যর পর এই বিধবা মহিলাদের ভবিষ্যতে কি হবে বা সমাজে তাদের কিরুপ পরিনতি হবে সেসব বিষয়ে কাউকে কোনো রকম উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। 1829 খ্রিষ্টাব্দের রাজা রামমোহন রায়ের হাত ধরে সতীদাহ প্রথার মতো এক ভয়ংকর প্রথার অবসান ঘটে। কিন্তু এই সতীদাহ প্রথার মাধ্যমে সেই সময় কার নারীরা শুধুমাত্র তাদের বেচে থাকার অধিকার টুকুই পেয়েছিল,যা আগে স্বামীর মৃত্যুর পর হয়তো হাতে গোনা কয়েকজন বিধবাদের ভাগ্যই বেচে থাকাটা লেখা থাকতো। আমরা বলতে পারি যে রাজা রামমোহন রায় তার করা সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে নারীদের পুনরায় বেচে থাকার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু নারীদের বেচে থাকার অধিকারের পাশাপাশি এরপর তাদের জীবনে কি হবে তা নিয়ে ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের এই বিধবা বিবাহ আন্দোলন ছিল নারীদের সমাজের দ্বিতীয় বার নতুন করে স্বপ্ন দেখার অধিকার। যার ফলে ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজে এই দিকে অগ্রসর হন। এবং শুরু করেন বিধবা বিবাহ আন্দোলন।
🔴🔴🔴🔴🔴🔴🔴🔴🔴🔴🔴🔴🔴🔴🔴
- ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলন :-
- বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরুর পর তিনি বিধবা বিবাহের পক্ষে জনমত প্রসারে 1854 খ্রিষ্টাব্দে "" তত্ববোধিনী" প্রতিকায় প্রথম বিধবা বিবাহ বিবাহের পক্ষে প্রবন্ধ লেখেন। এর পরের বছর, অর্থাৎ 1855 খ্রিষ্টাব্দে জানুয়ারি মাস নাগাদ,
- বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে
- " এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব " নামক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। ''' পরাশর সংহিতা ''' থেকে উদ্ধৃতি তুলে বিদ্যাসাগর দেখান যে বিধবা বিবাহ সম্পুর্ন ভাবে শাস্ত্রসম্মত।
- বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ প্রচলন নিয়ে আন্দোলন শুরু করলে তার বিরোধীতায়, রক্ষনশীল সমাজের অনেক নেমে পরেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শোভাবাজার রাজবাড়ীর রাজা রাধাকান্ত দেব ও তার ধর্মসভা। বিদ্যাসাগরের বক্তব্যেকে তিনি চ্যালেঞ্জ করেন। এবং বিধবা বিবাহ যাতে প্রচলিত না হয় তার জন্য তিনি কমপক্ষে 30 টি আলাদা আলাদা পুস্তিকা প্রকাশ করেন।
- বিধবা বিবাহ নিয়ে রাজা রাধাকান্ত দেব এবং ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের এই বিরোধোর সময় কবি ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছড়া লেখেন যে
- --
"বাধিয়াছে দলাদলি লাগিয়াছে গোল-
বিধবার বিয়ে হবে বাজিয়ারে ঢোল""
- রাজা রাধাকান্ত দেব যখন বিধবা বিবাহ প্রচলনের বিপক্ষে পুস্তিকা প্রকাশ করলেন তখন বিদ্যাসাগর এর জবাব দিতে 1855 খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে বিধবা বিবাহ প্রচলন নিয়ে আবারও " এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব " নামের দ্বিতীয় পুস্তিকা প্রকাশ করেন।।
- এবং এবার বিধবা বিবাহকে আইনসিদ্ধ করার জন্য 1855 খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে 947 জনের স্বাক্ষরযুক্ত একটি আবেদন পএ ভারতীয় আইন সভায় পেশ করেন।
- বিদ্যাসাগরের এই মহান কার্য করার দিকে এগিয়ে আসার জন্য শান্তি পুরের তাঁতিরা তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কাপড়ে লিখতেন-
"" সুখে থাকুক বিদ্যাসাগর চিরজীবী হয়ে,
সদরে করেছে রিপোর্ট বিধবাদের হবে বিয়ে"""
- বিদ্যাসাগরের এই কাযের পর রাজা রাধাকান্ত দেবও চুপচাপ বসে থাকেননি। তিনি বিদ্যাসাগরের বিরোধীতা করে বিধবা বিবাহ প্রচলনের বিরুদ্ধে প্রায় 36763 জনের স্বাক্ষরযুক্ত একটি দরখাস্ত সরকারের কাছে পাঠান।
রাধাকান্ত দেবও রক্ষনশীলদের শতবিরোধীতা সত্বেও বড়লাট ক্যানিং 1856 খ্রিষ্টাব্দের 26 শে জুলাই 15 নং রেগুলেশন জারি করে বিধবা বিবাহকে আইনসিদ্ধ করেন।
নিচে দেওয়া লিঙ্ক গুলোর ওপর ক্লিক করে বিভিন্ন অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন গুলো দেখে নিতে পারেন। 👇
1- ইতিহাসের ধারণা অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর
2- ইতিহাসের ধারণা অধ্যায়ের সমস্ত 2 নম্বরের প্রশ্ন ও উওর
3- সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
4- প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর ও সাজেশিন
6- সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা প্রশ্ন উওর ও সাজেশন
9- বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের সমস্ত 2 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উওর
- বিধবা বিবাহ আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সাফল্য -
- বিদ্যাসাগরের দীর্ঘদিন ধরে করা এই আন্দোলনের পর সরকার বিধবা বিবাহকে আইনসিদ্ধ বলে ঘোষণা করে। কিন্তু বিদ্যাসাগর শুরু আইনি ভাবে নয়! বিধবা বিবাহকে বাস্তবে কার্যকরী করার চেষ্টা করেন। এবং বিদ্যাসাগরের এই পরিকল্পনায় সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারন্তের সঙ্গে বিধবা পাএী কালিমতি দেবীর প্রথম বিধবা বিবাহ সম্পন্ন হয়।
- এরপরও বিদ্যাসাগর নিজ উদ্যোগ বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন জায়গায় 60 টির বেশি বিধবা বিবাহ দেন। এমনি তিনি নিজের পুএ নারায়ন চন্দ্রকেও ভবসুন্দরী নামে এক বিধবার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। বিধবাদের বিবাহের জন্য বিদ্যাসাগর 1872 খ্রিষ্টাব্দে " হিন্দু ফ্যামিলি অ্যানুইটি ফান্ড' তৈরী করেন।
- বিধবাদের নিয়ে এই চিন্তা এবং তাদের জন্য বিধবা বিবাহ আন্দোলনের পর বিধবা বিবাহকে আইনসিদ্ধ করার পর এই আন্দোলন এবং বিদ্যাসাগরের কাজের দ্বারা দক্ষিন ভারতের সমাজসংস্কারক বীরশলিঙ্গম পানতুলু বিধবা বিবাহকে জনপ্রিয় করে তোলার উদ্দেশ্য তিনি " বিধবা বিবাহ সমিতি " গড়ে তোলেন। এবং এই কাজের জন্য বীরেশলিঙ্গম পানতুলুকে দক্ষিন ভারতের বিদ্যাসাগর বলা হয়।।
- বিধবা বিবাহের ব্যাপক সাফল্য আসত এর সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ও প্রসারের মাধ্যমে, কিন্তু রক্ষনশীল সমাজের ব্যক্তিদের বিরোধীতায় এই বিধবা বিবাহের তেমন কোনো প্রসার ঘটেনি।
🔴🔴🔴🔴🔴-উপসংহার::-
- 1829 খ্রিষ্টাব্দের রাজা রামমোহন রায়ের হাত ধরে সতীদাহ প্রথার মত এক ভয়ংকর প্রথার অবসান ঘটে। কিন্তু এই সতীদাহ প্রথার মাধ্যমে সেই সময় কার নারীরা শুধুমাত্র তাদের বেচে থাকার অধিকার টুকুই পেয়েছিল,যা আগে স্বামীর মৃত্যুর পর হয়তো হাতে গোনা কয়েকজন বিধবাদের ভাগ্যই বেচে থাকাটা লেখা থাকতো। আমরা বলতে পারি যে রাজা রামমোহন রায় তার করা সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে নারীদের পুনরায় বেচে থাকার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু নারীদের বেচে থাকার অধিকারের পাশাপাশি এরপর তাদের জীবনে কি হবে তা নিয়ে ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের এই বিধবা বিবাহ আন্দোলন ছিল নারীদের সমাজের দ্বিতীয় বার নতুন করে স্বপ্ন দেখার অধিকার।
- সেই সময় বিদ্যাসাগরের নিজস্ব উদ্যোগে কয়েকটি সফল বিধবা বিবাহ হলেও রক্ষনশীল সমাজের মানুষের তা ঠিক পোষায়নি। তাই তারা এই বিধবা বিবাহ প্রচলন টা মেনে নিতে পারেনি।
- যদি আমরা সেই সময়কার কথা বাদ দিয়ে বতর্মান যুগ বা সমাজের কথা বলি, তাহলে বলা যায় যে এখন হয়তো কোথাও কোথাও বিধবা বিবাহ হয়। কিন্তু তা খুবই কম। সরকার হয়তো অনেক বছর আগেই বিধবাদের বিয়ের অধিকার দিয়েগেছে, কিন্তু সমাজে বিধবাদের বিয়েটা এখনো পযর্ন্ত মেনে নিতে পারেনি। তাই এখনো সমাজে বিধবাদের নানা খারাপ কথা শুনতে হয়। আর এখনো কোনো স্বাভাবিক পরিবার হয়তো কোনো বিধবা মেয়েকে তাদের ঘরের বউ বলে খুব সহজে মেনে নেবেন না! যতটা একজন স্বাভাবিক মেয়ের ক্ষেত্রে হয়।
⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫