নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল || নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো || 1860 খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহ কারণ ও গুরুত্ব।।
![]() |
নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল |
নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল || নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো || 1860 খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহ কারণ ও গুরুত্ব।।
ভুমিকা : নীলকর সাহেবরা নিজস্ব মুনাফা লাভের জন্য ভারতে এসে ভারতীয় চাষীদের জোর করে নীল চাষ করাতো।। এবং নীলকর সাহেবদের মুনাফা লাভ করাতে গিয়ে, ভারতীয় গরিব চাষিদের নানা ধরনের আর্থিক সমস্যা, খাদ্যাভাব, এবং অন্যান্য দুরাবস্থার সম্মুখীন হতে হতো।। এবং এরকম আরও নানা কারণে 1859 খ্রিষ্টাব্দে চাষিরা নীল বিদ্রোহের পথে পা বাড়িয়েছিল।।
নীল বিদ্রোহের প্রধান কারণ ||
নীলচাষিদের জোড় করে নীলচাষ করানো :
যেহেতু সেসময় চাষিরা নিরক্ষর ছিল! সেজন্য শিক্ষিত নীলকর সাহেবরা খুব চালাকির সঙ্গে তাদের খুব কম পরিমাণ দাদন বা অগ্রিম অর্থ বিভিন্ন চুক্তি পত্রে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিত।। এবং এরকম বিভিন্ন চুক্তি পত্রে জড়িয়ে পরায়, চাষিরা নীল চাষ করতে বাধ্য হত।।
চাষীদের আর্থিক দুরবস্থা :
নীলকর সাহেবরা খুব চালাকির সঙ্গে নীলচাষীদের খুব কম টাকা অগ্রিম অর্থ দিয়ে নীলচাষ করতে বাধ্য করতো।।। যার জন্য নীলচাষীদের পরে নিজের খরচায় নীল চাষ করতে হত, এবং খুব অল্প দামে সেই উৎপাদিত নীল - নীলকর সাহেবদের বিক্রি করতে হতো।। এরকম নিজের খরচায় চাষ করা, এবং খুব লোকসানে সেই ফসল বিক্রি করায় চাষিদের ঘরে খুব আর্থিক দুরাবস্থার সৃষ্টি হতো।
নীলচাষীদের ঘরে খাদ্যশস্যের অভাব :
নীলকর সাহেবরা চাষীদের জোর করে তাদের নিজস্ব জমিতে নীল চাষ করতে বাধ্য করায়, চাষীরা তাদের জমিতে অন্য কোনো ফসলের চাষ করতে পারত না।। যার ফলে চাহিদা ঘরে খাদ্যশস্যর অভাব দেখা যেত।।
দাদন প্রথা :
দাদন প্রথা হলো এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কোন নীলকর সাহেব কোনো চাষিকে তার হয়ে নীল চাষ করার জন্য কিছু পরিমান টাকা অগ্রিম টাকা দিত।। এবং সেই নীলকর সাহেবের দেওয়া টাকা দিয়েই সেই চাষিকে সম্পূর্ণ নীল চাষ করতে হতো।। কিন্তু নীলকর সাহেবরা যখন কোনো চাষিকে দাদন দিত, তখন তার পরিমাণ এতটাই কম হতো যে সেই দাদন নিয়ে চাষ করার পর, সেই চাষির খরচের অর্ধেক টাকাও হতো না।। যার জন্য চাষীকে বাধ্য হয়েই তার নিজের টাকা চাষে দিতে হতো।। আর এভাবেই চাষীকে আর্থিক দিক দিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতো।।
সরকারের পঞ্চম আইন :
ভারতের ভাইসরয় লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর শাসনকালে 1830 খ্রিষ্টাব্দের পঞ্চম আইনে বলা হয় যে যদি কোনো নীলচাষী কোনো নীলকর সাহেবের কাছ থেকে দাদন নিয়ে চাষ করতে রাজি না হয় তাহলে সেই নীলকর সেই চাষিকে জেলে পাঠাতে পারবে।।। এবং এই আইন পাস হওয়ার পর নীলকর সাহেবের অত্যাচার নীলচাষিদের ওপর আরও বেড়ে গিয়েছিল।।।
দস্তুরি প্রথা :
নীলকর সাহেবদের নীলচাষিদের ওপর অত্যাচার করার আরও একটি ভালো উপায় ছিল দস্তুরি প্রথা।। যখন নিল চাষীরা তাদের জমিতে উৎপাদিত নীল নিয়ে নীলকর সাহেবদের কাছে বিক্রি করতে যেত, তখন নীলকর সাহেবরা তাদের দেওয়া দাদনের টাকা এবং সেই দাদনের যে সুদের পরিমাণ হতো, সেই টাকাও কেটে রেখে দিত।। এরকমও হতো যে, যদি বাজারে নীলের দাম থাকতো 10 টাকা কেজি, তাহলে নীলকর সাহেবরা চাষিকে কেজিপ্রতি মাত্র 2 টাকা দিত।। যার জন্য চাষে কি এভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হতে হতো।।
নীলকর সাহেবদের অত্যাচার :
নীলকর সাহেবরা দাদন প্রথা এবং অন্যান্য চুক্তি পত্রের মাধ্যমে নীলচাষীদের তো ঠকাতোই.. তার সাথে সাথে নীলকর সাহেবরা নীল চাষীদের উপর এমনিতেও অনেক অত্যাচার করতো।। অনেক চাষিকে তার ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে চাবুক মারা হতো!, চাষীদের ঘরের গরু ছাগল ছড়িয়ে নেওয়া হতো!, এছাড়াও আরও নানা ধরনের অত্যাচারের জন্যই নীলচাষীরা ধীরে ধীরে বিদ্রোহের পথে পা বাড়াতে শুরু করেছিল।।
পক্ষপাতদুষ্ট বিচার ব্যবস্থা ::-
-
- নীলকর সাহেবদের করা এইসব নানান অত্যাচারের কথা যখন চাষিরা থানায় গিয়ে বলতেন তখন পুলিশ চাষিদের কোনো কথার গুরুত্ব দিত না। তাদের অভিযোগ অভিযোগ হয়েই থেকে যেত। কখনো কোনো অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনো রকম পদক্ষেপ নেওয়া হতোনা। কারণ নীলকর সাহেবরা ছিলেন স্বজাতি শ্বেতাঙ্গ মানুষ। তাই এদেশের মানুষের অভিযোগ পুলিশের কাছে বা সরকারের কাছে কিছু না হওয়ার সমান।
উপসংহার : উপরোক্ত কারণগুলোর জন্যই নীল চাষিরা এরকম অকথ্য অত্যাচার এবং এই নায়কীয় জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই তারা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ভাবে 1859 খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতার নেতৃত্বে, বিদ্রোহের পথে পা বাড়িয়েছিল।। এবং তাদের দৃঢ় সংকল্পের জন্যই তারা এক সফল বিদ্রোহের রুপ দেখতে পেয়েছিল!! এবং তার সাথে সাথে এই নায়কীয় জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছিল।।
নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল || নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো || 1860 খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহ কারণ ও গুরুত্ব
1860 খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহের ফলাফল আলোচনা করো
- নীল বিদ্রোহের ফলাফল বা গুরুত্ব।
-
- 1, নীল কমিশন গঠন ::-
-
- নীল বিদ্রোহের ব্যাপকতায় সরকার নীলচাষিদের অভিযোগের সত্যতা ও নীল বিদ্রোহের কারন অনুসন্ধানের জন্য 1860 খ্রিষ্টাব্দের 31 মার্চ পাচজন সদস্যকে নিয়ে নীল কমিশন গঠন করে। এই নীল কমিশন গঠনের কিছুদিন পর নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে , নীল চাষিদের করা অভিযোগ গুলি সত্য বলে মেনে নেয়।
-2, নীলচাষ বন্ধ::-
-
- 1860 খ্রিষ্টাব্দের নীল কমিশন চাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কথা জানার পর এই ঘোষণা করে যে নীল চাষ এখন থেকে সম্পুর্ন চাষিদের ইচ্ছা অনুসারে হবে। যদি চাষি নীলচাষে ইচ্ছুক হয় তবেই সে নীলচাষ করবে। এবং এই ঘোষণার পর নীল চাষ এদেশে ধীরে ধীরে সম্পুর্ন ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
-3, সফল কৃষক আন্দোলন ::-
-
- ভারতের অন্যান্য কৃষক আন্দোলন গুলির থেকে নীল বিদ্রোহ ছিল আলাদা। এই বিদ্রোহে বিভিন্ন জায়গার, যেমন - খুলনা, নদীয়া, ফরিদপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, রাজশাহী, যশোহর প্রভৃতি স্থানের হিন্দু, মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের প্রায় 60 লক্ষ্য কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করেছিল। যার ফলে এই আন্দোলন একটি সফল কৃষক আন্দোলনে পরিনত হয়েছিল।
-4, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ::-
-
- নীল বিদ্রোহে নীল চাষিদের পাশে বেশ কিছু জমিদার, আইনজীবী এবং তার সাথে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ পএ কৃষকদের পাশে দাড়িয়েছিল।
-6, নীলদর্পন নাটক ::-
- বিখ্যাত নাট্যকার দীনবন্ধু মিএ নীল বিদ্রোহের ওপর, বিশেষ করে নীলচাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের করা অত্যাচারের কথা নিয়ে 1860 খ্রিষ্টাব্দে তার নীলদর্পন নাটকটি রচনা করেন।
- এই নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করেন মাইকেল মধুসুদন দও। কিন্তু শাস্তি এড়াতে তা জেমস রেভালেন্ড লং সাহেবের নামে প্রকাশ করেন।
- এবং এই নাটকটি তখন সমাজে আলোরনের সৃষ্টি করেছিল।
নিচে দেওয়া লিঙ্ক গুলোর ওপর ক্লিক করে বিভিন্ন অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন গুলো দেখে নিতে পারেন। 👇
1- ইতিহাসের ধারণা অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর
2- ইতিহাসের ধারণা অধ্যায়ের সমস্ত 2 নম্বরের প্রশ্ন ও উওর
3- সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
4- প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর ও সাজেশিন
6- সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা প্রশ্ন উওর ও সাজেশন
9- বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের সমস্ত 2 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উওর
11-বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ পরিচয়
12- উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভুমিকা।
- নীল বিদ্রোহ সম্পর্কে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা জেনে রাখা দরকার।।
Ⓜ - সর্বপ্রথম কোথায় নীল বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল??
✅ উওর - কৃষ্ণনগরের চৌগাছা গ্রামে।
Ⓜ নীল বিদ্রোহের প্রথম শহীদ কে?
✅ বিশে ডাকাত বা বিশ্বনাথ সর্দার হলেন নীল বিদ্রোহের প্রথম শহীদ।
Ⓜ নীলদর্পণ নাটকটি কার লেখা
✅ নীলদর্পণ নাটকটির দীনবন্ধু মিত্রের লেখা।
Ⓜ নীলদর্পণ নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন কে?
অথবা,
নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদের নাম কী??
✅ মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
Ⓜ নীলদর্পণ নাটকটি কে ইংরেজিতে প্রকাশ করেছিলেন?
✅ জেমস লং সাহেব।
Ⓜ কাকে বাংলার নানাসাহেব বলা হয়?
✅ রামরতন মল্লিক - কে
Ⓜ নীল বিদ্রোহ কখন সংঘটিত হয় ?
✅ 1859 খ্রিষ্টাব্দে নীল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
Ⓜ কাদের বাংলার ওয়াট টাইটেলার বলা হয়?
✅ বিষ্ণুচরন বিশ্বাস দিগম্বর বিশ্বাস - কে বাংলার ওয়াট টাইলার বলা হত.
🔴🔵🔴🔵🔴🔵🔴🔵🔴🔵🔴🔵🔴🔵🔴
Other chapter question and answer din
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন